আরিফুর রহমান
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এক জেলায় পাঁচ সাগর

দিনাজপুরের রামসাগর। ছবি : কালবেলা
দিনাজপুরের রামসাগর। ছবি : কালবেলা

উত্তর বঙ্গের অন্যতম জেলা দিনাজপুর। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিক্ষায় অনেকটা এগিয়ে। বাংলাদেশের পর্যটনের বিশেষ কিছু আকর্ষণ আছে এই জেলায়। আছে রাজার আমল থেকে চলে আসা পাঁচটি ঐতিহ্যবাহী দিঘি। যেগুলো মূলত ‘সাগর’ নামে পরিচিত। শহরের অল্প দূরে অবস্থিত এই সাগর দেখতে অনেকে আসেন। দিঘিগুলো যথাক্রমে রামসাগর, সুখসাগর, মাতাসাগর, আনন্দ সাগর ও জুলুম সাগর।

রামসাগর : বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম দিঘি রামসাগর। সাগর নয় তবুও গভীরতা আর বিশালতার কারণে ‘সাগর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। রাজা রামনাথ এলাকার কৃষকদের চাষাবাদের লক্ষে এই দীঘি খনন করেছিল। প্রচলিত আছে এই দীঘি খননের পরেও পানি ছিল না। পরে রাজা স্বপ্নে দেখেন নিজ পুত্রকে বলি দিলে পানি উঠবে। কৃষকদের জন্য রাজা পুত্র রামকে বলি দেন। তারপর থেকেই দিঘির নাম রামসাগর।

অনেকে বলেন এটা একটা দীঘি নয়, অনেক দিঘির ফলে এমন বড় দিঘি তৈরি হয়েছে। সাগরের পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল ও মনোরম পরিবেশের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে একটি চিড়িয়াখানা।

দিনাজপুর জেলা সদর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে রামসাগরের অবস্থান। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩১ মিটার, প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা ১৩ দশমিক ৫০ মিটার।

ইতিহাসবিদদের মতে, দীঘিটি খনন করতে তৎকালীন প্রায় ৩০ হাজার টাকা এবং ১৫ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল। রাজা রামনাথের আমলে পলাশী যুদ্ধের আগে (১৭৫০-১৭৫৫) এই দিঘি খনন করা হয়।

সুখসাগর : দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে এটি অবস্থিত। চারদিকে শাল ও আকাশমণি বাগান আর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ যেন শহরের ব্যস্তময় জীবনে একটু শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেয়।

স্বচ্ছ জলরাশি, দিঘিতে মাছের সাঁতার কাটা ও লাফালাফি এই সাগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। নৌকা ও স্পিডবোটে চড়ে সাগরে ভ্রমণের কিছুটা স্বাদও নেওয়ার সুযোগ আছে এখানে। সাগরের পাড় যেন ছোট একটা পাহাড়ের মতো। শীতের মূল আকর্ষণ অতিথি পাখি।

সুখসাগর দিনাজপুরের মানুষসহ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এখানে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ হচ্ছে।

মাতাসাগর : রাজা রামনাথের সময়ে খনন করা হয় মাতাসাগর। সুখসাগর থেকে উত্তরে এই দিঘির অবস্থান। দিনাজপুরের সদর উপজেলায় ৪৫ দশমিক ৬০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই সাগর পাড়ের উচ্চতা কম কিন্তু বিস্তৃতি অনেক বেশি। মাতাসাগরের নৈসর্গিক পরিবেশ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় মাতাসাগরের পানিতে সূর্যের লাল আলো দর্শকের মন কাড়ে।

আনন্দ সাগর : কথিত আছে, রাজা রামনাথ রানিকে নিয়ে সোনার নৌকায় রাজবাড়ী থেকে পানিপথে নৌবিহারে এই দিঘিতে আসতেন। এ জন্যই এর নাম হয়েছে আনন্দ সাগর। আনন্দ সাগরের সঙ্গে সুখ সাগরের সংযোগ ছিল একটা নালার মাধ্যমে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নালা আগের মতোই আছে। তবে নালার পাশে বাড়িঘর করাতে নালা অনেকটা বন্ধের পথে। আগে নালাটি আনন্দ সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এখন সাগরের নালার সঙ্গে সংযোগ বিছিন্ন।

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের উত্তরে এর অবস্থান। ৭ একর আয়তনের এই দিঘির গভীরতা তুলনামূলক কম।

আনন্দ সাগরের মৎস্যচাষী মো. বাবলু মিয়া বলেন, এখানে কোনো সংস্কার করা হচ্ছে না, পাড়গুলো ধসে যাচ্ছে। অনেক গাছ ছিল, যা এখন নেই। দলিলে মূল রাস্তা থাকলেও আনন্দ সাগরে যাওয়ার রাস্তা বেদখল হয়ে আছে। ড্রেনের সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হলে এই আনন্দ সাগর অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বলে এলাকাবাসীর অভিমত।

জুলুম সাগর : ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী সাধারণ মানুষকে এই দীঘিতে অত্যাচার করত বলে নাম হয়েছে জুলুম সাগর। দিনাজপুর সার্কিট হাউসসংলগ্ন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের বিনোদন কেন্দ্র কৃষ্ণকলির নিচে এই সাগরের অবস্থান। প্রায় ৮৪৩ শতক আয়তনের সাগরটি দিনাজপুরের মানুষের প্রিয়।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিস অনুষদের ছাত্রী জয়তুননেসা বলেন, অনেক দিন দেখেছি তবুও এর নাম যে ‘জুলুম সাগর’ জানতাম না। সন্ধ্যা বেলা এখানকার পরিবেশ সুন্দর দেখায়। কৃষ্ণকলিতে বসে এই সাগরের ধারে প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটাতে ছুটে আসেন অনেকে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উদ্ধার

এশিয়া কাপে পাকিস্তানি ফিল্ডারের থ্রোয়ে আহত আম্পায়ার

‘ভুল করে মায়ের পাসপোর্ট নিয়ে জেদ্দায় যান পাইলট মুনতাসির’

শাহীনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সুপার ফোরে পাকিস্তান

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ

এশিয়া কাপে পাকিস্তান ওপেনারের লজ্জার রেকর্ড

চট্টগ্রামে আ.লীগ কর্মীদের বাসা ভাড়া না দিতে মাইকিং

ভারতে ‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’ সংক্রমণে ১৯ জনের মৃত্যু

বনানীতে দুই শিসা বারে ডিএনসির অভিযান

বয়কটের হুমকি দিয়েও না করার কারণ জানালেন পিসিবি প্রধান

১০

কর্মচারী দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা পরিচালনার অভিযোগ

১১

শাহীন ঝড়ে বাঁচা-মরার ম্যাচে লড়াকু সংগ্রহ পাকিস্তানের

১২

‘গোলাপী খালার’ পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

১৩

পরাজিত শক্তির সঙ্গে আঁতাতের রাজনীতি মঙ্গলজনক হবে না: নীরব

১৪

চট্টগ্রামে মার্কিন বিমান ও সেনা উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনার কারণ কী?

১৫

রাকসু নির্বাচন / ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনাসহ ৭ দফা দাবি ছাত্রশিবিরের

১৬

দীর্ঘ ৬ বছর পর বুটেক্সে ক্যারিয়ার ফেয়ার অনুষ্ঠিত

১৭

ফ্যাসিবাদের মতো তামাকও দেশ থেকে নির্মূল করতে হবে : ফরিদা আখতার

১৮

ছাত্র সংসদ আর জাতীয় নির্বাচন এক নয় : টুকু

১৯

বৃহস্পতিবার থেকে ৫ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে ৭ দল

২০
X