পিএসসির যেসব কর্মকর্তা প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের বরখাস্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালে আগারগাঁওয়ে পিএসসিতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
পিএসসির যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ এসেছে, তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিবেন- এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এখানে দুয়েকজন বোধহয় এরকমও আছে, যারা আগে এ ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে চাকরি হারিয়েছে। আবার তারা চাকরিতে ফিরে এসেছে। অনেকেই প্রশ্ন করছে তারা আবার ফিরে এলো কী করে বা আমাদেরও দোষী করছেন। তারা মূলত কোর্টে গেছেন এবং কোর্ট থেকে ছাড়া পেয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। আর কেউ কেউ আছেন যাদের বিরুদ্ধে এবারই প্রথম অভিযোগ এসেছে। তবে, যে মুহূর্তে কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হবে, সে মুহূর্তে তাকে সাসপেন্ড করা হবে। এ বিষয়ে আমরা প্রস্তুত আছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সোহরাব হোসাইন বলেন, যেসব পরীক্ষা বলতে এখানে ৫ জুলাইয়ের পরীক্ষাকেই বুঝাবে। কারণ, এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেই সবকিছু হচ্ছে। তো সেই পরীক্ষায় যদি প্রশ্ন ফাঁস হয়, তাহলে অবশ্যই বাতিল হবে। তবে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমি একা কিছু বলতে পারব না। চেয়ারম্যানসহ ২১ জনের কমিশনের মধ্যে বর্তমানে আছেন ১৬ জন। কাজেই যে কোনো সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, পিএসসিকেন্দ্রিক নেতিবাচক ঘটনা অবশ্যই আমাদের জন্য দুঃখজনক ও কষ্টকর। আমাদের প্রশ্ন কারা তৈরি করেন, সেটি গোপন থাকে। তারা প্রশ্ন তৈরির পর সিলগালা করে সেটি পিএসসিতে পাঠান বা সরাসরি দিয়ে যান। প্রশ্নপত্র ট্রাকে সিলগালা অবস্থায় থাকে। ধরুন, ১০ জনের কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়ার কথা। সেটি পেলে মডারেশনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করি। জ্যেষ্ঠদের মডারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পিএসসির একটি কক্ষে তারা মডারেশন করেন। সিলগালা অবস্থায় তারা প্রশ্নপত্র পান।
তিনি বলেন, মডারেশনের পর আবার সিলগালা করে জমা দেন। এরপর সেটি প্রেসে যায়। বিসিএসের ক্ষেত্রে আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশ্নের ২০টি প্যাকেট হয়। তবে প্রশ্ন খোলার কোনো বিধান নেই। এরপর প্রশ্নগুলো বিভাগগুলোতে চলে যায়।
সোহরাব হোসাইন বলেন, ঢাকার প্রশ্নগুলো এখানে একটি ভল্টরুমে রাখা হয়। ২৪ ঘণ্টা তা পুলিশ প্রহরায় থাকে। পরীক্ষার দিন সকাল ৯টা ১৫ থেকে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের উপস্থিতিতে লটারি হয়। কারণ সাড়ে ৯টার দিকে প্রশ্নের সেট জানাতে হয়। লটারিতে যে সেটটা পড়ে, সেটিও টেস্ট করা হয়। টেলিটকের যারা সহযোগিতা করেন, তাদের সঙ্গে এখানকার অফিসাররাও থাকেন। তারা একটি টেস্ট কপি পাঠান। সব ঠিক থাকলে আমরা তা বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেই। তখন ৬টা সেটের মধ্যে একটা সেট নেওয়া হয়। আর নন-ক্যাডারের আলোচ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৪টি সেটের মধ্যে একটি সেট লটারি হয়েছে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে। ৯টা ৩০ মিনিটে সব কেন্দ্রে জানিয়ে দিয়েছি।
এরকম প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রশ্নফাঁসের সুযোগ রয়েছে কি না জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, আমি এটা বলতে চাই না। একশভাগ নিশ্চিতও কেউ করতে পারবে না। কারণ, এটা এককভাবে কেউ মেইনটেইন করে না। অনেক মানুষের সমন্বয়ে এটা করা হয়। তবে সেটা ভীষণ কঠিন। প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে হলে ৬টা সেটই ফাঁস করতে হবে। তার মানে ১২০০ প্রশ্ন। লটারিতে তো একটা সেটের প্রশ্ন আসবে। আগে থেকে তো লটারিতে কী আসবে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না।
মন্তব্য করুন