বিগ ব্যাশ লিগে একমাত্র বাংলাদেশি প্রতিনিধি হিসেবে খেলতে নেমে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে আলাদা করে নজর কাড়ছেন রিশাদ হোসেন। স্পিনারদের জন্য প্রতিকূল অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে যেখানে টিকে থাকাই কঠিন, সেখানে ম্যাচের পর ম্যাচ নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট এনে নিজেকে প্রমাণ করছেন এই লেগ স্পিনার।
হোবার্ট হারিকেনসের হয়ে এ মৌসুমে রিশাদের বোলিং পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে তার ধারাবাহিকতার গল্প—৪ ওভারে ১৮ রান, ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট, আবার কখনো ২১ রান খরচায় ১ উইকেট, কিংবা ৩৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট। উইকেট না পেলেও ইকোনমিতে চেপে ধরছেন ব্যাটসম্যানদের, আর একটু রান দিলে ফিরছেন উইকেট নিয়ে—একজন কার্যকর টি-টোয়েন্টি বোলারের সব বৈশিষ্ট্যই যেন ফুটে উঠছে তার বোলিংয়ে।
রিশাদ আদতে ক্ল্যাসিক্যাল লেগ স্পিনার নন। বড় ফ্লাইট বা ধারালো বাঁকের চেয়ে তার শক্তি বৈচিত্র্যে। গুগলি, স্কিড করা জোরাল ডেলিভারি আর লেংথে সূক্ষ্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি বিভ্রান্ত করছেন ব্যাটসম্যানদের। চলতি বিগ ব্যাশেই সেই উন্নতির স্পষ্ট প্রমাণ মিলছে।
মেলবোর্ন রেনেগেডসের বিপক্ষে হোবার্টের সাম্প্রতিক ম্যাচটি ছিল রিশাদের পরিণতির আরেকটি উদাহরণ। টস জিতে আগে বোলিংয়ে নেমে হারিকেনস পাওয়ারপ্লেতেই আস্থা রেখেছিল তার ওপর। নতুন বল কিছুটা শক্ত থাকতেই তাকে আক্রমণে আনা হয়—যা দলটির বিশ্বাসেরই প্রতিফলন। সেই আস্থার প্রতিদান দেন রিশাদ, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
পরের ওভারগুলোতেও ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখেন তিনি। যদিও একটি কঠিন ক্যাচ ফসকে যাওয়ায় আরেকটি উইকেট মিস হয়, তবু পরের বলেই ভুল শোধরান। শেষ পর্যন্ত তার বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড়ায় ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ২ উইকেট—সংখ্যার চেয়েও ম্যাচে প্রভাব ছিল অনেক বেশি।
এ মৌসুমে হারিকেনসের হয়ে রিশাদ ও ইংলিশ লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ—দুজনেই সমান ম্যাচ খেললেও দায়িত্ব আর প্রভাবের দিক থেকে রিশাদ এগিয়ে। বেশি ওভার বোলিং করেছেন, বেশি উইকেট নিয়েছেন, আর দলের আস্থার জায়গাটাও দখল করে নিয়েছেন ধীরে ধীরে। পাঁচ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত বিগ ব্যাশে কোনো স্পিনারেরই এমন সাফল্য নেই।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমের মতে, হোবার্টে রিশাদকে নেওয়ার পেছনে রিকি পন্টিংয়ের পরামর্শও ছিল। মাঠের পারফরম্যান্সে সেই সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করে চলেছেন বাংলাদেশি এই লেগ স্পিনার।
ব্যাট হাতেও রিশাদ যে টি-টোয়েন্টিতে কার্যকর হতে পারেন, সেটাও জানা আছে। যদিও এ ম্যাচে তার ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন পড়েনি। ম্যাথু ওয়েডের ঝড়ো ইনিংসে হোবার্ট ১২ বল হাতে রেখেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে।
সব মিলিয়ে, বিগ ব্যাশে রিশাদ হোসেন এখন আর শুধু অংশগ্রহণকারী নন—তিনি হয়ে উঠছেন স্পিনারদের ভিড়ে এক আলাদা পরিচয়। বাংলাদেশের লেগ স্পিন ইতিহাসে বিদেশের মাটিতে এমন ধারাবাহিকতা নিঃসন্দেহে আশাবাদের নতুন বার্তা।


| ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ 


