কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম
আপডেট : ২১ জুন ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাসেল ভাইপার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অজানা তথ্য দিলেন চিকিৎসক

ডা. ফরহাদ উদ্দীন হাসান চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
ডা. ফরহাদ উদ্দীন হাসান চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায়, বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে, গত কিছুদিন যাবত বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাসেল ভাইপার সাপ বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত।

প্রচলিত আছে এ সাপ কামড়ালে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আসলেই কি এতটা ভয়‌ঙ্কর রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ?

বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন প্রায় ৪০০০ এর বেশি সর্প দংশনের রোগীর চিকিৎসা দেওয়া ডা. ফরহাদ উদ্দীন হাসান চৌধুরী।

তিনি তার পোস্টে লেখেন-

বাংলাদেশের প্রধান টি বিষাক্ত সাপ হলো গোখরা (কোবরা), কেউটে (ক্রেইট) এবং রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া। রাসেলস ভাইপার অপেক্ষাকৃত বেশি বিষধর। অতিসম্প্রতি এই সাপটির প্রকোপ বেড়ে গেছে। তবে এই সাপটি নিজ থেকে তাড়া করে কাউকে দংশন করে না। মূলত অসাবধানতাবশত কেউ এই সাপের গায়ে পারা দিলে এই সাপটি ছোবল দেয়।

তিনি বলেন, এই সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে মূলত শরীরের রক্ত পাতলা হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে, কিডনি বিকল হতে পারে, স্নায়ু অবশ হয়ে ফুসফুসের কার্যকারিতা হারিয়ে যেতে পারে এমনকি হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। বাংলাদেশে সর্প দংশন প্রতিরোধী যে অ্যান্টিভেনম রয়েছে সেগুলো কোবরা এবং ক্রেইটের বিপরীতে ভালোভাবে কাজ করলেও রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে ভালোমতো কাজ করে না। এই এন্টিভেনমটিতে ভারতীয় রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে উপাদান রয়েছে। ভারতীয় রাসেলস ভাইপারের বিষ এবং বাংলাদেশের রাসেলস ভাইপারের বিষের ভিতরে উপাদানগত বৈসাদৃশ্য বেশি হওয়ায় এটি পুরাপুরি কাজ করে না।

ডা. ফরহাদ বলেন, আমাদের দেশের এই সাপটির বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী অ্যান্টিভেনম তৈরি করার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষের নেতৃত্বে একদল গবেষক বিগত প্রায় ৪-৫ বছর নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আশা করি আমরা অদূর ভবিষ্যতে রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে কার্যকরী দেশীয় একটি অ্যান্টিভেনম পেতে পারি। বিষাক্ত আর অবিষাক্ত মিলিয়ে আমি জীবনে ৩০০০-৪০০০ এর বেশি সর্প দংশনের রোগী নিজেই চিকিৎসা করেছি। কোবরা, ক্রেইট, রাসেলস ভাইপার সব ধরনের সাপের কামড়ের চিকিৎসা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাসেলস ভাইপারের ক্ষেত্রে ৫০% এর বেশি রোগীকে বাঁচাতে পারিনি। তবে আক্রান্ত হওয়ার পরপরই দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে আসলে, অতিদ্রুত অ্যান্টিভেনম শুরু করলে ও সাপোর্টিভ চিকিৎসা যেমন ডায়ালাইসি, ভেন্টিলেশন ইত্যাদি দিলে রোগী বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করি।

আমরা সাধারণত সাপ কামড় দিলে বাঁধ দেই কিন্তু রাসেলস ভাইপারের কামড় নিশ্চিত হলে আক্রান্ত অংশে গিঁট বা বাঁধ দিতে নিষেধ করা হয় কারণ বাঁধের কারণে মাংসপেশির ভিতরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে অঙ্গহানি হতে পারে। সাপ মেরে ফেলে সাপের বংশ শেষ করা যাবে না। ব্রিটিশ আমলে সরকারি উদ্যোগে সাপ মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবং যথারীতি ঘটা করে সাপও মারা হয়েছিল কিন্তু সর্পদংশনের সংখ্যা বা সাপের বংশ কোনোটিই কমেনি।

তিনি বলেন, সাপে কামড়ের চেয়েও বাংলাদেশে আরও বড় স্বাস্থ্য সমস্যা আছে। সেপসিস নামক একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা যায়, ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার কারণে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়, গতবছর ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছে ১৭০০ মানুষ। দেশে সাপের কামড়ে মারা যায় প্রতিবছর ৬০০০ এর অধিক মানুষ। এর বেশিরভাগই প্রান্তিক জনগণ। সচেতনতার অভাবে হাসপাতালে না গিয়ে ওঝার কাছে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষের অপমৃত্যু হয়। সচেতনতা বৃদ্ধি, দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া এবং যথাসময়ে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করাই ভরসা। বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে সাপের কামড় বৃদ্ধি পায় তাই এখন সাবধান থাকাটা বেশি জরুরি।

ছবিটি আসলে একটি অজগরের, মানুষ প্রায়শই ভুল করে অজগরকে রাসেল ভাইপার মনে করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলি হামলায় নিহতের মোট সংখ্যা জানাল গাজা

সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

তোমাকে ফিরে পেয়ে কত খুশি তা বলার কোনো ভাষা নেই : সাবিকুন নাহার

আলট্রা-লার্জ ব্যাটারিসহ বাজারে এলো নতুন মোবাইল ফোন

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলগুলোয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে : সালাহউদ্দিন আহমদ

ট্রাকের ধাক্কায় থেমে গেল শিশু সাদের জীবন

সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ নেতৃত্বের গুণগত পরিবর্তন : গোলাম পরওয়ার 

রাস্তায় ফেলে যাওয়া নবজাতককে রাতভর পাহারা দিল কুকুর

খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা : শামীম

পাসপোর্ট করতে গিয়ে ধরা রোহিঙ্গা যুবক

১০

একদিনে ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৯০

১১

কিডনি উৎসর্গ করেও সন্তানকে ফেরাতে পারলেন না মা

১২

বিসিক বার্ষিক সম্মেলন ও কর্মশালার প্রথম দিন সফলভাবে অনুষ্ঠিত

১৩

সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

১৪

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে চা বিক্রি করছেন মোদি, এআই ভিডিও ভাইরাল

১৫

দল থেকে সুখবর পেলেন বিএনপির ২৪ নেতা

১৬

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ম্যাচ কবে, কখন জেনে নিন

১৭

সুখবর পেলেন ছাত্রদল নেতা জিসান

১৮

আটকে পড়া ২ শিশুকে উদ্ধার করল ফায়ার সার্ভিস

১৯

প্রশাসনের ভয়ে রাতে পুকুর খনন করেও পার পেলেন না ঠিকাদার

২০
X