ড. এম মনির উদ্দিন
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৩, ০৫:৫৮ পিএম
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৩, ০৭:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. এম মনির উদ্দিন

মানসম্পন্ন বীজ এবং ধানের সংগ্রহোত্তর অপচয় কমাতে হারমেটিক স্টোরেজ

হারমেটিক ব্যাগ। ছবি - সংগৃহীত
হারমেটিক ব্যাগ। ছবি - সংগৃহীত

পৃথিবীর ইতিহাস পরিবর্তনে যে কজন মহান নেতা নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে মনের অজান্তেই চলে আসে একটি নাম—হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সারা জীবন জাতির জন্য সংগ্রাম এবং মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনের মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্বে এক অনুকরণীয় নেতায় পরিণত হন। বঙ্গবন্ধুর সর্বোচ্চ ত্যাগ, আপসহীন মনোভাব, সুচিন্তিত এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কারণে তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শত চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুর নের্তৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রুখতে পারেনি। আর সে কারণেই সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির কুচক্রের নির্মম শিকার হন বাংলার এই মহান নেতা—জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রাম এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে অনুধাবন করেছিলেন, কৃষির উন্নয়নের মধ্য দিয়েই কেবল বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি আসতে পারে। আর সে কারণেই সাড়ে তিন বছরের শাসন সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের কৃষি উন্নয়নের জন্য গড়ে তোলেন বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালে দেশে তুলার চাষ সম্প্রসারণ করার জন্য তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। পুনর্গঠন করেন হর্টিকালচার বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি ও রাবার উন্নয়ন কার্যক্রম। বঙ্গবন্ধু কৃষি সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বীজ ও সার সরবরাহের প্রতিষ্ঠান বিএডিসিকে পুনর্গঠন করে সারা দেশে বীজকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। কৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জন্য ১৯৭৩ সালে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৩ সালে কৃষিতে গবেষণা সমন্বয়ের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং নুতন নামে পুনর্গঠন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। এগ্রিকালচার রিসার্স ল্যাবরেটরিকে উন্নীত করেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে। এ ছাড়া তিনি ঈশ্বরদীতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রতিষ্ঠা করেন পরামাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। মৎস্য ও পশু সম্পদের উন্নতির জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

কৃষি শিক্ষাকে দেশের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভাষণে তিনি কৃষি বিপ্লবের কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন, গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। কেননা গ্রামই সব উন্নয়নের মূল কেন্দ্র। গ্রামের উন্নয়ন আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যখন বেগবান হবে তখন গোটা বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কৃষি শিক্ষায় আকৃষ্ট করে আধুনিক কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলার মানসে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান করেন যা প্রতিবছর কৃষিবিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের তিনি কৃষি বিপ্লব সফল করার আহ্বান জানান।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করে কৃষি উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করেন এবং এর কারণে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বে অনন্য রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। দেশের ১৭ কোটি মানুষের বিবেচনায় প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টন খাদ্যের চাহিদা রয়েছে যার পুরোটাই অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।

এফএওর মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রিশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের সিনিয়র এসডিজি স্পেশালিস্ট খাদ্য নষ্ট ও অপচয় বিষয়ে বলেন, সারা বিশ্বে প্রতি বছর উৎপাদন, পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যায়ে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয় যার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার। বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে কী পরিমাণ খাদ্য অপচয় হচ্ছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। তিনি আরও বলেন, যখন খাদ্য নষ্ট হয় তখন আসলে খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সম্পদ যেমন পানি, ভূমি, বিদ্যুৎ, শ্রম, পুঁজি ইত্যাদিরও অপচয় হয়।

মহামারি, যুদ্ধ সেই সঙ্গে জলবায়ুর চরম রূপ-বিরূপ ইত্যাদি কারণে বিশ্বে খাদ্য সংকটের ঘণ্টা বেজে উঠছে—তখন বিশ্বে খাদ্যের অপচয়ও বাড়ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে বছরে খাদ্যের অপচয় ১ দশমিক ৪৫ কোটি টন—যার অর্থ ক্ষুধার আসন্ন হুমকি। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যদি অপচয় না করা হয় তাহলে এই পরিমাণ খাদ্য দিয়ে তিন মাসের জন্য ১৭ কোটি মানুষের খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট।

খাদ্যের অপচয় এমন একপর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যখন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করেছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও জনগণকে সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেন এবং দেশের প্রতি ইঞ্চি খালি জমি যাতে কৃষির আওতায় আসে সেজন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। কৃষিতে বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতি সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। প্রধান খাদ্যশস্য ধান ও গমের উৎপাদন গত অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯০ কোটি টন যা গত ১১ বছরের মধ্যে ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। এই সময়ে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ যা কিছু অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদিত হয় তার একটা ভালো অংশ ক্ষেত থেকে শুরু করে টেবিল পর্যন্ত একাধিক পর্যায়ে নষ্ট হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির খাদ্য অপচয়ের তথ্য অনুসারে, দেশে মাঠ থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত যাত্রাপথে প্রতিবছর ৩৭ লাখ টনেরও বেশি খাবার নষ্ট হয়। বাড়িতে বার্ষিক খাদ্য বর্জ্য প্রায় ১.০৭ কোটি টন, কারণ মোট বার্ষিক ক্ষতি এবং বর্জ্যের পরিমাণ ১.৪৫ কোটি টন।

