খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ০৭:৩৯ পিএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঘূর্ণিঝড় রিমাল

খুলনার উপকূলে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লাখ মানুষ 

দাকোপ উপজেলায় পানিবন্দি পরিবার। ছবি : কালবেলা
দাকোপ উপজেলায় পানিবন্দি পরিবার। ছবি : কালবেলা

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে খুলনার উপকূলীয় এলাকা। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, উপকূলীয় তিন উপজেলার ৫২টি ওয়ার্ডে প্রায় ৭৭ হাজার ঘড়বাড়ি আংশিক সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চার লাখের বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গাছ চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিন উপজেলার অন্তত দশটি স্থানে বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

দাকোপ : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে খুলনার দাকোপ উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। রোববার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে যায়।

তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্ষিতীশ গোলদার বলেন, একই এলাকায় পাঁচটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে এখনো পানি ঢুকছে। এলাকাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতাভুক্ত।

পাইকগাছা : খুলনার পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম। যাতে চিংড়ি ঘেরসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎহীন রয়েছে।

উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির দেওয়া তথ্য মতে, বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদ ও শিবসা নদীর পানিতে গড়ইখালী, দেলুটি, সোলাদানা, লস্কর, লতা ও রাড়ুলী ইউনিয়নে কয়েকটি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাতে এসব এলাকার চিংড়ি ঘের তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। ৮৩১টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ হাজার ৪১০টি।

বাঁধ ভেঙে দেলুটি ইউনিয়নের তেলিখালী, কালী নগর, দারুনল্লিক, গেওয়াবুনিয়া, জিরবুনিয়া, পার মধুখালি, চকরিবকরী এলাকার ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এ ছাড়া গড়ইখালী ইউনিয়নের খুদখালী ও গড়ইখালী বাজার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের তালতলা, রাড়ুলী ইউনিয়নের জেলে পল্লী, সোলাদানা ইউনিয়নের সোলাদানা বাজার, বেতবুনিয়া আবাসন এলাকা, নুনিয়াপাড়া, পশ্চিম কাইনমুখী, আমুর কাটা এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কয়রা : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা উপজেলার ৩টি জায়গার বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কয়েকশ’ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এ ছাড়া রাতজুড়ে ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পাউবো সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে জোয়ারের তীব্র চাপে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধ ভেঙে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, বাঁধের দুর্বল অংশের ওই ৩টি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে নদীর নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে এলাকা।

এ ছাড়া বাঁধের নিচু কয়েকটি জায়গা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব জায়গায় এলাকার মানুষ রাতভর মেরামত কাজ চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।

মহারাজপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, রোববার রাতের জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েকশ’ চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে।

পাউবোর প্রকৌশলী লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় মানুষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে সাথে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি স্থানে বাঁধ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার দুপুরের জোয়ারের আগে তা মেরামতের চেষ্টা চলছে।

খুলনা শহর : ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে খুলনা মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকা। এছাড়া ঝড়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়েছে। সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বর্তমানে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা আবহাওয়া এমনই থাকবে। সোমবার ভোরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের উপরে ও পাশে দোকানের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড ওঠে গেছে। অনেক সাইনবোর্ড রাস্তার উপরে পড়ে আছে। সড়কের পাশে প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিতে নগরীর সোনাডাঙ্গা লবণচরা, টুটপাড়া, মহিরবাড়ি খাল পাড়, শিপইয়ার্ড সড়ক, রূপসা, চানমারী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো ওইসব সড়কে পানি রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন কালবেলাকে বলেন, উপকূলীয় তিন উপজেলায়র ৫২টি ওয়ার্ডেও প্রায় ৭৭ হাজার ঘড়বাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চার লাখের বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গাছ চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিন উপজেলার অন্তত দশটি স্থানে বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও প্রাথমিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সকল শাখাকে ন্যস্ত করা হয়েছে। কাজ চলছে। আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ সকল ধরনের সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় রিমাল
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসলামে মানব হত্যার ভয়াবহ শাস্তি

হাদি গুলিবিদ্ধ, যা বললেন রাকিব-নাসির

হাদিকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন মির্জা আব্বাস-রিজভী

হাদির ওপর হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধের পর যা বললেন মাহফুজ আলম

ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, পালালেন চিকিৎসক

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ, দোয়া চাইলেন সারজিস

ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসায় ভ্যাকসিন, বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য সাফল্য

নিজ দায়িত্বে ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ করলেন হান্নান মাসউদ

হাদির গুলিবিদ্ধের ঘটনায় যা বললেন মির্জা ফখরুল

১০

ওসমান হাদি এখন কোমায় আছেন : চিকিৎসক

১১

ঢাকায় আতিফ আসলামের কনসার্টও স্থগিত

১২

রিকশাচালককে জবাই করে হত্যা

১৩

ওসমান হাদিকে যেভাবে গুলি করা হয়

১৪

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ, যা বললেন জামায়াত আমির

১৫

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে আবিদের স্ট্যাটাস

১৬

ওসমান হাদিকে নিয়ে তাসনিম জারার স্ট্যাটাস

১৭

কানের নিচে গুলি লেগেছে হাদির, অবস্থা আশঙ্কাজনক

১৮

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ৩ ঘণ্টা আগে ফেসবুকে যা লিখেছিলেন

১৯

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ, হুঁশিয়ারি দিলেন সাদিক কায়েম

২০
X