বিশ্বের সামরিক শক্তির পালাবদলে নতুন মাত্রা যোগ করছে চীন। শুধু অর্থনীতিতেই নয়, সামরিক শক্তির ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। সাম্প্রতিক সামরিক কুচকাওয়াজে দেশটির প্রদর্শিত নতুন অস্ত্রাগার ও যুদ্ধবিমান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
কুচকাওয়াজের শুরুতেই ৮০ দফা কামানের গোলা ছুড়ে সামরিক মহড়া উদ্বোধন করে চীন। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়ে নেয় অত্যাধুনিক সিএস-৫০০০ ড্রোন, যা এতদিন গোপনে রাখা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ সময় স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “চীনকে হেয় করার দুঃসাহস কেউ যেন না করে।” তার বক্তব্যে পরিষ্কার বার্তা ছিল— অস্ত্র ও প্রযুক্তিতে চীন আর পিছিয়ে নেই।
কিন্তু কুচকাওয়াজের মূল আকর্ষণ ছিল নতুন পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০ (J-20)। এটি বিশ্বের তৃতীয় স্টিলথ ফাইটার, যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ র্যাপ্টর ও এফ-৩৫ লাইটনিং টু-এর পর। জেংদু এয়ারক্রাফ্ট ডিজাইন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডেপুটি চিফ ডিজাইনার কং ফেং-এর মতে, জে-২০ এমনভাবে তৈরি যে শত্রুর রাডার ও প্রতিরক্ষা জাল ভেদ করে অদৃশ্যভাবে প্রবেশ করতে সক্ষম। এর উন্নত রাডার, ইনফ্রারেড সিগন্যাল এবং দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এটিকে একদিকে গোপনীয়, অন্যদিকে ভয়ংকর আক্রমণক্ষম করে তুলেছে।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে জে-২০ শুধু একটি বিমান নয়, বরং একটি সমন্বিত যুদ্ধব্যবস্থার অংশ। এটি প্রারম্ভিক সতর্কীকরণ বিমান ও ড্রোনের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে পারে, যা আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে বহুমাত্রিক সুবিধা এনে দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বহুদূর থেকে শত্রুকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার ক্ষমতা চীনের বিমানবাহিনীকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জে-২০-এর উন্মোচন শুধু চীনের সামরিক প্রযুক্তির উন্নতির প্রতীক নয়, বরং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে নতুন পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া স্টিলথ প্রযুক্তিতে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করলেও চীনের দ্রুত অগ্রগতি বিশ্ব সমরনীতির মানচিত্র পুনর্লিখনের বার্তা দিচ্ছে।
মন্তব্য করুন