সৌদি আরবের সঙ্গে নতুন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে পাকিস্তান। মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের এই উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও চুক্তিতে সরাসরি পারমাণবিক প্রযুক্তি বা অস্ত্র হস্তান্তরের কথা নেই, তবে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে— প্রয়োজনে রিয়াদ পারমাণবিক সুরক্ষার সুবিধা পেতে পারে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ জিও টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নতুন চুক্তির আওতায় প্রয়োজনে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি সৌদি আরবের জন্য সহজলভ্য করা হবে। তার এই বক্তব্যকে অনেকেই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সৌদি আরবকে পারমাণবিক সুরক্ষার প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এ ধরনের ঘোষণা শুধু দুই দেশের দীর্ঘ সামরিক সম্পর্কের গভীরতাকেই ফুটিয়ে তোলে না, বরং এটি ইসরায়েলের জন্যও একটি পরোক্ষ বার্তা। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলকেই একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি দোহায় ইসরায়েলি হামলায় ছয় হামাস নেতা নিহত হওয়ার পর উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা উদ্বেগ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, এক দেশের ওপর হামলা হলে তা অপর দেশের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য হবে। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ স্পষ্ট করেছেন—এখানে কোনো নির্দিষ্ট দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তার ভাষায়, “এটি পারস্পরিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা। যদি কোনো দিক থেকে আগ্রাসন হয়, তবে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পর্যবেক্ষণ চুক্তিতে দুই দেশই স্বাক্ষর করেছে। তবে পাকিস্তানি মন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে আইএইএ কোনো মন্তব্য করেনি। আসিফ সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের ‘অপ্রকাশিত’ পারমাণবিক কর্মসূচির সমালোচনা করেন এবং বলেন, দেশটি আইএইএকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানায় না। ইসরায়েলও এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
চুক্তি স্বাক্ষরের এক সপ্তাহ আগে দোহায় হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলা হয়। এরপর থেকেই উপসাগরীয় দেশগুলো নিজেদের প্রতিরক্ষা জোরদারে নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রেক্ষাপটেই পাকিস্তান-সৌদি চুক্তি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চুক্তিতে অন্য দেশ যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে কি না— জানতে চাইলে আসিফ বলেন, “দরজা খোলা রয়েছে।” পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারও একই মন্তব্য করেন এবং জানান, ইতোমধ্যেই কয়েকটি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে।
সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পর্ক নতুন নয়। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফিরোজ হাসান খান স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তান যখন পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে, তখন রিয়াদ উদারভাবে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছিল।
পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল প্রেরণা ছিল ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রতিবেশী এই দুই দেশ এর আগে একাধিক যুদ্ধ করেছে এবং সম্প্রতি কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার পর আবারও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের হাতে আনুমানিক ১৭২টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে, আর পাকিস্তানের হাতে রয়েছে ১৭০টি।
তাছাড়া পাকিস্তানের হাতে আছে শাহীন-৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। এর পাল্লা সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার, যা ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।
সূত্র : এপি
মন্তব্য করুন