বাংলাদেশ প্রধানত একটি ধান উৎপাদনকারী দেশ এবং চাল প্রধান খাদ্য। দেশের মোট ফসলী জমির ৮০ শতাংশ ধান চাষের অধীনে এবং বছরে তিন মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। সুতরাং দেশের মানুষের জীবিকা নির্বাহে ধান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশে প্রতিজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৩৬৭ গ্রাম চাল খায়। মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মোট ক্যালরি সরবরাহের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ এবং মোট প্রোটিন গ্রহণের প্রায় অর্ধেক আসে চাল থেকে।

বাংলাদেশে ধান সংগ্রহের পর সংরক্ষণের জন্য সাধারণত ডোল, বের, গোলা, মটকা, স্টিলের ড্রাম, প্লাস্টিকের ব্যাগ, প্লাস্টিকের ড্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এ সমস্ত স্টোরেজ সিস্টেমে চাল বা ধানে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয় এবং বীজের ক্ষেত্রে অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নিন্ম পর্যায়ে নেমে আসে। দেশের এসব সনাতনী প্রথায় সংরক্ষণ করা ধান বা চালে পোকামাকড়ের আক্রমণের কারণে সবচেয়ে বেশি খাদ্যের অপচয় হচ্ছে। শুধু আধুনিক স্টোরেজ ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে পারলেই অপচয়ের বিরাট অংশ রোধ করা সম্ভব।

বিশ্বে প্রতি ৯ জন মানুষের মধ্যে একজন অপুষ্টির শিকার অথচ প্রতিবছর ১ বিলিয়ন টনেরও বেশি উৎপাদিত খাদ্য সারা বিশ্বে নষ্ট হয়। জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের ২০২১ খাদ্য বর্জ্য সূচক রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর মাথাপিছু ৬৫ কেজি খাদ্য বর্জ্য তৈরি হয়—যা অনেক উন্নত দেশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। খাদ্য বর্জ্যের পরিমাণ প্রতিবছর মাথাপিছু যুক্তরাস্ট্রে ৫৯ কেজি, রাশিয়ায় ৩৩ কেজি, আয়ারল্যান্ডে ৫৫ কেজি, নিউজিল্যান্ডে ৬১ কেজি এবং জাপানে ৬৪ কেজি। দেশের খাদ্য উৎপাদন ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার চেয়ে অনেক কম প্রচেষ্টায় খাদ্যের অপচয় ৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। আর এর একটি সহজ উপায় হচ্ছে-হারমেটিক স্টোরেজ।

হারমেটিক স্টোরেজ যা ‘সিলড স্টোরেজ’ বা ‘এয়ারটাইট স্টোরেজ’ নামেও পরিচিত। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্যশস্য, ডাল, কফি এবং কোকো বিনের স্টোরেজ পদ্ধতি হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পদ্ধতিটি সিল করা বায়ুরোধী ব্যাগ বা কাঠামো ব্যবহার করে উচ্চ কার্বন-ডাই অক্সাইড ঘনত্বের একটি স্বয়ংক্রিয় পরিবর্তিত বায়ুমণ্ডল তৈরি করে। যেহেতু কাঠামোটি বায়ুরোধী সে কারণে শস্যের জৈব অংশ যেমন পোকামাকড়, বায়বীয় অনুজীব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্বসন বিপাকের কারণে কার্বন-ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। ফলে ভেতরের পোকামাকড় ও অনুজীব অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। এতে শস্যে আলফা টক্সিন উৎপাদন ক্ষমতাও হ্রাস পায়।

হারমেটিক স্টোরেজের জন্য যেসব ব্যাগ বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে সমস্ত ব্যাগ বা কন্টেইনার ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের মধ্যে সুপার গ্রেইন ব্যাগ, গ্রেইনপ্রো ব্যাগ, কোকুন (৫-৫০ টনের জন্য), বাংকারস, পিটস টানেল, সাইলো ব্যাগ, জিরোফ্লাই ব্যাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ সব ব্যাগ ব্যবহার করে শস্য বীজের বিশেষ করে ধানের ক্ষেত্রে বীজের অঙ্কুরোদগমের হার ৯৮-৯৯ শতাংশ পাওয়া যায় যা আমাদের দেশের সনাতনী পদ্ধতিতে সর্ব্বোচ ৬০ শতাংশ পাওয়া সম্ভব। সুতরাং গুণগতমানসম্পন্ন সতেজ বীজ নিশ্চিত করতে হলে হারমেটিক ব্যাগের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে দেশের ক্ষুদ্র চাষি পর্যায়ে মানসম্পন্ন বীজের ব্যবহার বাড়াতে হলে হারমেটিক স্টোরেজ পদ্ধতির ব্যবহার অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি ধানের সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্লেটে নেয়া পর্যন্ত সংগ্রহত্তোর অপচয় রোধ করার জন্যও হারমেটিক স্টোরেজ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।

