কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:১৬ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নিজের বক্তব্য প্রচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় লাখ টাকা ‘খোয়ালেন’ কুবি ভিসি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আব্দুল মঈন। পুরোনো ছবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আব্দুল মঈন। পুরোনো ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ ব্যবহার করে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচার করতে গণমাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করার অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট দেশের একটি জাতীয় এবং কুমিল্লার একটি আঞ্চলিক দৈনিকের পাশাপাশি ১৪ আগস্ট আরও একটি জাতীয় দৈনিকে ব্যাখ্যা প্রচার করা হয়।

যেখানে উপাচার্যের মন্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারের ব্যয় বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা (ভ্যাট ট্যাক্সসহ) খরচ করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি নথি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

২০২৩ সালের ৩১ জুলাই একটি সংবাদপত্রের অনলাইন পোর্টালে 'দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে : কুবি উপাচার্য' শিরোনামে সংবাদ প্রচারিত হয়। সেদিন দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স রুমে মার্কেটিং বিভাগের একটি ব্যাচের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা পরবর্তীতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচারে এই ব্যয় করা হয়।

যদিও শুরু থেকেই একটি পাবলিক প্রোগ্রামে উপাচার্যের দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ খরচের এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলের অংশীজনের সঙ্গে কথা হয়। তবে মন্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারে সরকারি অর্থ খরচের বিষয়টিকে স্বেচ্ছাচারী আচরণ এবং দুর্নীতির অংশ হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং বিভিন্ন মহলের বিশেষজ্ঞগণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কিংবা বিধিমালা অনুসরণ করা হয় কিনা জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, সুনির্দিষ্ট কোনো বিধিমালা নেই। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি কাজ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের জানান, 'সরকারি অর্থ খরচ করে ব্যক্তিগত বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। এমনকি ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রচারের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম ব্যবহারেও সুযোগ নেই। উপাচার্য কোন পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন সেটি তিনি সঠিক বলতে পারবেন।

এ ঘটনায় উপাচার্যকে মুখোশধারী শিক্ষাবিদ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক দুইবারের সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, তিনি একজন মুখোশধারী শিক্ষাবিদ। মুখে আদর্শের কথা বললেও কার্যক্রমে দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের যত বিধিমালা আছে, কোনোটি তিনি মানেন না। আবার যখন দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে দেওয়া বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় তখন ব্যাখ্যা প্রচার করে ব্যক্তিগত দুর্নাম গোছানোর জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ খরচ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং অর্থ সংশ্লিষ্টদের উপাচার্যের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ৩৯ এর উপধারা ১(গ) অনুসারে 'আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়' প্রণীত প্রবিধানে উল্লিখিত ৫.৪(২) অনুচ্ছেদে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে যথার্থতা এবং জবাবদিহিতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইকবাল মানোয়ারের বিষয় নিয়ে উপাচার্যের বক্তব্য প্রচারের জন্য যে অর্থ খরচ করা হয়েছে তার যথার্থতা নিয়েতো প্রশ্ন করাই যায় বরং এর জন্য জবাবদিহিতা থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। উপরন্তু, যে উদ্দেশে বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম যে অক্ষুণ্ণ রয়েছে তার যথার্থতার মানদণ্ড কী?

পাবলিক প্রোগ্রামে উপাচার্যের ব্যক্তিগত মন্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড মো. আসাদুজ্জামান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে এ ধরনের বক্তব্য প্রচারের ঘটনাকে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বক্তব্য প্রচারের জন্য তিনি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে পারতেন। এ ধরনের ব্যক্তিগত অভিমত প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই, যদিও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ব্যক্তি। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। তাকে যে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে কোনোভাবেই সেটির অপব্যবহার করতে পারেন না। কাজেই এখানে দুর্নীতি হয়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছ থেকে এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আব্দুল মঈনের দপ্তরে পরপর দুদিন গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত

মাত্র দুই ম্যাচ পরেই চাকরি গেল সাবেক ম্যানইউ কোচের

চবিতে সংঘর্ষ : হাসপাতালে ভর্তি ১২ শিক্ষার্থী, দুজন লাইফ সাপোর্টে

ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে যে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট

স্কুলের সামনেই প্রাণ গেল শিক্ষার্থীর, মিষ্টি খাওয়ায় ব্যস্ত শিক্ষকরা

ডাকসু স্থগিতের প্রতিবাদে শহীদুল্লাহ হল থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল

ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে কী হবে জানালেন শিশির মনির

মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশির মৃত্যু

দুধ দিয়ে গোসল করে জুয়া খেলা ছাড়লেন যুবক

শিশুদের জন্য লবণ কতটুকু প্রয়োজন, যা বলছেন পুষ্টিবিদ

১০

ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন কবে, জানিয়ে দিল বিসিবি

১১

এক ওভারে দিলেন ৪৩ রান, করলেন ১৩ বল

১২

কারামুক্ত হয়ে গানে ফিরছেন নোবেল

১৩

১৪ বছর ব্যাংকে চাকরির পর এখন ফুটপাতে করছেন ভিক্ষা

১৪

ওয়ালটন লিফটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন সংগীতশিল্পী তাহসান

১৫

নখ কাটলে কি অজু ভেঙে যায়?

১৬

সেনাপ্রধানের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে বিবৃতি

১৭

ডাকসু নির্বাচন স্থগিত

১৮

মাদক মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন

১৯

অবাধে চলছে সংরক্ষিত বনের গাছ উজাড়

২০
X