দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এ সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খেতে যাচ্ছে ভারত। শুক্রবার দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আদেশে বলা হয়, এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ বিদেশি কর্মী হিসেবে যেতে চাইলে বাড়তি এক লাখ ডলার অর্থ গুনতে হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রাম নামে পরিচিত। এ ভিসায় ভারত ও চীন থেকে বিপুল কর্মী প্রতি বছর দেশটিতে পাড়ি জমান।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই হঠাৎ নীতিগত পরিবর্তনের ফলে পরিবারগুলোর মধ্যে ‘গভীর বিঘ্ন’ ঘটতে পারে এবং এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি সমাধানের আশা প্রকাশ করা হয়েছে। ভারত জানিয়েছে, নতুন নীতির পূর্ণ প্রভাব বিশ্লেষণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
হোয়াইট হাউস এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই এক লাখ ডলার ফি শুধু নতুন ভিসা আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে; বর্তমান ভিসাধারী বা নবায়নের জন্য এই ফি কার্যকর হবে না।
আলজাজিরা জানিয়েছে, এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানিগুলো বিদেশি দক্ষ পেশাজীবীদের, বিশেষ করে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, সফটওয়্যার প্রোগ্রামারদের কাজের জন্য তিন বছরের জন্য ভিসা দিয়ে আনে, যা ছয় বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। ২০২৪ সালে এইচ-১বি ভিসা পাওয়াদের মধ্যে ভারতীয়রাই ছিল সর্বাধিক। দেশটির নাগরিকরা মোট আবেদনকারীর ৭১ শতাংশ ছিলেন।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সংস্থা ন্যাসকম বলেছে, মাত্র এক দিনের নোটিশে এই ফি কার্যকর করাটা ‘উদ্বেগজনক’। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত ভারতীয় পেশাজীবীদের উপর প্রভাব ফেলবে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় ব্যাঘাত ঘটাবে।
ন্যাসকম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ ধরনের নীতিগত পরিবর্তন পর্যাপ্ত সময় দিয়ে বাস্তবায়ন করা উচিত, যাতে প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উভয়েই নিজ নিজ পরিকল্পনা গ্রহণ করে ঝুঁকি কমাতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই অতিরিক্ত খরচ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবনী (ইনোভেশন) পরিবেশ এবং বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।
শুক্রবার বাড়তি ফি ঘোষণার সময় ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক। তিনি বলেন, এইচ-ওয়ানবি ভিসার জন্য বছরে এক লাখ ডলার দিতে হবে এবং সমস্ত বড় কোম্পানি এতে রাজি আছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যদি তুমি কাউকে প্রশিক্ষণ দিতে যাও, তাহলে আমাদের দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি স্নাতক হওয়া একজনকে প্রশিক্ষণ দেবে। আমেরিকানদের প্রশিক্ষণ দাও। আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়ার জন্য লোক আনা বন্ধ করো।
বাড়তি ফি আরোপের পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, কর্মসূচিটির অপব্যবহার রোধ করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ না করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এই ভিসার জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক ফি বাবদ মোট ১ হাজার ৫০০ ডলার খরচ করতে হতো। ২০০৪ সাল থেকে এইচ-১বি ভিসা ক্যাটাগরিতে প্রতি বছর কেবল ৮৫ হাজার জনকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন