জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) চরম বিভ্রান্তিকর তথ্য—ছেলের বয়স বাবার চেয়ে ৪৯ বছর বেশি! তথ্যটি অবিশ্বাস্য হলেও কাল্পনিক নয়। আর এই ঘটনাটি এলোমেলো করে দিয়েছে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই গ্রামের বাসিন্দা মো. জিন্নাহর জীবন। এনআইডি সংশোধনের জন্য তিনি দুই বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
জানা গেছে, অনেক আগে ভোটার হলেও বয়স ভুলের বিষয়টি খেয়াল করেননি মো. জিন্নাহ। নিজের ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে এই ভুল প্রথম ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, মো. জিন্নাহর জন্ম ১৯১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। সেই অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ১০৭ বছর। অথচ বাস্তবে তার জন্ম ১৯৮৫ সালে। অর্থাৎ এখন তার বয়স মাত্র ৩৯ বছর। পরিচয়পত্র অনুযায়ী মো. জিন্নাহর বাবা কালু পরামানিকের জন্ম ১৯৬৭ সালের ৯ জুন। তার বয়স বর্তমানে ৫৮ বছর। আর মা রবিয়া খাতুনের এনআইডি অনুযায়ী জন্ম ১৯৭২ সালের ১১ জুন। তার বয়স বর্তমানে ৫৩ বছর।
বাস্তবতার সঙ্গে এনআইডির বয়সে বিস্তর ফারাকের কারণে বিপাকে পড়েছেন মো. জিন্নাহ। স্থানীয় একটি স্কুলে নিজের ছেলেকে ভর্তি করাতে চান। স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রয়োজন জন্মনিবন্ধন আর শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে প্রয়োজন বাবা-মায়ের অনলাইন জন্মনিবন্ধন। বাবার বয়সজনিত অসংগতির কারণে সব প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী মো. জিন্নাহ কালবেলাকে বলেন, আমি একজন দিনমজুর। ভোটার আইডি কার্ডের তেমন প্রয়োজন হয় না। যে কারণে এত বড় ভুলও এতদিন আমার চোখে পড়েনি। ছেলের ভর্তি প্রসঙ্গে বিষয়টি সামনে আসে। একাধিকবার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ঘুরেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনে লালনপালন করতে চাইছিলাম। ঋণের জন্য সব কাগজপত্র ঠিকঠাক হলেও বয়সজনিত অসংগতির কারণে তা আর পাস হয়নি।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলেন, মা-বাবার চেয়ে সন্তানের বয়স দ্বিগুণ, এমন ভুল হয় কীভাবে। তাদের ভুলের জন্য আমরা হয়রানি হচ্ছি।
সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান মিঞা কালবেলাকে বলেন, এটা হয়তো টাইপিং মিসটেক হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের বয়স সংশোধনের জন্য জন্মনিবন্ধন, মা-বাবার এনআইডি, ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করলে সংশোধন হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন