বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেছেন, প্রয়াত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্বপ্ন ছিল সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গঠন করার।
রোববার (১০ নভেম্বর) বিকালে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্মরণসভা, প্রতিবাদী গান ও প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। এম এন লারমার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সারা হোসেন এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোতে মুসলমান ভিন্ন অন্য কোনো ধর্মের কেউ নেই, নারী নেই, আদিবাসী নেই। সংস্কার কমিটিতে বিভিন্ন জনের নাম শোনা গেলেও কোনো এক কারণে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। কেন, কীভাবে এ সংস্কার কমিটিগুলো হচ্ছে এ ব্যাপারে আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে।
নারায়ণ লারমার মৃত্যুবার্ষিকীর জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক এবং ভূমি ও মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমরা এক ক্রান্তিকালীন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের তরুণ সমাজ যে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সে চেতনাকেও ভুলে গেলে চলবে না।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান একদিনে আসেনি। সুদীর্ঘকাল ধরে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী, নারী সমাজের, সম অধিকার আদায়ের জন্য যে সংগ্রাম সে সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এ অভ্যুত্থান সফল হয়েছে। সংস্কারের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেগুলো পরিপূর্ণ হয়নি। কেন এ কমিশনগুলোতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নেই, কেন আদিবাসী প্রতিনিধি নেই। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনের অবসান চাই। আমরা চাই এম এন লারমার ঐতিহাসিক গণপরিষদ বিতর্ক, বক্তব্য মূল্যায়ন করা হোক, পাঠ করা হোক।
শামসুল হুদা বলেন, এ সরকারের ভুলভ্রান্তিগুলোর সমালোচনা অবশ্যই করবো একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈষম্যবিরোধী করে গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র জনতার ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর প্রথম চপেটাঘাত দিয়েছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা।
তিনি বলেন, আমরা একটি চলমান লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। যেটি ১৯৪৭ সাল থেকে আমরা করে আসছি। এ লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেখানে মানবাধিকার বিঘ্নিত হবে সেখানে আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হব। সব দল মত নির্বিশেষে একসঙ্গে কাজ করে যাব বলেও তিনি সকলকে আহ্বান করেন।
উল্লেখ্য, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির নান্যেচরের মাওরুম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর গিরি-দেবেন-পলাশ-প্রকাশ কুচক্রী মহলের বিশ্বাসঘাতকতামূলক অতর্কিত আক্রমণে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির উপজেলার খেদারাছড়ার থুমে নির্মমভাবে নিহত হন।
মন্তব্য করুন