হঠাৎ বদলে গেল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর দেশ ভারতের নাম। ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পর এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাষ্ট্রীয় নথিতে লেখা হলো ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’।
চিরাচরিতভাবে এতদিন ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ শব্দটি লেখা হতো আনুষ্ঠানিকভাবে। মঙ্গলবার প্রথম ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। জি-২০ সম্মেলনে বিদেশি অতিথিদের রাষ্ট্রপতির সৌজন্যে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিতে লেখা হয় ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অব ভারত’।
এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে নানা জল্পনা। নাম বদলের এই জল্পনার মধ্যেই নতুন মোড যোগ হলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরিচয় লেখা একটি নথিতে।
মঙ্গলবার জি২০ শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেওয়া বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা শুরু হয়, লোকসভা ভোটের আগে দেশের নাম শুধুই ‘ভারত’ করতে চলেছে মোদি সরকার। এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পাসের জন্যই আগামী ১৮-২২ ডিসেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলেও জল্পনার দানা বেঁধেছে।
‘The Prime Minister Of Bharat’ pic.twitter.com/lHozUHSoC4 — Sambit Patra (@sambitswaraj) September 5, 2023
সংবাদমাধ্যম টাইমস নাও জানায়, আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্ব নেতাদের নৈশভোজে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে আয়োজক দেশটির কর্মকর্তারা। ওই নিমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারতের’ পক্ষে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ধরনের নিমন্ত্রণপত্রে আগে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ লেখা হতো।
এ নথি প্রকাশ করে ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রতি তীব্র কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। তিনি লিখেছেন, ‘দেখুন মোদি সরকার কতটা বিভ্রান্ত! ২০তম আশিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী’। এসব নাটক শুধু বিরোধী জোটের নামকরণ ‘ইন্ডিয়া’ করা হয়েছে তাই।’
১২ সেপ্টেম্বর আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। এই সফরের আগে সম্বিত পাত্র সেই আমন্ত্রণ পত্র টুইট করেন।
বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র মঙ্গলবার তার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) প্রধানমন্ত্রী মোদির আসন্ন ইন্দোনেশিয়া সফরের ঘোষণাসংক্রান্ত একটি সরকারি নথি প্রকাশ করেছেন। সেখানে মোদির পদ লেখা হয়েছে, ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। যদিও সরকারি প্রথা অনুযায়ী তার পদটিকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া’ লেখা হয়।
এদিকে, দেশটির আনুষ্ঠানিক নাম পরিবর্তনের পক্ষে সরব হচ্ছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দেশের নাম শুধু ‘ভারত’ করার পক্ষে যুক্ত তুলে ধরেন। এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘রিপাবলিক অব ভারত, আমাদের লোকেরা সাহসিকতার সঙ্গে অমৃতকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জেনে আমি খুশি ও গর্বিত।’
কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী রাজীবচন্দ্র শেখর বলেন, ‘আমাদের দেশের নাম ভারত, এ নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। কংগ্রেস সবকিছুতেই সমস্যা দেখে।’
ভারতের প্রধান হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের প্রধান রাজীব শেখর আরও বলেন, ‘যুগ যুগ থেকেই এই দেশের নাম ভারত। আমাদের সে দিকেই যেতে হবে। ভাষা যাই হোক না কেন, নাম একই থাকে।’
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে কথা বলেছিলেন বিজেপির আইনপ্রণেতা নারেশ বানসাল। অধিবেশনে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবটি তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া নামটি ঔপনিবেশিক দাসত্বের প্রতীক। সংবিধান থেকে নামটি মুছে ফেলা উচিত।’
বিজেপি সরকারের দেশের নাম পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রস্তাবনার বিরোধিতা করছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরিবিন্দ কেজরিওয়াল। বিজেপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যদি ইন্ডিয়া জোট নিজেদের নাম পরিবর্তন করে, তাহলে কি বিজেপি ভারতের নাম আবারও পরিবর্তন করবে? কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জোটের কারণে কি দেশের নাম পরিবর্তন হবে? এটি ১৪০ কোটি মানুষের দেশ, কোনো রাজনৈতিক দলের না। বিজেপির ভয় ইন্ডিয়া জোট নামের কারণে তাদের কিছু ভোট কমে যাবে।’
দেশের নাম বদল করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতার ধন-ধান্য প্রেক্ষাগৃহে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে তো ইন্ডিয়ার নাম চেঞ্জ করে দিচ্ছে বলে আমি শুনলাম। মাননীয় রাষ্ট্রপতির নামে যে কার্ড হয়েছে, জি২০-র লাঞ্চে না ডিনারে, তাতে লেখা আছে ভারত বলে। আরে ভারত তো আমরা বলি। এতে নতুনত্ব কী আছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘ইংরেজিতে বলি ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন। হিন্দিতে বলে ভারত কা সংবিধান। ভারত তো আমরাও বলি, ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো। এতে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু ইন্ডিয়া নামে সারা বিশ্ব চেনে। হঠাৎ এমন কী হলো?’
এখানেই থেমে না থেকে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকারকে চড়া সুরে আক্রমণ শানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘আজকে দেশের নামটাও চেঞ্জ হয়ে যাবে। কবে রবি ঠাকুরের নাম চেঞ্জ হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম চেঞ্জ করে দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় ঐতিহাসিক সৌধের নাম বদল করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।’
মন্তব্য করুন