প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ও তাকে নিয়ে সরকারি প্রতিবেদন- এই দুটো বাজারে আসার পর বাংলাদেশ অপেক্ষায় ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনী নতুন করে লেখার ও দেখার। বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনই বরাবরের মতো তার কাঁধে সেই গুরুদায়িত্ব নিয়ে একেবারে নতুন আঙ্গিকে বঙ্গবন্ধুকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।’
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মেলনী, বাংলাদেশ চর্চা ও অনন্যার যৌথ আয়োজনে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচিত ও সম্পাদিত দুটি গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য জীবনীগ্রন্থের সঙ্গে মুনতাসীর মামুন রচিত জীবনীগ্রন্থের কয়েকটি বড় অমিল আছে। পুনরাবৃত্তির দুষ্টচক্র এড়িয়ে মুনতাসীর মামুন একেবার তরতাজা তথ্য প্রদান করেছেন। কিন্তু তার গ্রন্থের শক্তির জায়গা অন্যত্র। আগের যারাই লিখেছেন তারা বঙ্গবন্ধুকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরেছেন। এটা জরুরি কাজ বটে, মুনতাসীর মামুন সেই কাজ নতুন প্রজন্মের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বরঞ্চ প্রশ্ন তুলেছেন উলটো জায়গা থেকে। তৎকালে শেখ মুজিবের মতো আরও অনেক নেতা থাকলেও, কেন আর কেউ ‘বঙ্গবন্ধু’ হতে পারলেন না? কেন শেখ মুজিবই ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে উঠলেন?’
মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আত্মজীবনী ব্যবহৃত হয়। আত্মজীবনী লেখা হয় স্মৃতির ওপর নির্ভর করে এবং যে বয়সে সাধারণত সবাই আত্মজীবনী লেখেন সে বয়সে স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা করবে না এমন কথা বলা যায় না। ঘটনার সঙ্গে স্মৃতিও বদলে যায়। আত্মজীবনীকার যেভাবে জীবন বা সমাজকে দেখেন, যিনি সামাজিক বা রাজনৈতিক ইতিহাস লিখেছেন তিনিও কি ওইভাবে জীবন বা সমাজেক দেখেছেন? যদি তা-না হয়, তাহলে যত্রতত্র উদ্ধৃতির ব্যবহার বিভ্রমের সৃষ্টি করবে মাত্র।’
শাহরিয়ার কবির মুনতাসীর মামুনের দুটো গ্রন্থের উচ্চকিত প্রশংসা করে বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধীরা বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। এগুলোর মোক্ষম জবাব দিতে হলে মুনতাসীর মামুনের এই গ্রন্থগুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।’
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রাক্তন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা বির্নিমাণে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে।’
ড. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখন যেসব গ্রন্থ লেখা হচ্ছে তার খুব কম গ্রন্থই বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু প্রভৃতি উৎস থেকে তথ্যের সন্নিবেশ করা হয়েছে।’
ড. চৌধুরী শহীদ কাদের মুনতাসীর মামুনের দুটো গ্রন্থ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসবিদ্যার ইতিহাসে খুব অল্প ব্যক্তি পাওয়া যায় যারা একই সঙ্গে ইতিহাসের দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং ইতিহাস চর্চা দুটো একই সঙ্গে সমানতালে করেছেন। দুই বাংলা মিলিয়ে এই অল্প কয়েকজন ইতিহাসবিদের মধ্যে সর্বাধিক অগ্রগণ্য হচ্ছে মুনতাসীর মামুন।’
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ ড. মো. মাহবুবর রহমান এবং গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি সম্পাদক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবন্ধকার ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রাক্তন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
প্রকাশিত প্রথম বইটির নাম ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন’। দ্বিতীয়টি মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রবিষয়ক সবচেয়ে বড় সংকলন মিডিয়া অ্যান্ড দ্য লিবারেশন ওয়ার গ্রন্থমালার ৩০তম গ্রন্থ। বই দুটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা অনন্যা।
মন্তব্য করুন