মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাষ্ট্র একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রাপ্য সম্মান না দিয়েই চলে যেতে দিল!

মহান মুক্তিযুদ্ধের 'কে' ফোর্সের ক্র্যাক প্ল্যাটুন কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধা মিছবা জায়গীরদার। ছবি : সৌজন্য
মহান মুক্তিযুদ্ধের 'কে' ফোর্সের ক্র্যাক প্ল্যাটুন কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধা মিছবা জায়গীরদার। ছবি : সৌজন্য

তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের ২ নং সেক্টরের ‘কে’ ফোর্সের ঢাকা ক্র্যাক প্লাটুনের দুঃসাহসী এক কমান্ডো। ছোটকাল থেকে তার মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অনেক সফল অপারেশনের গল্প শুনে এসেছি। এই মুক্তিযোদ্ধা এমনই এক নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক ছিলেন, নিজের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার করে সরকারি খাতায় নাম লিখান নাই। সরকারি ভাতাও তাই নেন নাই।

মাঝে মাঝে গর্ব করেই বলতেন, ‘আমি দেশের নির্যাতিত মানুষের জন্য যা করেছি তার সঙ্গে সনদপত্রের কী যোগাযোগ! যদি কখনো প্রযোজন হয়, আমার কাছে তো ওসমানী সাহেবের স্বাক্ষরকৃত সনদপত্র আছেই!’

এই মুক্তিযোদ্ধা গত ২৮ এপ্রিল ঢাকার বারডেমে ইন্তেকাল করেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে আমার কাছে তার সার্টিফিকেটগুলো আসে। আমি সঙ্গে সঙ্গে সিলেটের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললাম। তারা বললেন, থানা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানাতে হবে। আমি মৃত মুক্তিযোদ্ধার দেশের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার থানা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি আমাকে এলাকার একজন সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধাকে ফোন করতে বললেন। সেই সঙ্গে জানালেন, লাল বার্তা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটেড লিস্টে মৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম নাই।

আমি তাদের আমার কাছে রক্ষিত ওসমানী সাহেব এবং মেজর হায়দারের স্বাক্ষরকৃত সনদপত্র পাঠালাম। সেগুলো কর্তৃপক্ষ উপেক্ষা করলেন। বললেন যে, গেজেটেড সার্টিফিকেট লাগবে। এভাবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সিদ্ধান্ত পেতে পেতে ঢাকার উত্তরায় ও সিলেটের বালাগঞ্জে দুবার জানাজা হয়ে গেল। সিলেটের দরগাহ শরিফে শেষ জানাজা হওয়ার আগে তারা আমাকে জানালেন, গার্ড অব অনার দেওয়া সম্ভব নয়।

আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, একজন মৃত মুক্তিযোদ্ধার কাছে গার্ড অব অনার কোনো অর্থবহন করে না। যিনি জীবিত থাকা কালেই রাষ্ট্রীয় সম্মানকে পায়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন, এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে একটি গার্ড অব অনার ক্র্যাক প্ল্যাটুনের কমান্ডো মিছবা জায়গীরদার সাহেবের আত্মার কী এমন উপকার করতে পারবে!!!

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সিলেট শাহ জালাল (র.) দরগাহ কবরস্থানে শায়িত করে বাড়ির পথে হাঁটা ধরলাম। বুকে একটু চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছি। রাষ্ট্র তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজনকে উপেক্ষা করল, ক্ষোভ শুধু এতটুকুই! এর বেশি কিছু না!

একটু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে চাইলাম। পৃথিবীর সবাই ভালো থাকুক, সুস্থ্য থাকুক নিরন্তর।

মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান : আইটি উদ্যোক্তা

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কর্ণফুলী নদীতে ভাসছিল নিখোঁজ জেলের লাশ

নেতাকর্মীদের যে বার্তা দিলেন জামায়াতের আমির

‘ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখতে হবে’

শেখ হাসিনার চিত্ত সর্বদা ভয়শূন্য : ধর্মমন্ত্রী

পুকুরপাড়ে খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে ভাই-বোনের মৃত্যু

অপশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান জরুরি : আ স ম রব 

ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও রেলের রেয়াতি প্রথা বহালের দাবি

ইসলামী আন্দোলনের নেতা বেলায়েত হোসেনের ইন্তেকাল

এক মাস পর জামিনে মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা হাবিব

আইসিজের কাঠগড়ায় ইসরায়েল, খালাস পেতে যা বলল

১০

স্ত্রী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্বামী গ্রেপ্তার

১১

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে সারা দেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ

১২

সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে বেধড়ক পেটাল ছাত্রলীগ

১৩

বিএনপির অসুস্থ নেতাদের খোঁজ নিলেন আবদুস সালাম 

১৪

বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : নাছিম

১৫

ঝিনাইদহে প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত

১৬

বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে শিশুর মৃত্যু

১৭

নির্বাচনের আগে ও পরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলায়নি: মঈন খান 

১৮

জাবির সঙ্গে এনআইএলএমআরসি’র সমঝোতা স্মারক চুক্তি

১৯

সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসক ও কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের

২০
X