ইতালির উদিনে শহরের স্টাদিও ফ্রিউলিতে বুধবার রাতের ইউরোপীয় সুপার কাপ ফাইনাল শুরুর আগে ফুটবল মাঠে ভেসে ওঠে এক মানবিক আহ্বান—‘শিশু হত্যা বন্ধ করুন, বেসামরিক হত্যা বন্ধ করুন’। উয়েফার আয়োজিত এই প্রাক-ম্যাচ অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়রা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্যানারটি প্রদর্শিত হয়, যা মুহূর্তেই বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
শুধু ব্যানারেই থেমে থাকেনি উয়েফা। পদক প্রদানের সময় অংশ নেয় গাজার দুই শরণার্থী শিশু—১২ বছরের তালা ও ৯ বছরের মোহাম্মদ। তালা গুরুতর অসুস্থ হয়ে গাজা থেকে ইতালির মিলানে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। অপরদিকে মোহাম্মদ যুদ্ধের এক হামলায় মা-বাবা দুজনকেই হারিয়েছেন, নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।
শুধু গাজার শিশুরাই নয়, আফগানিস্তান, ইরাক, নাইজেরিয়া ও ইউক্রেন থেকে ইতালিতে আশ্রয় নেওয়া আরও ৯ জন শরণার্থী শিশু এই প্রাক-ম্যাচ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়।
এর আগে গত শনিবার উয়েফা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনি ফুটবলার সুলেইমান আল-ওবেইদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। কিন্তু পোস্টে তার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন লিভারপুল ও মিশরের তারকা মোহাম্মদ সালাহ। পরে জানা যায়, ‘ফিলিস্তিনের পেলে’খ্যাত ৪১ বছর বয়সী এই সাবেক ফুটবলারকে দক্ষিণ গাজায় মানবিক সহায়তার অপেক্ষায় থাকার সময় ইসরায়েলি হামলায় হত্যা করা হয়।
রাজনৈতিক, আদর্শিক বা ধর্মীয় বার্তা প্রদর্শনে স্টেডিয়ামে কড়াকড়ি নীতি থাকলেও উয়েফা শিশুদের মানবিক সুরক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়ে এই উদ্যোগ নেয়। এর পাশাপাশি, গাজার শিশুদের সহায়তায় তিনটি মানবিক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে উয়েফা ফাউন্ডেশন ফর চিলড্রেন।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৬ জন শিশু-সহ অন্তত ২৩৫ জন অপুষ্টি ও খাদ্যাভাবজনিত কারণে মারা গেছেন।
ফাইনালে পেনাল্টিতে শিরোপা জেতে পিএসজি, তবে ম্যাচের চেয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই মানবিক বার্তা—যা ফুটবল মাঠকে মুহূর্তের জন্য যুদ্ধবিরোধী মঞ্চে পরিণত করেছিল।
মন্তব্য করুন