

চট্টগ্রামের পুরোনো সার্কিট হাউসে অবস্থিত শতবর্ষী ঐতিহাসিক জিয়া স্মৃতি জাদুঘর ভবনের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্পের প্রভাবে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত ২ ডিসেম্বরের ভূমিকম্পে ভবনের দেয়াল ও সিঁড়ির আশপাশে ফাটল সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি কয়েকটি জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ে।
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে ঘটনার পর থেকেই জাদুঘরটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে ভবনটি পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র শাহাদাত হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, এটি একটি শতবর্ষী ঐতিহাসিক স্থাপনা। ভূমিকম্পে কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
মেয়র জানান, ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা যাচাই করতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের যুক্ত করা হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ভবনটি কীভাবে আরও মজবুত ও টেকসই করা যায়, সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ কাজে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় জাদুঘরের জাদুঘরের উপ-কিপার (রুটিন দায়িত্ব) অর্পিতা দাশ গুপ্ত বলেন, নিচতলার তিন নম্বর গ্যালারি তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেয়ালে ফাটল এবং সিঁড়ির ওপর পলেস্তারা খসে পড়ার বিষয়টি মেয়রকে সরেজমিনে দেখানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র কাজির দেউড়িতে ৩ দশমিক ১৭ একর জায়গা নিয়ে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরটির অবস্থান। ১৯১৩ সালে ব্রিটিশরাজ তথা ভারত সম্রাট ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন ইমারতটি নির্মাণ করেন। ব্রিটিশ আমলে এটি ‘লাট সাহেবের কুঠি’ নামে পরিচিত ছিল। পরে এটি সার্কিট হাউস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এই ভবনে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নির্মমভাবে শহিদ হন।
পরে ১৯৮১ সালের ৩ জুন অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’ উদ্বোধন করেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি শাখা জাদুঘর হিসেবে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিচালিত হচ্ছে।
জাদুঘরের জীর্ণদশা নিয়ে গত ২২ মে দৈনিক কালবেলায় ‘চট্টগ্রামে জীর্ণ জাদুঘরে জিয়ার স্মৃতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে জাদুঘরের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল, পলেস্তারা খসে পড়াসহ নানা অব্যবস্থাপনা তুলে ধরা হয়।
সে সময় জাদুঘরের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৬ সালের পর থেকে সংস্কারের কোন ছোঁয়াই পড়েনি শতবর্ষী ঐতিহাসিক এই স্থাপনায়। বাজেটের অভাবে উন্নয়ন তো দূরের কথা প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজও হয়নি। ফলে ভবনটি একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিনষ্ট হতে চলেছে ইতিহাসের স্মারক অনেক নিদর্শন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব জানান, জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের ভবনে কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের কারণে ফাটল ধরে। এরপর থেকে জাদুঘরটি বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ওনারা এলে অতি দ্রুত মেরামত করে জাদুঘরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন