রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে ঘটে যাওয়া ৮.৮ মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্প ও এর পরপরই সৃষ্ট সুনামি নিয়ে গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ভূমিকম্পটির মাত্রা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) একে আধুনিক ইতিহাসের ষষ্ঠ শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের অদূর দিয়েই বিস্তৃত রয়েছে সমুদ্র তলদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক এবং আন্তর্জাতিক ক্লাউড সার্ভিস অবকাঠামো। এমন শক্তিশালী ভূকম্পন ও তার জেরে সৃষ্ট সুনামির কারণে এসব অবকাঠামোর ওপর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে, সাবমেরিন কেবল ছিঁড়ে যেতে পারে, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট যোগাযোগে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ক্লাউড কম্পিউটিং সেবায় বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে।
তবে সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ভূমিকম্প ও সুনামির ধাক্কায় প্রযুক্তি খাতে কোনো বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিকম অপারেটর রোস্তেলেকম-এর নিয়ন্ত্রণাধীন সাবমেরিন কেবল লাইন, যা পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাটকা থেকে আনাডির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে, সেটি ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের একেবারে নিকটে অবস্থান করলেও এখন পর্যন্ত এর কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন দেখা যায়নি। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা সংযোগ বিচ্ছিন্নতার তথ্য জানায়নি।
এছাড়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমও সচল রয়েছে। প্রযুক্তিবিষয়ক প্রভাবশালী অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য রেজিসটার জানিয়েছে, তারা আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস (এডব্লিউএস), মাইক্রোসফট আজুর (আজুরে) এবং গুগল ক্লাউড-এর স্ট্যাটাস পেজ পর্যালোচনা করেছে এবং জাপানসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কোথাও তাদের সেবায় কোনো ধরনের ব্যাঘাতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি প্রযুক্তিগতভাবে একটি স্বস্তির খবর। কারণ বর্তমান বিশ্ব যেভাবে ক্লাউড নির্ভর হয়ে উঠেছে, তাতে এই ভূমিকম্প ও সুনামি যদি ওই সংযোগ ও ডেটা স্টোরেজ পরিকাঠামোতে আঘাত হানতো, তাহলে তা শুধু রাশিয়াই নয়, গোটা বিশ্বেই ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কার্যক্রমে বিপর্যয় নামিয়ে আনতে পারত।
তবে স্বস্তির পাশাপাশি সতর্কতা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। ভূমিকম্প-পরবর্তী আফটারশক এবং সুনামির আশঙ্কা এখনো কাটেনি। এ কারণে সাবমেরিন কেবল ও ক্লাউড অবকাঠামোর ওপর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট টেলিকম কোম্পানি ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতেও প্রযুক্তি পরিকাঠামো অক্ষত থাকায় বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন খাত আপাতত বড় ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। যদিও ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আরও উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন