ফরহাদ সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জিডিতে ভরসা, জিডিতেই নিরাশা

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

নিখোঁজের পর সাধারণ ডায়েরিতেই (জিডি) ভরসা ভুক্তভোগীদের। এতে মনের দিক থেকে কিছুটা সান্ত্বনা পান। আবার নিরাশাও। তবে নিখোঁজ কিংবা হারিয়ে যাওয়া সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভবপর হয় না। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের সংখ্যা বেশি।

পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, নিখোঁজের ক্ষেত্রে নিখোঁজধারী ব্যক্তির মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক থাকাটা জরুরি। এ ক্ষেত্রে লোকেশন জানতে সহজ হয়। যদি মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ম্যানুয়ালি চেষ্টা চালানো হয়ে থাকে। এতে নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে অনেক সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষের সহনশীল হতে হয়।

তবে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। এক্ষেত্রে ইএমআই পাল্টানো হলে এর হদিস মিলে না। পাশাপাশি ইএমআই না পাল্টালে যতক্ষণ পর্যন্ত হারানো মোবাইলটি চালু করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত লোকেশন পাওয়া যায় না। আবার আইফোন জাতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের মোবাইলগুলো ছিনতাই বা হারানোর পর সেগুলো পার্ট টু পার্ট করে ফেলে। তখন আর সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে মানুষের ক্ষেত্রে আবার এরকম ঘটে না। ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যর্থ হলে ম্যানুয়ালি চেষ্টা চালানো হয়। সাম্প্রতি সময়ে মোবাইল ছিনতাই, হারানোর ঘটনা বেশি। সিএমপির প্রত্যেক থানায় কমবেশি মোবাইল ফোন চুরি, ছিনতাই, হারানোর অভিযোগ রয়েছে। তবে উদ্ধারের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা পুলিশ এগিয়ে।

অভিযোগ আছে, যে পরিমাণ চুরি, ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় সে অনুপাতে চোর, ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয় না। ছিচকে চোর, ছিনতাইকারীরা গ্রেপ্তার হলেও মাসখানেক পর আইনের ফাঁক-ফোকরে কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। রাঘব বোয়ালরা আড়ালেই থেকে যায়।

আগ্রাবাদের বাসিন্দা সুমন কালবেলাকে জানান, দুটি মোবাইল হারানোর জিডি করা হয়েছিল ডবলমুরিং থানায়। একটির হারানোর বয়স প্রায় ৮ মাস। অপরটি তিন মাস। দুটির একটিও উদ্ধার হয়নি। উদ্ধারকারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলে ‘আমরা দেখছি, চেষ্টা চলছে, মোবাইলটি এখনো চালু হয়নি’।

মুহুরী পাড়ার বাসিন্দা মামুন কালবেলাকে জানান, কোতোয়ালি থানার মোড়া অতিক্রম করতে তার মোবাইল ফোন সিটিবাস থেকে চুরি হয়ে যায়। পরে কোতোয়ালি থানায় হারানো জিডি করা হয়। কিন্তু ৫ মাস পার হলেও হারানো মোবাইল উদ্ধারে কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

সিএমপির থানাধীন মোবাইল উদ্ধারকারী কর্মকর্তা জানান, মোবাইল ফোন হারানোর পর সেটি ইএমআই ভাঙানো না হলে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে সেটটি চালু থাকতে হবে। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকারের ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগে। তাছাড়া পরিপূর্ণ পাওয়া সম্ভব হয় না।

নৌ থানার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সাগরের মধ্যে অনেক সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। তখন দুর্ঘটনা কবলিতদের উদ্ধার করতে কিংবা খোঁজ পেতে বেগ পেতে হয়। তখন ডিজিটালি প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে মেনুয়ালি চেষ্টা চালানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নিখোঁজদের খোঁজ পেতে সময় লেগে যায়।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আলী আকবর (৪৯) নিজে ও তার অধীনে থাকা বোটের মাঝি আবু তাহের (৫৫), জামাল (৪৫), রুবেলসহ (৩৫) মোট ১৪-১৫ জন স্টাফ নিয়ে বাকলিয়া থানাধীন নতুন ফিশারিঘাট সংলগ্ন কর্ণফুলী নদী থেকে সাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

ওই রাতেই প্রায় ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে সেলিনা আক্তারের সঙ্গে আলী আকবরের সর্বশেষ কথা হয়। তখন তিনি জানান, সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন এবং দোয়া করতে বলেন। এরপর থেকে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সাগরে অবস্থানকালে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় সেলিনা আক্তার ১০-১১ দিন অপেক্ষা করেন। এরপরও মাঝি ও স্টাফদের মোবাইল নম্বরে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বর্তমানে তার স্বামীসহ মোট ১৫ জন এবং বোটটি নিখোঁজ রয়েছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট নৌ থানায় স্বামীর সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন স্ত্রী সেলিনা আক্তার।

জিডিতে সেলিনা আক্তার উল্লেখ করেন, তার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। তার নিজস্ব মালিকানাধীন ‘এফবি খাজা আজমীর’ নামের একটি ফিশিং বোট রয়েছে, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর এফ-৯৭৫৪ এবং ইঞ্জিন নম্বর ৪৮২১৫, মডেল এইচও৭ডি, বিএইপি ১৯৫, গ্রস টন ১৬, রেজিস্টার্ড টন ৯। বোটটি প্রায়ই সাগরে ইলিশ মাছ ধরতে যায় এবং মাছ নিয়ে ফিরে আসে।

কিন্তু গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আলী আকবর (৪৯) নিজে ও তার অধীনে থাকা বোটের মাঝি আবু তাহের (৫৫), জামাল (৪৫), রুবেলসহ (৩৫) মোট ১৪-১৫ জন স্টাফ নিয়ে বাকলিয়া থানাধীন নতুন ফিশারিঘাট সংলগ্ন কর্ণফুলী নদী থেকে সাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

ওই রাতেই প্রায় ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে সেলিনা আক্তারের সঙ্গে আলী আকবরের সর্বশেষ কথা হয়। তখন তিনি জানান, সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন এবং দোয়া করতে বলেন। এরপর থেকে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে নগরের সদরঘাট নৌ থানার জিডি তদন্ত কর্মকর্তা মো. আরিফ কালবেলাকে বলেন, ভুক্তভোগী নারী সেলিনা আক্তার তার স্বামীর খোঁজে থানায় জিডি করেছেন। একই বোটে আরও ১৫ জন রয়েছেন। কিন্তু তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আমরা ম্যানুয়ালি চেষ্টা চালাচ্ছি।

সদরঘাট নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘এফবি খাজা আজমীর’ নামের একটি বোটসহ ১৫ জন স্টাফ নিখোঁজের বিষয়ে সেলিনা আক্তার নামে এক নারী জিডি করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থার কাছে আমরা খবর পৌঁছে দিয়েছি। কোনো থানা এলাকায় তাদের সন্ধান পাওয়া গেলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিবন্ধন পেল এনপিবি নিউজ

ট্রফি নিয়ে টানাপোড়েন: এসিসি বৈঠকে মুখোমুখি বিসিসিআই-নকভি

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে ৬৫ পদে নিয়োগ, আবেদন যেভাবে

বিএনপি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে : ব্যারিস্টার অসীম

বাঁশ বাগানে কান্নার শব্দ, খুঁজতে ‍গিয়ে যা দেখা গেল

শহীদ তাজউদ্দীন স্মৃতি পার্ক ইয়ুথ ক্লাবকে হস্তান্তর, ডিএনসিসিকে আইনি নোটিশ

বরিশালে একদিনে ডেঙ্গুতে ৩ মৃত্যু

প্রতারক থেকে সাবধান থাকার অনুরোধ ফায়ার সার্ভিসের

‘ইয়াং লাইফ’ বিউটি পার্লারের মালিক শান্তার মরদেহ উদ্ধার

লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ৫০০ প্ল্যান্ট স্থাপন করবে পিকেএসএফ

১০

মারধরের মামলায় এএসপি নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে সমন জারি 

১১

টানা পাঁচদিন পর রাজশাহীতে দূরপাল্লার বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার

১২

শেষ পর্যন্ত বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেওয়া হচ্ছে না সেই ১৫ ক্লাবের

১৩

এবার প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগেও নতুন নিয়ম

১৪

আইফোনের নতুন মডেলে যেসব ত্রুটির অভিযোগ তুললেন ব্যবহারকারীরা

১৫

ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন বিবেক

১৬

দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে ষড়যন্ত্র করছে একটি চক্র : জুয়েল

১৭

ট্রাম্প কি আবারও ফিলিস্তিনিদের জন্য ফাঁদ পাতলেন?

১৮

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আলভী, দোয়া চাইলেন ভক্তদের

১৯

চিকিৎসার নামে প্রতারণা / জিন দিয়ে ‘অপারেশন’, ইনজেকশন হয় আঙুল দিয়ে

২০
X