চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী হত্যা-নির্যাতনের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকরা। শনিবার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সাংবাদিকরা এ বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, এই স্বৈরাচার ও অবৈধ সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকতে চাই। আমরা এই সরকারের কাছে কোনো বিচার চাই না। বিচার চাই, দেশের কাছে। আমরা ছাত্রদের আন্দোলনে আছি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঢেকে গেছে, তাই সরকারের পতন ছাড়া কোনো পথ নেই।।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন শুভ বলেন, গত কয়দিন ধরে হত্যা চলছে, এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ও পাঁচজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের হত্যার বিচার আমি এই সরকারের কাছে চাই না, এই সরকারের কাছে কোনো বিচারের দাবি নেই। গত ৩-৪ সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে। এ হত্যাকাণ্ড করে প্রমাণ করছে তারা বাংলাদেশের মানুষ নয়। কাজেই এই সরকারের কাছে আমাদের কোনো দাবি নাই। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ সাধারণ মানুষ যে আন্দোলনে নেমেছে, সেই আশায় আমরা বুক বেধেছি, সরকার পতন করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সারাজীবনে একটু উদাহরণ হয়ে থাকবে। আপনাদের বিতাড়িত করা না পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবে না।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর সন্তানকে কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করেছে। বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে ৫২ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। কোথায় গেল জামায়াত, কোথায় গেল বিএনপি, কোথায় গেল বিরোধীদল, তাদের কেউ মারা যায়নি। কিন্তু সরকার বলছে এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত ঢুকে পড়ছে। যে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে তারাও তাদের সন্তানকে ঘরে রাখতে পারেনি। পৃথিবীতে আন্দোলন আছে, গণতন্ত্র আছে, কিন্তু এ দেশের মানুষের ওপর বিচারের গুলি চালাবেন না। যদি চালান একজন জনতা মরলে ২০ জন পুলিশ মরবে। আপনারা যাদের হুকুমে গুলি চালাচ্ছেন তারা বিদেশ পাড়ি জমাবেন। সবাই জানে এই সরকার লাইফ সাপোর্টে আছে। হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করছে, তাদের জনতার আদালতে বিচার করা হবে। কোর্ট তাদের বিচার করবে না জনতার আদালত তাদের বিচার করবে।
জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের একটি কবিতার উদ্ধৃতি তুলে ধরে আব্দুল হাই বলেন, আমি কাঁদতে আসিনি ফাঁসি দাবিতে এসেছি। আজকে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি, ফ্যাসিস্ট, হত্যাকারী, স্বৈরাচারী, দেশদ্রোহী, ধর্মদ্রোহী, সরকারের ফাঁসির দাবি নিয়ে, বিচারের দাবি নিয়ে। আমাদের কাছে খবর আছে বিমানবন্দর দিয়ে সমানে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে তারা। ইতোমধ্যে আমরা শুনেছি ৭৩ জন দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তারা যেন আর পালিয়ে যেতে না পারে, তাই ছাত্র জনতা, আমার ছেলেমেয়ে, শিক্ষার্থীদের বলবো বিমানবন্দর ঘেরাও করো।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, আজকের এই অবস্থায় আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমরা সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে আছি। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি। আমরা এই ঘাতকের কাছে কেন বিচার চাইব। এই ঘাতককে আমরা মুক্তি দিয়ে আমরা ছাত্র-জনতার পাশে আছি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে আমরা মাঠে নেমেছে সাংবাদিক হত্যার বিচারের জন্য। সারা দিন মাঠে কাজ করার পরে যখন সাংবাদিকরা অফিসে যায় তখন অনেক অফিসে ছাত্রদের পক্ষে সংবাদ ছাপায় না। যারা এসব করছে তাদের নাম ছড়িয়ে দেওয়ার দরকার।
সাংবাদিক সাঈদের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, বিমানবন্দর ছাত্র জনতার অবস্থান নেওয়া দরকার যাতে তারা দেশে থেকে পালিয়ে যেতে না পারে। আপনারা অনেক অন্যায় করেছেন তার প্রতিদান দিতে হবে।
মুরছালীন নোমানী বলে, সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছে। সাংবাদিকরা সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলে। তারপরও কেন সাংবাদিকরা টার্গেট। এর বিচার হবে, এর জবাব দিতে হবে।