হারমেটিক স্টোরেজে যেসব পলিপ্রপিলিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয় এদের একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পোকামাকড় বা ইঁদুর এ সমস্ত ব্যাগ কাটতে বা ছিদ্র করতে সক্ষম যার ফলে ব্যাগের ভেতর ও বাইরের আবহাওয়াগত পরিবেশ একই রকম হয়ে যায় এবং এতে হারমেটিক স্টোরেজের সুফল পাওয়া যায় না। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আব্দুল আউয়াল এবং তার বিশেষজ্ঞ দল গবেষণা করে বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য উপযোগী ধাতব কন্টেইনারে হারমেটিক স্টোরেজের গুণাবলি যুক্ত করেছেন যা পোকামাকড় বা ইঁদুর কাটতে বা ছিদ্র করতে পারবে না এবং এর ব্যবহার অনেক বছর পর্যন্ত করা সম্ভব হবে। ড. আউয়ালের মতে, এই ধরনের মেটালিক হারমেটিক স্টোরেজ দেশের ক্ষুদ্র কৃষক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠপর্যায়ে কৃষকদের দিয়ে বীজ উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং কৃষক পর্যায়ে মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। এক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত এই স্টোরেজ পদ্ধতিটি মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে কৃষক পর্যায়ে সুস্থ, সবল, নীরোগ বীজের ব্যবহার বাড়বে যা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি খাদ্যের জন্য ব্যবহৃত ধানের অপচয় কমানোর জন্য বিভিন্ন আকারের কোকুন ব্যবহার কৃষক পর্যায়ে বাড়াতে পারলে সংরক্ষিত ধানের অপচয় অনেক পরিমাণে কমে আসবে।

১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০০৮ জন)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এভাবে বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালে লোকসংখ্যা প্রায় ২০ কোটিতে বৃদ্ধি পাবে (এফএও, ২০১৪)। অন্যদিকে প্রতি বছর আবাদি জমি ১ শতাংশ করে কমছে। তাই প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন করতে হয়। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদিত যে বিপুল পরিমাণ খাদ্য সংগ্রহ করার পর থেকে প্লেটে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে অপচয় হয় তা যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা বা পদক্ষেপে নেওয়া জরুরি।

বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা নেওয়ায় দেশ আজ সব কৃষিজ খাদ্যপণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং কৃষির এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার ফলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ১৯৭১-এর পরাজিত অপশক্তি আমেরিকা আবার তার কু-দৃষ্টি ফেলেছে এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের ওপর। বাংলাদেশে নাকি মানবিক বিপর্যয় ঘটে চলছে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে বাংলাদেশকে নিয়ে এর আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মুসলিম অধ্যুষিত হওয়া সত্ত্বেও অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনের ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। আরও উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কার্যকর অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। আর মৌলবাদী আমেরিকায় সচরাচরই ঘটছে লোমহর্ষক বর্ণ বিদ্বেষী ঘটনা। কালো মানুষের ওপর চলছে নির্মম নির্যাতন ও হত্যা। দেশটিতে সবসময়ই ঘটে চলেছে বিচার বহির্ভূত হত্যা। সেই আমেরিকা আজ বাংলাদেশে মানবিক বিপর্যয়ের সাফাই গেয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং বিশ্ব নেতৃত্বেও ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন। বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তি মিশনে অত্যন্ত দক্ষ ও সুনামের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছে যা ইতোমধ্যে বিশ্ব দরবারে বিশেষভাবে প্রশংসিত। বিশ্ব দরবারে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃর্ত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিশ্ব নেতারা। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে শিখিয়েছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতে। বাঙালি বীরের জাতি যার প্রমাণ ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক অপশক্তি আমেরিকার কুচক্রান্তকে প্রতিহত করে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমেরিকাকে সমুচিত জবাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আগামী দিনে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা সব দেশবাসীর।

ড. এম মনির উদ্দিন অ্যাগ্রোনোমিস্ট ও উন্নয়ন কর্মী

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দাম কমলো ইন্টারনেটের

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

১০

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১১

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১২

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১৩

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৪

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৫

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

১৬

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

১৭

মেয়ের জন্য চিপস আনতে গিয়ে প্রাণ হারান মোবারক

১৮

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় সংকটে মার্কিন ডলার

১৯

তারেক রহমান জুলাই বিপ্লবের মূল নেতৃত্বে ছিলেন : অধ্যাপক মোর্শেদ

২০
X