আমাদের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। কিডনির রোগ হলে তা ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। বেশিরভাগ সময়ই কিডনি সমস্যার উপসর্গগুলো এতটাই মৃদু হয় যে, অসুখ বাড়াবাড়ি না হলে বুঝে ওঠা যায় না।
কিডনিতে পাথর একটি সাধারণ সমস্যা। যেখানে খনিজ এবং লবণ কঠিন জমাট বেঁধে পাথর বা স্টোরে রূপ নেয়। পাথর ছোট হলে অনেক সময় স্বাভাবিকভাবেই বের হয়ে যায়। তবে বড় বা জটিল হলে শরীরে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা না নিলে মূত্রনালির সংক্রমণ ও কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
চিকিৎসকদের মতে, কিডনিতে পাথর হওয়ার সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। এসব লক্ষণ অবহেলা করা উচিত না। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে এসব তথ্য।
কিডনিতে পাথরের যেসব সাধারণ লক্ষণ উপেক্ষা করা যাবে না-
১. তীব্র বা ধারালো ব্যথা
কিডনিতে পাথরের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো তীব্র ব্যথা হওয়া। সাধারণত পিঠের নিচে বা শরীরের একপাশে শুরু হয়ে তা তলপেট বা কুঁচকিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথা ঢেউয়ের মতো আসে-যায়। বিশ্রামে কমে না এ ব্যথা। ডা. শ্যাম বর্মার মতে, এটা পেশির ব্যথা নয়—ইউরেটারে পাথর নড়াচড়ার ফলে সৃষ্ট খিঁচুনি।
২. প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা রক্ত
পাথর মূত্রনালিতে নামতে শুরু করলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হতে পারে। এদিকে প্রস্রাবের সঙ্গে দেখা যেতে পারে—লাল, গোলাপি বা বাদামি রঙের রক্ত। এ লক্ষণ অনেক সময় খালি চোখে না দেখা গেলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ে। পাথরের ঘর্ষণে মূত্রনালিতে ক্ষত থেকেই এই রক্ত আসে।
৩. প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন
কিডনি পাথরের কারণে প্রস্রাব ঘোলা বা দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। পাথর মূত্রপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে সংক্রমণ হয়। সংক্রমণই প্রস্রাবের ঘোলাভাব ও গন্ধের অন্যতম কারণ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, অবহেলা করা ঠিক নয়।
৪. ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি
কিডনিতে পাথর হওয়া আরেকটি লক্ষণ হলো বারবার প্রস্রাবের বেগ আসা। অথবা অল্প অল্প করে প্রসাব হওয়া। দেখতে ইউরিনারি ইনফেকশনের মতো লাগলেও, সংক্রমণ না থাকলে কারণ হতে পারে পাথরই।
৫. বমি বমি ভাব
প্রতিবেদনে ডা. আশ্বথী হরিদাস জানান, কিডনি স্টোনের তীব্র ব্যথায় শরীর স্ট্রেস রেসপন্স দেখায়। এতে বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে। কিডনি ও হজমতন্ত্রের স্নায়ু সংযুক্ত থাকায় পাথরের চাপ হজমের ওপর প্রভাব ফেলে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
কিডনির পাথরের লক্ষণ পাথরের অবস্থান ও আকারের ওপর নির্ভর করে। ছোট পাথর অনেক সময় চুপিচুপি বেরিয়ে যায়, কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। তবে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত বা পরিবর্তন দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রস্রাব পরীক্ষা বা সিটি স্ক্যানে প্রথমেই ধরা পড়লে, পানি পান, ওষুধ, লিথোট্রিপসি বা ছোট সার্জারিতেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু প্রাথমিক লক্ষণ উপেক্ষা করলে তা ভয়াবহ জটিলতায় রূপ নিতে পারে।
মন্তব্য করুন