দেশের বিভিন্ন সেক্টরে আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগকৃত অসৎ, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও দলবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীতে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানান তিনি। সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের প্রত্যাশা শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নুরুল হক নুর বলেন, সরকার পতন হলেও দেশের বিভিন্ন সেক্টরে আওয়ামী লীগের নিয়োগকৃত অসৎ, দুর্নীতিবাজ, চাঁদবাজ কর্মকর্তা রয়েছে। দেশের বাহিরে বিভিন্ন দূতাবাস, হাইকমিশনেও এমন অনেক অসৎ লোক রয়েছে- তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে দেশে অরাজকতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী এক মাস ছাত্র-জনতাকে রাজপথে থেকে দেশকে পাহারা দিতে হবে। এখন বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে অনেকেই আন্দোলন করছে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে। তাদের বলব, আপনাদের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এই সরকারকে একটু সময় দিন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। আমরা কথা দিচ্ছি- আপনাদের দাবি নিয়েও কথা বলব। কিন্তু আপনারা আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে সহযোগিতা করবেন না। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আমরা দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে পেরেছি। কিন্তু ইতোমধ্যে দেখেছি, আওয়ামী লীগের পরিবর্তে অনেকেই বিভিন্ন দুর্নীতিবাজদের সাথে হাত মিলাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দখলদারত্ব চালাচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে। আপনারা এসব বন্ধ করুন। বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজি-দখলদারত্ব চলবে না। এক দখলদার হটিয়ে নতুন কোনো দখলদার সৃষ্টি করতে চাই না। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর চলছে, এসব বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের কোথাও এসব চলবে না। একজন মানুষও যদি আক্রান্ত হোন- আমাদের জানান, আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াব। এই দেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, এখানে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিবেন না। সব ধর্মের মানুষ এখানে সুন্দরভাবে বসবাস করবে, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। নুর আরও বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে প্রবাসীরা ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এই প্রবাসীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান, প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। প্রবাসীদের কথা শুনুন, তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করুন। বিভিন্ন সময় দেশ থেকে বিতাড়িত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রোষানলের শিকার সাংবাদিক, লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট- তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে যথাযথ সম্মান দিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্যালুট জানান গণঅধিকার পরিষদের একাংশের এই সভাপতি। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যারা ছাত্র-জনতা, যারা আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছিলেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানান। এ সময় ২১ আগস্ট বেলা ১১টায় রাজধানীতে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন নুরুল হক নুর। দেশের মানুষকে রাজপথে নামার আহ্বানও জানান।
গণঅধিকার পরিষদের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন থাকলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে গণহত্যার পরে কোনো দল বা সংগঠনের রাজনৈতিক অস্তিত্ব থাকার নজির নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো, দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করুন। এটি না করলে জনগণের আস্থা হারাবেন। তিনি বলেন, গত ১৫ আগস্ট প্রতিবিপ্লবের চক্রান্ত হয়েছিলো। জনগণ সেটি রুখে দিয়েছে। ২১ আগস্টও সেই ষড়যন্ত্র চলছে। আগামীকাল (বুধবার) জনগণ রাজপথে থাকবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেওয়া হবে।
রাশেদ খান আরেও বলেন, সময় টিভির নাম, লোগো, মালিকানা ও ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন করতে হবে। তাদের সম্প্রচার বন্ধের প্রয়োজন নেই। সম্প্রচার বন্ধ করলে অসংখ্য সাংবাদিক, কর্মচারি বেকার হয়ে পড়বে। আমরা গণমাধ্যমকে নতুন করে ঢেলে সাজাবো। গণমাধ্যমে কোনো দালালি, চাটুকারিতা চলবে না। গণমাধ্যমের শতভাগ স্বাধীনতা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কবীর হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংহতি জানিয়ে সারাবিশ্বে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউনসহ রাজপথে ও বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। আন্দোলনে সংহতি জানানোর কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৪ জন প্রবাসীসহ অন্যান্য দেশে আটককৃত সকল প্রবাসীর মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রবাসী সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান (দূতাবাস, পাসপোর্ট অফিস, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিমান অফিস, বিএমইটি অন্যান্য) এর সকল দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপসারণ করে সৎ, মেধাবী ও প্রবাসবান্ধব রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে।
সর্বশেষ তিনি প্রবাসীদের যৌক্তিক ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট। দফাসমূহ হলো : অনিয়মিত, আনডকুমেন্টেড, দুস্থ এবং অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ পরিবহন ব্যয়সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২২ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার দিতে হবে। বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ ও যথাযথ সম্মান দিতে হবে। প্রবাসীদের জন্য যুগোপযোগী দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন ও পেনশন সুবিধা দিতে হবে। সহজ প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগসহ দালাল ও হয়রানিমুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের জন্য ৫% বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। বিদেশে কাগজপত্রবিহীন প্রবাসীদের বৈধকরণ ও আটককৃতদের মুক্তির জন্য সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। বিদেশে প্রবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বাংলাদেশি দূতাবাস ও শ্রম কল্যাণ উইং প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ও প্রবাস ফেরতদের কর্মসংস্থান, সুদমুক্ত পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মসূচিতে জাপান প্রবাসী আরিফ হোসেন অর্ক বলেন, জাপান দূতাবাসে জাপানের অফিস টাইমে ১০-১৮টা সকল প্রবাসীদের সেবা প্রদান করতে হবে। পাসপোর্ট সেবা দ্রুত সময়ের মধ্যে দিতে হবে। জাপান থেকে সরকারি খরচে লাশ দেশে আনতে হবে।
প্রবাসী অধিকার পরিষদের প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান সহ-সম্পাদক আইয়ুব আল আনসারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন-গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, মাহফুজুর রহমান, মানবাধিকার কর্মী শামসুল আলম লিট, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল, উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, জলবায়ু ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মিমজাল মুফতি, মানব পাচার প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শিহাব উদ্দিন প্রমুখ নেতারা।
মন্তব্য করুন