বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত কয়েকদিন ধরে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমা বর্ষণ চলছে। মিয়ানমারের এই যুদ্ধাবস্থার মাঝে এখন পর্যন্ত প্রাণভয়ে জান্তা সরকারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৯৫ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর এসব সদস্যদের কোথায়, কীভাবে রাখা হবে? তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া কী হবে? ইতোমধ্যে এসব বিষয় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমার ইস্যুতে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষে বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির সরকার যোগাযোগ করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত সুরক্ষিত আছে। বিজিপি সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে আমাদের দুপক্ষের মধ্যেই কথা হয়েছে। তাদের আকাশপথে না নদী পথে ফিরিয়ে নেওয়া হবে সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বিজিপি সদস্যরা যদি ফিরে যেতে না চায়- এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, তারা অবশ্যই যেতে চায়। এ জন্যই আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। তারা যেহেতু পালিয়ে এসেছে, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এ বিষয়ে দু’পাশ থেকেই যোগাযোগ চলমান।
মন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত রেজিস্টার্ড ৯৫ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের মধ্যে যারা আহত রয়েছে তাদের কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চলমান পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ বা অন্য কারও সহযোগিতা চাওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে কথা চলমান বিধায় এখনও জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাকে যুক্ত করার অবস্থা নেই।
মিয়ানমারে ফিরে গেলে কি শাস্তির মুখোমুখি হবেন সেনারা?
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব আইন রয়েছে। এই ধরনের অপরাধে সাধারণত সামরিক আদালতে বিচার অনুষ্ঠিত হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরাকান আর্মির তাড়া খেয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রায় ৩০০ সদস্য। এদের মধ্যে একজন কর্নেলের নেতৃত্বে ৩৬ কর্মকর্তা এবং বাকিরা নিচু পদের সেনা। গেল ২৩ জানুয়ারি তাদের মধ্যে ১৮৪ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। বাকিদেরও পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দায়িত্ব ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় দেশটিতে ফেরার পরই এসব সেনাদের মধ্যে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
কেন এমন পরিস্থিতি
১৯৪৮ সালে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে মিয়ানমার। জন্মের শুরু থেকেই রাষ্ট্রটি ষড়যন্ত্র, পাল্টা ষড়যন্ত্র আর সেনা শাসনের কবলে বিপর্যস্ত। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বড় প্রকাশ দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে এনএলডি’র নেতৃত্বের বেসামরিক সরকারকে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে উৎখাত করে মিয়ানমার সেনাবহিনী। এরপর থেকেই প্রায় সাত দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জান্তা সরকার। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীরসহ সেনা সদস্যরা পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। সর্বশেষ গেল দুদিনে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় একশত বার্মিজ সেনা।
মন্তব্য করুন