ঝালকাঠির রাজাপুরে গত আড়াই মাসে পল্লীবিদ্যুতের ১১টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন না করায় অন্তত দুই শতাধিক পরিবার অন্ধকারে জীবনযাপন করছেন। নতুন ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, লোডশেডিংয়ের সময় ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে যাচ্ছে। যা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এর সঙ্গে পল্লীবিদ্যুতের কর্মচারীরা জড়িত। কিছুদিন পর পর ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রতিরোধে বা চুরি ঠেকাতে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
ট্রান্সফর্মার চুরি হলে পল্লীবিদ্যুতের অফিস থেকে গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে স্থাপন করতে হয়। ট্রান্সফর্মার বিক্রির অন্যতম একটি কৌশল হলো চুরি। চোরের কাছে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি অসহায়। আমাদের অনেক দিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফ্রিজের মাছ, গোশতসহ বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় চরম বিঘ্ন ঘটে।
উপজেলার মধ্য চাড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, কয়েকদিন আগে মধ্য চাড়াখালীর ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে অন্তত ৩৫ পরিবার বিপাকে পড়েছে।
নিমহাওলা এলাকার হিরন খান বলেন, গালুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খায়ের হাট নিমহাওলা এলাকার ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এখানেও প্রায় ১৫ পরিবারেরও বেশি পরিবার ভোগান্তিতে পড়েছে।
সত্যনগর তুলাতলা এলাকার গৃহবধূ বলেন, সত্যনগর তুলাতলা এলাকার ট্রান্সফর্মার চুরি করে নিয়ে গেছে চোর। অনেক পরিবার অন্ধকারে রয়েছে। চরম ভোগান্তিতে থাকলেও নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হচ্ছে না। টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনতে হবে বলে জানিয়েছে পল্লীবিদ্যুতের লোকজন।
বাগড়ি বাঁশতলা গ্রামের রিংকু সিকদার বলেন, বাগরি বাঁশতলা গ্রামের ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে যাওয়ায় ৪৫ জন গ্রাহককে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনতে হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ অন্ধকারে থাকতে হয়েছে। লাইন চালু থাকাকালীন সাধারণ মানুষের পক্ষে ট্রান্সফর্মার চুরি করা সম্ভব নয়। পল্লীবিদ্যুতের কর্মচারীরা জড়িত রয়েছে।
রাজাপুর পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দুটি, ফেব্রুয়ারি মাসে তিনটি ও চলতি মার্চ মাসে এ পর্যন্ত ছয়টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে।
পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে ঝালকাঠি পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের (রাজাপুর সাব অফিস) এজিএম মধুসূদন রায় বলেন, বর্তমানে চারটি স্থানের ট্রান্সফর্মার চুরি হওয়ার পর নতুন করে স্থাপন করা হয়নি। এতে অন্তত দেড় থেকে ২০০ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ট্রান্সফরমার চুরি হলে প্রথমবার অর্ধেক ও দ্বিতীয়বার সম্পূর্ণ টাকা গ্রাহকদের দিতে হয়। এটা কষ্টের বিষয়। চুরি ঠেকাতে গ্রাহকদের সচেতনতার পাশাপাশি পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া চুরি ঠেকাতে মাইকিং করা হবে। এ বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও জরুরি। পুলিশ প্রশাসনেরও সহযোগিতা চাওয়া হবে।
রাজাপুর থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, পল্লীবিদ্যুতের পক্ষ থেকে ট্রান্সফর্মার চুরির বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রান্সফর্মার চুরি ঠেকাতে পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চোরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন