গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছে ফ্রান্স। যুদ্ধ শেষ হলে এই বাহিনী হামাসকে নিরস্ত্র করার পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে—এমন তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।
প্রাপ্ত খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, বাহিনীটি জাতিসংঘ অনুমোদিত একটি ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যুদ্ধবিরতির পর এ বাহিনী গাজার দায়িত্ব নেবে এবং ধাপে ধাপে নিরাপত্তার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করা হবে।
খসড়ায় মিসর, জর্ডান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারকে বাহিনীর নেতৃত্বে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি অনুকূল হলে দ্রুত একটি আঞ্চলিক নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী মিশন মোতায়েন করা সম্ভব।
এর ভিত্তি তৈরি হয়েছিল গত জুলাইয়ে নিউইয়র্ক ঘোষণার মাধ্যমে, যা প্রণীত হয় ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে। কাতার, মিসরসহ একাধিক আরব দেশ এতে সমর্থন জানায়। চলতি মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এটি প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই মিশনের মূল লক্ষ্য হবে—ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া, ধাপে ধাপে নিরাপত্তার দায়িত্ব পিএর কাছে হস্তান্তর করা, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ও তার নিরাপত্তা বাহিনীকে সক্ষম করে তোলা এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ফরাসি প্রস্তাব অনুযায়ী, বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বা বিশেষ রাজনৈতিক মিশনের আকারে হতে পারে। তবে দ্রুত মোতায়েনের জন্য একটি ছোট আকারের বহুজাতিক বাহিনীকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থায়ন আসবে উপসাগরীয় দেশসহ স্বেচ্ছা দাতাদের কাছ থেকে, জাতিসংঘের বাধ্যতামূলক চাঁদা থেকে নয়।
খসড়ায় দুই ধাপের মোতায়েন পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ, বেসামরিক সুরক্ষা, হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে দীর্ঘ মেয়াদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দেবে বাহিনী। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনে নির্বাচন আয়োজন ও গাজার পুনর্গঠনে অংশ নেবে।
তবে প্রস্তাবে সতর্ক করা হয়েছে, বাহিনী যদি কেবল গাজায় সীমিত থাকে, তবে পশ্চিম তীর ও গাজার মধ্যে স্থায়ী বিভাজন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি আছে।
এ পরিকল্পনায় ইসরায়েল বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, বিশেষ করে কাতারের সম্পৃক্ততা নিয়ে তাদের আপত্তি থাকতে পারে। কারণ খসড়ায় হামাসকে সরাসরি নিরস্ত্র করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা টনি ব্লেয়ারের সাম্প্রতিক পরিকল্পনার তুলনায় অনেক বেশি কঠোর।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ফরাসি প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন।
সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, আরব দেশগুলোকে যুক্ত করতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি ছিল। তিনি জানান, ফরাসি পরিকল্পনায় ইসরায়েলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি সেনাদের যাচাইবাছাই অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং এতে সরাসরি যুক্ত থাকবে জর্ডান ও মিসর। অর্থায়নের দায়িত্ব নেবে উপসাগরীয় দেশগুলো।
মাখোঁ জোর দিয়ে বলেন, এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো হামাসকে নিরস্ত্র ও বিলুপ্ত করা। তিনি বলেন, সমস্যার সমাধান একটাই—হামাসের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করা, তাদের যোদ্ধাদের ডিডিআর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে আসা এবং নিশ্চিত করা যে ভবিষ্যতে হামাস আর কখনো সরকারে থাকবে না।
তার ভাষায়, ‘এটি সম্ভব করতে হলে আন্তর্জাতিক বাহিনীকে অবশ্যই গাজায় উপস্থিত থাকতে হবে।’
মন্তব্য করুন