শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২
মুতাছিম বিল্লাহ
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতে কতটা ধরাশায়ী হবে পাকিস্তান

ভারত পাকিস্তানের মানচিত্র ও নদীতে দেওয়া বাঁধ। ছবি : সংগৃহীত
ভারত পাকিস্তানের মানচিত্র ও নদীতে দেওয়া বাঁধ। ছবি : সংগৃহীত

জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত-পাকিস্তান। এ হামলার ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। অন্যদিকে এটিকে যুদ্ধের জন্য উসকানি হিসেবে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের সংবাদমাদ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত সরকার সম্প্রতি ১৯৬০ সালের ইন্দাস পানি চুক্তি ‘স্থগিত’ ঘোষণা করেছে। এতে করে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের পানিবণ্টন ব্যবস্থাকে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানের কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পানির সরবরাহে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।​

চুক্তির পটভূমি সিন্ধু চুক্তি ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, ৬টি নদীর মধ্যে ভারত পায় পূর্বের ৩টি নদী (রবি, বিয়াস, সুতলেজ) এবং পাকিস্তান পায় পশ্চিমের ৩টি নদী (ইন্দাস, ঝেলাম, চেনাব)। ভারত এই নদীগুলোর পানি সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করতে পারে, তবে পানি সংরক্ষণ বা প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না।​

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ভারতের কাশ্মীরের পাহালগামে ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে। পাকিস্তান এই সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য’ বলে অভিহিত করে এবং ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।​

পাকিস্তানের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব কৃষি : পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা মূলত পশ্চিমের নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল। পানি প্রবাহে সামান্য পরিবর্তনও ফসল উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।​

বিদ্যুৎ : পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ জলবিদ্যুৎ থেকে আসে। উজানে পানি প্রবাহ কমে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।​

সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ : পানি সংকট আন্তঃপ্রাদেশিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশের মধ্যে।​

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া : পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি বলেছেন, ‘সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত ​​বইবে।’

সিন্ধু নদী ডাকাতির চেষ্টা করছে ভারত—এমন মন্তব্য করে বিলাওয়াল বলেন, সিন্ধু সভ্যতার প্রকৃত উত্তরাধিকারীরা পাকিস্তানে বাস করেন। সিন্ধু সভ্যতার বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে পাকিস্তান কখনই নদীর ওপর তার দাবি ত্যাগ করবে না। ভারতকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘হয় জল, না হয় তোমাদের রক্ত​ এই নদীতেই প্রবাহিত হবে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সিন্ধু সভ্যতার উত্তরাধিকারী হওয়ার দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বিলাওয়াল পাল্টা বলেন, ‘তিনি (মোদি) বলছেন- তারা হাজার হাজার বছরের পুরনো সভ্যতার উত্তরাধিকারী। কিন্তু সেই সভ্যতা লারকানার মহেঞ্জোদারোতে অবস্থিত। আমরাই এর প্রকৃত রক্ষক এবং আমরা এটিকে রক্ষা করব।’

ভারতের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

সিন্ধু পানি চুক্তি কীভাবে আটকানো যায় তা নিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা তৈরি করেছে ভারত। দেশটির স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগার নদীর বাধগুলো পলিমুক্ত করে পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। ফলে পাকিস্তানের দিকে পানির প্রবাহ অনেকটা কমে যাবে। অন্যদিকে পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বিতস্তার উপনদীর উপর তৈরি কিষেণগঙ্গা এবং চন্দ্রভাগার উপনদীর ওপর নির্মীয়মাণ রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ করে আসছে। ২০১৬ সালে এ বিষয়ে প্রথম আপত্তি জানায়। এরপর থেকে এ বিষয়ে টানপড়েন চলে আসছে। সিন্ধু চুক্তি স্থগিত হলে পাকিস্তানের এ আপত্তি উড়িয়ে দেওয়া ভারতের জন্য আরও সহজ হবে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারত এ নদীগুলোর ওপর আরও বেশি বাঁধ দিতে পারে। এছাড়া আরও জলাধান তৈরি করে সিন্ধু, বিসস্তা এবং চন্দ্রভাগার পানি আটকে রাখার ব্যবস্থা করতে পারে। তবে এখনই এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সম্পর্ক আরও অবনতি হলে এসব দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে দেশটি।

আন্তর্জাতিক চাপ

সিন্ধু চুক্তি বাতিলের বিষয়ে পাকিস্তান তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। দেশটি এটিকে অ্যাক্ট অফ ওয়ার বলে উল্লেখ করে আসছে। অন্যদিকে এ নদী ও তার উপনদীর ৮০ শতাংশ পানির ওপর পাকিস্তানের অধিকার রয়েছে। ভারত এর মাত্র ২০ শতাংশ পানি পায়। পাকিস্তানের কৃষিও এ পানির ওপর নির্ভরশীল।

চুক্তি অনুসারে, ভারত বা পাকিস্তান নিজেদের প্রয়োজনে এ পানি ব্যবহার করে। কোনো অবস্থাতেই তা আটকে রাখতে পারবে না। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সাহায্য চাইতে পারে পাকিস্তান। এজন্য ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপ আসতে পারে। ফলে এমন হলে কী ভাষায় জবাব দেওয়া হবে তারও প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। এছাড়া এ পদক্ষেপ নেওয়ার কারণও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছানোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: কাশ্মীর হামলা
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অযোগ্য নেতৃত্বে দায়িত্বশীলতা আশা করা বোকামি : জবি ছাত্রশিবির সভাপতির প্রতিবাদ

ইরানে ব্যবহৃত বাঙ্কার বোমা পরীক্ষার ভিডিও প্রকাশ করল যুক্তরাষ্ট্র

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান

শেখ হাসিনা পালানোর ব্রেকিং নিউজ দিয়ে অ্যাওয়ার্ড পেলেন প্রেস সচিব

৮ আগস্ট বিপ্লব বেহাত হওয়ার দিবস : জুলাই ঐক্য

ফেসবুক লাইভ করে আত্মহত্যার চেষ্টা শ্রমিকদল নেতার

মিথ্যা মামলা-গ্রেপ্তার কমাতে সরকারের উদ্যোগ

বিএসপির মহাসচিব আব্দুল আজিজের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

ইসরায়েলি গুপ্তচর ছাড়াও যারা ইরানকে ঘায়েল করছে

লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি, টাকা-স্বর্ণালংকার লুট

১০

যে মন্দকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেই ভালো মানুষ হয় : আবদুস সালাম 

১১

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পানি, মাস্ক ও কলম দিলেন বিএনপি নেতা

১২

প্রবেশপত্র নিতে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা দেখেন কলেজ বন্ধ

১৩

বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ আয়োজনে নেপালে হতে যাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট ক্যাম্প

১৪

‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না’

১৫

‘কঠিন দিন’ পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ

১৬

গত তিন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত

১৭

বিএনপি মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায় : আমিনুল হক

১৮

পচা ও বাদুড়ে খাওয়া আম যাচ্ছে জুস ফ্যাক্টরিতে

১৯

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় আইসোলেশন সেন্টার চালু করল চসিক

২০
X