বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-নারিতা সরাসরি ফ্লাইট স্থগিত করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাপান প্রবাসীরা। ফ্লাইট স্থগিত না করে বরং কাদের দুর্নীতির কারণে এটি লোকসান গুনছে, নাকি কোন ষড়যন্ত্রের বলি হচ্ছে এই ফ্লাইট, তা তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
গত রোববার (১৮ মে) টোকিওর একটি হোটেলে বাংলাদেশ কমিউনিটি জাপানের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তারা।
প্রায় ১৭ বছর বিরতির পর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা-নারিতা রুটে আবারও সরাসরি ফ্লাইট চালু হলেও মাত্র দেড় বছরের মাথায় আগামী ১ জুলাই থেকে ফ্লাইটটি সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, ফ্লাইট স্থগিতে সরকার যে কারণগুলো উল্লেখ করেছে তা সন্দেহজনক। উল্লেখ্য, চলমান হজ ফ্লাইট, উড়োজাহাজের স্বল্পতা ও ব্যবসায়িক বাস্তবতার কারণ দেখিয়ে গত সপ্তাহে ফ্লাইট সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দেয় বিমান বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে বিএনপির জাপান শাখার সভাপতি মীর রেজাউল করিম বলেন, দুর্নীতির কারণেই এই ফ্লাইটে লোকসান গুনতে হচ্ছে কী না তা তদন্ত করা দরকার। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, কারও চক্রান্তে যেন এই ফ্লাইট বন্ধ না হয় সেই দিকে নজর দিন। অন্যথায় আমরা আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
গত ৬ মাসে প্রতিটি ফ্লাইটেই অন্তত ৯০ শতাংশ যাত্রী থাকতো উল্লেখ করে জাপানে বাংলাদেশি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ড. মাসুম জাকির বলেন, বাংলাদেশে এখন অনেক শিক্ষার্থী আসছেন জাপানে। তাছাড়া জব ভিসা ও অন্যান্য পেশায়ও জাপানে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা বাড়াছে। ফলে সরাসরি ফ্লাইটে প্রবাসীরা উপকৃত হচ্ছিলেন। ব্যবসা-বাণিজ্যও সম্প্রাসারিত হচ্ছিল। কিন্তু এই ফ্লাইট বন্ধে ক্ষতির শিকার হবেন তারা।
বাংলাদেশ থেকে এখন সহজেই এই ফ্লাইটের মাধ্যমে শাক-সবজি, মাছসহ বিভিন্ন পণ্য সহজেই আসতে পারছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ঢাকায় বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, জাপানিজ ইকোনোমিক জোন, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী গভীর স্থলবন্দর, জাইকার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজেও জাপানিজরাও সরাসরি এই ফ্লাইটের সুবিধা পাচ্ছিলেন। কিন্তু এই ফ্লাইট স্থগিত হওয়ায় আবারও ভোগান্তি যেমন বাড়বে, তেমনি দেশের সুনামও ক্ষুণ্ণ হবে বলে।
ফ্লাইট চালু রাখার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম ডি এস ইসলাম নান্নু। তিনি বলেন, ফ্লাইট বাতিলের পেছনে প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরা জড়িত কিনা তদন্ত করা উচিত।
বিএনপি জাপান শাখার সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম মনি বলেন, ফ্লাইট পরিচালনায় অনেক অর্থ সাশ্রয় করার সুযোগ আছে। সেটি করলে খরচ কমানো যায়। তা না করে ফ্লাইট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাপানবাংলা নিউজ ডটকমের সম্পাদক আতিকুর রহমান, টোকিওর বায়তুল আমান গামো মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা সাবের আহমেদ, বিসিসিআইজের পরিচালক কাজী এনামুল হক, সমাজসেবক হাফেজ আলাউদ্দীন, সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হকসহ অন্যান্যরা। সঞ্চালচনা করেন আলমগীর হোসেন মিঠু।
ঢাকা-নারিতা রুটে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এই সংস্থাটির প্রথম ফ্লাইট চালু হয়েছিল ১৯৮১ সালে। দীর্ঘ ২৫ বছর চলার পর ২০০৬ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সেই ফ্লাইট। এবার মাত্র দেড় বছর পার হতেই আবারও ফ্লাইট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
মন্তব্য করুন