মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রাতের আধারে রাবার বাগান থেকে গাছ পাচারের চেষ্টার সময় গাড়িসহ চালককে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে ভাটেরা ইউনিয়ন থেকে তাকে আটক করে বনবিভাগ ও থানা পুলিশ। এ সময় ২ হাজার ৪০০ কাঠের পিছ জব্দ করা হয়।
কুলাউড়া বনবিভাগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের জুনেদের করাতকল থেকে একটি কাভার্ডভ্যানে ভাটেরা রাবার বাগানের চিরাই গাছ লোড করা হচ্ছিল। এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে গিয়ে অভিযান চালান কুলাউড়া বনবিভাগের গাজীপুর বিট কর্মকর্তা মো. আহমদ আলী ও কুলাউড়া থানার এসআই দেবাশীষ। পরে তারা চালক মিনহাজসহ গাড়িটি আটক করে থানায় নিয়ে যায়। জব্দ হওয়া কাঠের পরিমাণ ২৫৮.৩৩ ফুট। যার বাজারমূল্য প্রায় অর্ধ লাখ টাকা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভাটেরা ইউনিয়নের কলিমাবাদ গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম ও একই গ্রামের সাজ্জাদ মিয়ার ছেলে নজরুল মিয়া মিলেমিশে রাবার বাগানের গাছ এনে মধ্যরাতে করাতকলে চিরাই করে গাড়িতে লোড করছিলেন। কামরুল ইসলাম ও নজরুল মিয়া সম্পর্কে একে অপরের জামাই শশুর।
ভাটেরা রাবার বাগান সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ভাটেরা রাবার বাগানে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ গাছ রয়েছে। যার বেশির ভাগই উৎপাদনশীলতা হারিয়েছে। এসব গাছ কেটে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে সরবরাহ করেন ঠিকাদার। সম্প্রতি বাগানের জীবনচক্র হারানো প্রায় ৮ হাজার ৩০০টি গাছ বিক্রয়ের জন্য নতুনভাবে দরপত্র আহবান করা হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দরপত্রের বাইরেও বাগান থেকে নিয়মিত গাছ পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জীবনচক্র শেষ হয়ে যাওয়া গাছের সঙ্গে উৎপাদনশীল গাছও কর্তন করা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। বিকেল ৫টার পর বাগান থেকে গাছ পরিবহন নিষেধ থাকলেও এসব কর্তন গাছ রাতের আঁধারে গাড়ি বোঝাই করে পাচার করা হচ্ছে। জ্বালানি কাঠের আড়ালে লগ-গোল প্রকৃতির কাঠ ও উৎপাদনশীল গাছ পাচার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে চিরাই কাঠ পাচারের বিষয়টি স্থানীয়রা বাগান ব্যবস্থাপককে জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেননি। অথচ রাবার বাগানের অফিস থেকে ওই করাতকলের দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে দুটি পিকআপ ভ্যান বোঝাই কাঠ পাচারের সময় জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় বাগানের তৎকালীন ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হক বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছিলেন।
থানায় আটক গাড়িচালক মিনহাজ বলেন, ঢাকা গাজীপুর থেকে শাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি আমার গাড়ি ভাড়া করেন গাছ পরিবহন করার জন্য। তিনি আমাকে জানান নজরুল ও কামরুল নামে ভাটেরার দুই জামাই-শশুর আমাকে গাড়িতে কাঠ লোড করে দিবে। আমি ওই জামাই (কামরুল) এর সঙ্গে ফোনে কথা বলে কাঠ নিতে আসি। তখন তিনি আমাকে বলেন গাছের সব বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে তারা বরমচালে করাতকলে হঠাৎ পুলিশ দেখে সেখান থেকে গাড়ি রেখে সটকে পড়ে।
অভিযুক্ত নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম বলেন, বাগানের কোনো গাছ কেনাবেচাতে আমি নাই। একমাসে আগে বাগান থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে জ্বালানি কাঠ কেনেন আমার শশুর নজরুল ইসলাম। পরে তিনি ওই কাঠগুলো ঢাকার এক লোকের কাছে বিক্রি করেন। লোকেশনের জন্য হয়তো ওই কাঠের মালিক চালকের কাছে আমার মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন। ওই লোক বাগান থেকে জ্বালানি কাঠগুলো চিরাই করার জন্য করাতকলে নিয়ে রাখেন। করাতকলে এখনো অনেক কাঠের লগ ও কাঠের স্তুপ রয়েছে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে কোনো লগ নেই, সব জ্বালানি কাঠ।
ভাটেরা রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মো. মফিজুর রহমান বলেন, জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করবো। গাড়িতে শুধু রাবার গাছ নয় আকাশী গাছও রয়েছে। তবে গাছগুলো অনেক পুরাতন।
কুলাউড়া বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বরমচালে জুনেদের করাতকল থেকে গভীর রাতে চিরাই কাঠ কাভার্ডভ্যানে লোড হচ্ছে খবর পেয়ে বিট অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। তিনি কুলাউড়া থানার টহল পুলিশের সহযোগিতায় রাবার চিরাই কাঠের গাড়ি আটক করে কুলাউড়া থানায় নিয়ে এসেছেন। পরে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য করুন