সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল

পানি ডিঙিয়ে পরীক্ষা দিতে যান শিক্ষার্থী। ছবি : কালবেলা
পানি ডিঙিয়ে পরীক্ষা দিতে যান শিক্ষার্থী। ছবি : কালবেলা

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড, পুলিশ লাইন্সসহ সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে আমন বীজতলা, আউশ ধান, সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘের। তবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি মৎস্য ও কৃষি বিভাগ।

এ ছাড়া শহর ও আশপাশের গ্রামের শতাধিক স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে আছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, বিশেষ করে চলমান এইচএসসি ও অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা।

অভিযোগ উঠেছে, সুষ্ঠু ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ নিম্ন এলাকার দোকানপাট, বসতবাড়ি, রান্নাঘর ও বাড়ির আঙিনা ও রাস্তাঘাটে পানি জমে আছে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। চরম দুর্ভোগে রয়েছে এলাকাবাসী।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, গত ১০ দিতে সাতক্ষীরায় ৩৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ মিলিমিটার। পরিমাণ কমলেও এই মাসজুড়েই বৃষ্টিপাত হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোলের মধুমোল­আরডাঙি, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজারবাগান, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরার মতো নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা। বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ইটাগাছা বিলপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, ঘের মালিকরা বিলে পানি আটকে রেখেছে। বাইপাসের স্লুইস গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি খাল দিয়ে নদীতে নামতে পারছে না। ফলে ঘরে-পথে সবখানে পানি।

বদ্দিপুর কলোনির গৃহবধূ শাহানারা বেগম বলেন, ১০ বছর ধরে এমন হয়, কিন্তু কোনো সমাধান নেই। এবার রান্না ঘরে পানি ঢুকে হাঁড়ি-পাতিল নষ্ট। পোকা-মাকড় ঘরে ঢোকায় রাতে ঘুমাতে পারছি না। সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ জায়গায় থাকতে হচ্ছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ লাইন্স। পুলিশ লাইন্সের প্রবেশ গেট থেকে শুরু করে রিজার্ভ অফিসের সামনের রাস্তা, ব্যারাক সংলগ্ন রাস্তা, অস্ত্রাগার আঙিনা, রেশন স্টোরের আঙিনায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন পুকুরও টইটুম্বুর পানিতে ভরে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ লাইন্সে টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। পানি জমে থাকায় সেবা প্রত্যাশীদের অফিসে আসতে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং নোংরা পানিতে চলাফেরার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়তে হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। শুধু থেমে নেই পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন। দেশের মানুষের নিরাপত্তা পালনে তারা সর্বদা অবিচল।

এদিকে, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ যেন এক জলাশয়। কলেজে প্রবেশ করতেই কাদামাটি ও পচা পানির গন্ধে নাক চেপে ধরতে হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘প্রতিদিন ভেজা জামা-কাপড়ে পরে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। মনে হয় নদী পার হচ্ছি।’

পাটকেলঘাটা আমিরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস্ স্কুল, বদ্দিপুর প্রাইমারি স্কুলসহ বহু প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ভেলা, বাঁশ বা জুতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। স্কুল মাঠগুলোতেও জমেছে পচা পানি। এরই মধ্যে বিদ্যায়লয়গুলোতে চলছে অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষা।

কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত বৈদ্য বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয়ের আঙিনায় হাঁটাচলা করাই দায়। শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে পরীক্ষা দিচ্ছে।

জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে শহরতলির উত্তর কাটিয়া, ইটাগাছা, কুখরালি, ব্রহ্মরাজপুর, ঝাউডাঙ্গা, ফিংড়ি, আগরদাঁড়ি, বাঁকাল, তালতলা এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, প্রতি বছর এমন হয়, কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান নেই। কলেজের ভেতরেও ড্রেনেজ নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ জানান, অতিবৃষ্টিপাতের কারণে গত বছরের ন্যায় এ বছরও সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ইটাগাছা বিলে গিয়ে ঘের মালিকদের তিন দিনের মধ্যে অবৈধ নেটপাটা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। জলবদ্ধতা নিরসনে সাতক্ষীরা খালগুলো খনন করা হয়েছে। শহরের প্রাণ সাহেরের খাল, বেদনা নদী ও কুঞ্জুর স্লুইচগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় বিকেলের মধ্যে জলাবদ্ধ এলাকার পানি প্রাণ সায়েরের খাল দিয়ে বেদনা নদীতে পড়ে তা নিষ্কাশন হবে। এ ব্যাপারে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মনির হোসেন জানান, এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন বীজতলা, আউশ ধান ও সবজির ক্ষেত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন বীজতলা, বরবটি, সিম, শসাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কী পরিমাণ ও কত কোটি টাকার ফসল ও কৃষকের ক্ষতি হয়েছে সে ব্যাপারে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। পানি নামলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা সম্ভব হবে। এর জন্য কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, শুধু উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে জলাবদ্ধতার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য স্থানীয়দের অংশগ্রহণে বাঁধ নির্মাণসহ সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাংসপেশিতে চোট জাকেরের

জবিতে ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে ৩ দাবিতে বিক্ষোভ

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ / দেশে ৩৩০ দিনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা আড়াই হাজার

বগুড়ায় আ.লীগ নেতার কারাদণ্ড

ফিরেই ঝলক, সাকিবের ব্যাটে দুর্দান্ত ফিফটি

রংপুর ইপিজেড বাস্তবায়ন নিয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ

গায়েবি মামলার আতঙ্কে ২০ গ্রামের মানুষ

পিআর পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান উদ্বেগজনক : মামুনুল হক

সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মিলল ফায়ার সার্ভিসের গাভি

চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন আ স ম রব

১০

মহড়া চলাকালে মালয়েশিয়ায় পুলিশের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

১১

কেন্দ্রের ভুলে এসএসসিতে কাটা গেল ২৫ নম্বর!

১২

আগামী দিনেও যেকোনো সমস্যায় কাজ করবে বৈছাআ : এসএম সুইট

১৩

প্রস্তাবিত বগুড়া সিটির সঙ্গে ৬ ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্তির চিন্তা

১৪

নিশাঙ্কা-মেন্ডিসের তাণ্ডবে শ্রীলঙ্কার দাপুটে জয়

১৫

বোরকা পরে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন

১৬

টাস্কফোর্সের অভিযানে ৩ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ

১৭

সাভারে একদিনে ১ লাখ গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ

১৮

ভাঙা পা নিয়ে বিজয় মিছিলে যান জুলাই যোদ্ধা ফখরুল

১৯

এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা বরখাস্ত

২০
X