বছরের অন্তত ৫ লাখের বেশি মানুষ টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়। তারমধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই শিশু। টাইফয়েড থেকে শিশুদের রক্ষায় সরকার ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী সবাইকে বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা নিশ্চিত করতে চায়।
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে এক ডোজের টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হবে। এক ডোজের এ টিকায় টাইফয়েড প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশের বেশি সুরক্ষা দিতে সক্ষম। টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আজিমপুর ঢাকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় আয়োজিত গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, টাইফয়েডের চিকিৎসায় যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে তার একটা অংশ কার্যকরভাবে কাজ করছে না। ফলে ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েডের প্রকোপ বাড়ছে। টাইফয়েড আক্রান্ত হলে আর্থিক ক্ষতি, দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা এবং মৃত্যু ঘটে।
তিনি আরও বলেন, দ্য গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিসের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার রোগী আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে মৃত্যু হয় ৮ হাজার। যার ৬৮ শতাংশই শিশু। শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড আক্রান্তের হার বেশি। তাই সরকার বিনামূল্যে সারা দেশের প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কমিউনিটির ৯ মাস থেকে ১০ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে এ টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে চায়।
সিভিল সার্জন বলেন, টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি জোরদারে সরকার বদ্ধপরিকর। পর্যাপ্ত টিকার মজুত রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন যত বেশি হবে টিকা ততবেশি দেওয়া হবে। টাইফয়েড ভ্যাকসিন নিরাপদ, এতে দৃশ্যমান কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। টিকা নেওয়ার পর মাংসপেশি সামান্য লালচে হতে পারে। সামান্য ব্যথা হতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক।
ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, টিকাদানের পর যাতে প্যানিক না ছড়ায় এজন্য আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে তারপর উঠে যেতে বলা হয়। এরপরেও কারণ যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সেটা পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
৯ মাসের কম বয়সী শিশুকে কেন দেওয়া হবে না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৯ মাসের কম বয়সী শিশুর শরীরে কার্যকরী নয়।
ঢাকা বিভাগীয় তথ্য পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, ঢাকা জেলায় আমাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ১০ লাখ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা প্রয়োগ করা হবে। এখন পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিশুর রেজিস্ট্রেশন করছে। এখনও কাঙ্ক্ষিত নয়। টিকাদান শুরু হলে হয়তো ৫০ শতাংশের মত হবে। তাও কাঙ্ক্ষিত নয়।
তথ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফায়জুল হক ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। পরবর্তীতে টিকা কার্ড ডাউনলোড করে টিকা কেন্দ্রে গিয়ে টাইফয়েডের টিকা নিতে পারবে। স্বাস্থ্য বিভাগের এককভাবে এ টিকাদান সহজ নয়। এজন্য সবার সহযোগিতা লাগবে।
তিনি আরও বলেন, স্কাউটস ও গার্লস গাইডদের নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ চলমান রয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদেরও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে হবে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়াতে টাইফয়েডের টিকা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এসব গুজবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নিরাপদ ও টাইফয়েডের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা নিতে শিশুদের অভিভাবকদের সচেতন ও উৎসাহিত করতে হবে।
ফায়জুল হক বলেন, আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ শতভাগ শিশুকে টিকার রেজিস্ট্রেশন করানো। মাদ্রাসার মধ্যে কওমীতে রেজিস্ট্রেশন করানো একটু কঠিন। তাদের আলেম সমাজ ও মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে বুঝাতে হবে। দুর্গম এলাকায় যাওয়া, টিকার আওতায় শিশুদের নিয়ে আসা কঠিন কাজ। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মো. শাহ আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- কেরানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন মোল্লা ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির তথ্য ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন।
মন্তব্য করুন