যেন না ফেরার দেশ থেকে নিজের মাতৃভূমিতে ফিরেছেন আলোচনায় থাকা সেই এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। দেশে ফেরার খবরে নাবিক পরিবারে বইছে ঈদের আমেজ। গত ঈদ তারা ভালোভাবে কাটাতে পারেননি। এদিনের মধ্য দিয়ে নাবিক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দুশ্চিন্তার অবসান হলো। হয়তো বা আজকের এই দিনে তারা স্বজনদের কাছে ফিরবেন তা কল্পনাতেও ছিল না। এই মাহিন্দ্রক্ষণ দিনের অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে আসা নাবিকদের স্বজনদের মধ্যে কেউ কেউ ফুল নিয়ে এসেছেন, কেউ কেক নিয়ে এসেছেন।
চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কখনো কল্পনাও করেননি সুস্থ অবস্থায় তাদের ফিরে পাবেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। জাহান মনি থেকে নেমে স্বজনরা পরিবারের সদস্যকে খুব কাছাকাছি পেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন। অনেকে প্রায় দুই মাস পর পরিবারের সদস্যকে কাছে পেয়ে কাঁদছেন।
নাবিকরা বলেন, পূর্বের কোনো দিন আর তারা মনে করতে চান না। আজকের দিন খুব আনন্দের। এই দিনে তারা পূর্বের দিনগুলো মনে করতে চান না। কবির গ্রুপের (কেএসআরএম) মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জিম্মি দশা থেকে মুক্ত নাবিকরা এখন আরও সাহসী। কারণ তারা ভয়কে জয় করে দেশে ফিরেছেন।
জাহাজটির নাবিক মো. নুরুদ্দীনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে এসেছে তাদের আড়াই বছর বয়সী একমাত্র সন্তান সাদ বিন নুর। নাবিক সালেহ আহমেদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমার স্বামী ফিরেছেন। এজন্য তাকে বরণ করতে এসেছি। আজকের দিনটি আমার খুব ভালো লাগছে। ২৩ নাবিকের একজন স্টুয়ার্ড পদে কর্মরত মো. নুরু উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন দক্ষিণ শাহ মীরপুর এলাকার বাসিন্দা। তার জন্য নিজ হাতে কেক তৈরি করে এনেছেন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। একটির ওজন তিন পাউন্ড, অপরটি দেড় পাউন্ড। তিন পাউন্ডের কেকটিতে জাহাজের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘ওয়েলকাম ব্যাক’।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আজ কেমন লাগছে তা বলে প্রকাশ করতে পারব না! তার পছন্দের সব খাবার রান্না করা হচ্ছে। তিনি কেক পছন্দ করেন। আমি তার জন্য সাড়ে চার পাউন্ডের দুটি চকলেট কেক তৈরি করেছি।
নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম বলেন, ছেলে অবশেষে ঘরে ফিরতে পারছেন, এর চেয়ে বড় সুখবর আর নেই। আমরা সবাই খুশি। এই খুশির মাত্রা বলে বোঝানো যাবে না।
জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ বলেন, দেশে ফিরতে পারার আনন্দ যে কতটুকু তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জলদস্যুদের হাতে ভারী অস্ত্রের মুখে জিম্মি থাকার সময় ভাবতেও পারিনি কখনো আর দেশে ফিরতে পারব। তাই আজকের মুহূর্তটাকে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান বলেন, ভালোবাসি বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন