আফজাল হোসেন
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
banoful
অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনের বিশেষ সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে

অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন

   

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। বাংলাদেশের রাজনীতির সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

nagad

কালবেলা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার এবং বিএনপি উভয়ই মাঠে অবস্থান করছে। আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করছে এবং বিরোধীরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

আফজাল হোসেন : বাংলাদেশের রাজনীতির এই দ্বান্দ্বিক চরিত্রটি একবারেই নতুন কোনো ঘটনা নয়। এটা অনেক দিনের পুরোনো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠন করেছিলেন। সকল দলমত ও পথের সমন্বয়েই বঙ্গবন্ধু রাজনীতি শুরু করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আবার বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়। সেই বিভাজনের রাজনীতির গড্ডালিকা প্রবাহে এদেশের মানুষকে অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগুলো হারিয়েছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট হয়েছে, আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো কালো আইন হয়েছে এবং ক্ষমতা পরিবর্তনের রক্তাক্ত পথের সূচনা হয়েছে। এসব অভিজ্ঞতার মধ্যেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে বাংলাদেশে সামরিক শাসনবিরোধী লড়াই সংগ্রাম করে, গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে অক্ষুণ্ন রেখে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনা টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনায় রয়েছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্রটি বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি অসম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সেই চেহারা শেখ হাসিনা আবার ফিরিয়ে এনেছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র আবার পুনর্নিমিত হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বাংলাদেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে এবং দেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও বিভিন্ন ধরনের ভাতা সুবিধার আওতায় এসেছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযুদ্ধ ভাতাসহ গৃহহীন মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া, জমি দেওয়া, কৃষকদের নিরাপত্তা স্কিমের আওতায় নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে সরকার। আর এ সবই আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার একেবারে নিজস্ব চিন্তা চেতনার ফল।

মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে দেওয়া এ কাজ আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। আর যারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি, যারা দীর্ঘদিন বাংলাদেশকে লুণ্ঠন করেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ তাদের চক্ষুশূল। এ কারণে তারা আওয়ামী লীগকে এবং আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে হটাতে চায়। শেখ হাসিনাকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যা চেষ্টা হয়েছে। গ্রেনেড হামলা করে শুধু শেখ হাসিনাকেই নয় বরং সমস্ত আওয়ামী লীগ পরিবারকে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তাদের এই জিঘাংসা বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। যারা আজ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কথা বলে তারা বাংলাদেশকে কোনো গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিল? তাদের রাজনৈতিক দলের জন্ম গণতান্ত্রিক পন্থায় হয়নি। গণতান্ত্রিক পন্থায় তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেনি এবং গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার ও রীতিনীতি তারা কখনোই মানেনি।

তারা কোন মানবাধিকারের কথা বলে? আওয়ামী লীগ মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম শিকার। জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে, এরচেয়ে বড় মানবাধিকারের লঙ্ঘন আর কিছু হতে পারে না। দশ বছরের শিশু রাসেলকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের সঙ্গে রাজনীতির বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই তাদেরও হত্যা করা হয়েছে। হত্যা সন্ত্রাস খুন রক্তাক্ত বাংলাদেশ- এসবের বিরুদ্ধেই আওয়ামী লীগের লড়াই সংগ্রাম। আওয়ামী লীগ এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। অতীতের সেই পরাজিত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আবারও এক হচ্ছে। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

কালবেলা : প্রতি পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে সংকট তৈরি হচ্ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে পথ কী?

আফজাল হোসেন : গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকা ব্যাহত হয়েছে সামরিক শাসনের গর্ভে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির মাধ্যমে। এর মাঝখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এসেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্বলতাগুলো জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কফিনে শেষ পেরেকটি বিএনপির হাত ধরেই হয়েছে। তারা বিচারপতির বয়স সীমা বৃদ্ধি করেছিল। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল। আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল। নির্বাচন অফিসার হিসেবে সারা দেশে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দিয়েছিল। তারা মাগুরা মার্কা নির্বাচন করেছিল। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার এই প্র্যাকটিস বিএনপিই করেছিল। একসময় বিচারপতিরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যুক্ত হতেন। কিন্তু পরে তারা আর এর সঙ্গে যুক্ত হতে চাননি। উচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করা হয়েছে তাই এটি ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণেই আমাদের নেত্রীকে দীর্ঘ ১১ মাস বিনা দোষে কারাগারে থাকতে হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেগম খালেদা জিয়াকেও কারাগারে পাঠিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এদেশের ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নিগৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থেকেছে। দুই বছর বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রহীন থেকেছে।

বাংলাদেশে বিদেশের মডেলে একটি সরকার বসানোর চেষ্টা হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ যা চায় না সেটা এদেশে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। সেরকম ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে তার জন্য সাংবিধানিক একটি রক্ষাকবচ তৈরি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচন হবে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচনের মতো।

কালবেলা : বিরোধী দলগুলো বলছে, সরকারের ওপর তাদের আস্থা নেই। ফলে তারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

আফজাল হোসেন : আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় সকলকে নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। বিএনপি জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছে। তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করেছে। যারা পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছে আমাদের নেত্রী ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গেছেন, ১৫ আগস্টে মতো এরকম বেদনা বিধুর দিনে যারা কেক কেটে উৎসব করে তাদের সঙ্গেও মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা সৌজন্যতা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের সামাজিক শিষ্টাচার কোনো মানুষ বা কারো স্বজন মারা গেলে অন্যরা সান্ত্বনা দিতে যান। আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর আমাদের নেত্রী ছুটে গিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে। কিন্তু তার সামনে দরোজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছে। তারা আওয়ামী লীগ পরিবারকে হত্যা করতে চায়। সুতরাং তাদের সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না। কোনো খুনির সঙ্গে মিলেমিশে চলা যায় না। সুতরাং মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে তারা খুনের রাজনীতির সঙ্গে থাকবে নাকি গণতন্ত্রকে অক্ষুণ্ন রাখবে। মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশে উন্নতি এবং অগ্রযাত্রা চলবে নাকি অতীতের মতো আবার খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশে পরিণত হবে, জঙ্গি এবং হত্যা সন্ত্রাসের বাংলাদেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশে একমাত্র শেখ হাসিনা ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা স্থানান্তর করেছিলেন। তার আগে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো নজির বাংলাদেশে নেই। কিন্তু শেখ হাসিনা তার প্রতিদান কি পেয়েছিলেন? ২০০১ সালের নির্বাচনের পর ২৬ হাজার নেতা কর্মীকে হারাতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। আহসানুল্লাহ মাস্টার, এস এম কিবরিয়া, মনজুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে শত শত সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। শাইখ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইর মতো জঙ্গিদের বিস্তার ঘটিয়ে তাদের প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় বাংলাদেশকে একটি তালেবানীয় রাষ্ট্র কায়েম করার সর্বগ্রাসী চেষ্টা হয়েছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল চেতনাকে ধূলিসাৎ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর এই সবই হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের সময়।

কালবেলা : সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় না বসলে দেশে সহিংসতা ও সংঘাত আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা...

আফজাল হোসেন : বাংলাদেশের একটি সংবিধান রয়েছে, যেখানে সব কিছুর সমাধান আছে। সুতরাং সংবিধানের বাইরে গিয়ে নতুন কোনো পন্থা অবলম্বন করে কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার গ্যারান্টি চাইলে সেটা হবে না। নির্বাচনের আগে মল্লযুদ্ধ করতে হবে এরকম একটি কালচার বাংলাদেশে ছিল। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হবে এবং যে পক্ষ জিতবে (?) মানুষ সেই পক্ষে বেশি ভোট দেবে, বাংলাদেশে এরকম একটি মনস্তত্ত¡ আছে বলে মনে করছে বিএনপি। কিন্তু গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের জনগণের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এ সময়ে দেশে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে। তারা এই মল্লযুদ্ধের রাজনীতি পছন্দ করে না। তারা হত্যা, সন্ত্রাস ও খুনের রাজনীতি পছন্দ করে না। নতুন প্রজন্ম পেট্রলবোমার রাজনীতিকে ঘৃণা করে। নতুন প্রজন্ম মানুষ হত্যার রাজনীতিকে বর্জন করে। বিএনপি যদি এই রাজনীতি করতে চায় তবে অতীতের মতো তারা জনশূন্য হয়ে পড়বে। বিএনপি এভাবে মানুষের আস্থা বা জনসমর্থন কোনোটিই অর্জন করতে পারবে না।

কালবেলা : বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে আলোচনার কোনো উদ্যোগ নিবেন কী?

আফজাল হোসেন: বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন চায় না। সরকার উৎখাত করতে চায়। সেখানে আলাপ আলোচনার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন রয়েছে। তারা নির্বাচনের সময় ঘোষণা করবেন। যেসব দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তারা অংশগ্রহণ করবে। এর আগে নির্বাচন কমিশন এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা হয়েছে। বিএনপি কিছু আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিল এবং কিছু আলোচনায় তারা অংশগ্রহণ করেনি। বিএনপি আলাপ-আলোচনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হয় না। বিএনপির সংবিধানবিরোধী দাবি বাস্তবায়ন হবে না। তারা যদি মনে করে থাকে বাংলাদেশের সব কিছু তাদের কথামতো চলবে, মানুষকে তারা ঘরে আটকে রাখবে, তারা ঢাকা সিটিকে অবরুদ্ধ করে রাখবে, তারা হটকারী সিদ্ধান্ত দিয়ে ঢাকার প্রবেশ মুখ বন্ধ করে রাখবে, তবে তারা ভুল ভাবছে। এটা কোনোভাবেই হবে না এবং তারা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও তাদের এরকম কর্মসূচি ব্যর্থ হয়ে যাবে।

কালবেলা : বিএনপি অভিযোগ করছে, তারা কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সংঘর্ষ এবং সহিংসতার শঙ্কা আরো বাড়ছে...

আফজাল হোসেন : ২০১৩-১৪ সময়গুলোতে বিএনপি অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিল। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি দেয়নি। সেই সময়ের অভিজ্ঞতাটি কি? সেই সময়ে তারা রাস্তায় নেমে মানুষ হত্যা করেছে, পেট্রলবোমা দিয়ে আগুন সন্ত্রাস করেছে, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গায়ে হাত তুলেছে, অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এমন কোনো অপকর্ম নেই যেটা বিএনপি করেনি। মানুষের জান-মাল রক্ষা করার দায়িত্ব একটি গণতান্ত্রিক সরকারের যেমন রয়েছে তেমনি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগও বসে থাকতে পারে না

কালবেলা : মানুষের জানমাল রক্ষা করার জন্য পুলিশ বাহিনী রয়েছে। আওয়ামী লীগকে কেন মানুষের জান-মাল রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে? এতে কী সংঘর্ষ সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে না?

আফজাল হোসেন : মানুষের জান-মাল রক্ষা করার দায়িত্ব যেমন প্রশাসনের তেমনি জনগণকেও সজাগ থাকতে হবে। বিএনপি’র যে কোনো অপকর্মকে প্রতিহত করার জন্য জনগণ নিজেরই রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। তারা যদি ধ্বংসাত্মক কোনো কার্যক্রম না চালায়, তারা যদি রাস্তায় গাড়িতে আগুন না দেয় তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে, মিছিল মিটিং করবে সেখানে কেউ বাধা দিচ্ছে না। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচি পালন করতে চাইলে বা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যদি কোনো ভিন্ন বার্তা দিতে চায় তাহলে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হবে।

কালবেলা : যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমনকি জাতিসংঘও বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের জন্য আলাদা ভিসা নীতিও ঘোষণা করেছে। এই বিষয়গুলোকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কীভাবে দেখছেন?

আফজাল হোসেন : বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে এই সক্রিয়তা নতুন কিছু না। তারা বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে। আওয়ামী লীগও সেটা চাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার তা করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যেই সরকার সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ বিগত দিনে যত নির্বাচন হয়েছে সেখানে বিএনপি আমলের মতো কোনো ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি বা এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের অধীনেই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কোনো বিদেশি বাংলাদেশের সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আসার কথা বলেনি। কোনো বিদেশি বলেনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারাকে যেভাবে অক্ষুণ্ন রাখা যায়, যাতে আগামী দিনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয় এবং যাতে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য রক্ষা হয় তার জন্য সব কাজ আমরা করব। কিন্তু কারো প্রেসক্রিপশনে বা কারো চোখ রাঙানিতে বাংলাদেশ চলবে না। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের পথে এগোবো এবং বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। এখানে কেউ আমাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না। কারণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবসময় বলেন, ক্ষমতায় যাওয়াটা আমাদের কাছে মুখ্য নয় বরং আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় হলো বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করা। আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করা। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে অব্যাহত রাখা এবং হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতিকে বন্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। সে যাত্রা পথে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে জনগণই তাদের প্রতিহত করবে।

কালবেলা : গত দুটি উপনির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। অনেকেই একে সরকারের প্রতি অনাস্থা হিসেবে দেখছেন। আপনারা বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

আফজাল হোসেন : বর্তমান সরকারের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র কয়েক মাস। এই অল্প সময়ের জন্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে ভোটারদের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ থাকে না। বৃহত্তর রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের জন্য মানুষ নৌকা প্রতীকে ভোট দিচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক জায়গায় ভোটের হার ৫০ শতাংশেরও বেশি হয়েছে। সুতরাং মানুষের ভোটের ব্যাপারে আগ্রহী নয় এই কথা ঠিক নয়

কালবেলা : বর্তমান সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী বলে আপনি মনে করেন?

আফজাল হোসেন : সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পন্থা হলো গণতন্ত্রের রীতিনীতিকে অনুসরণ করা। সেক্ষেত্রে বিশ্ব স্বীকৃত পন্থা হচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। নির্বাচনে এসে নিজের জনপ্রিয়তাকে যাচাই করা। নির্বাচনে না এসে শুধু নেতিবাচক রাজনীতি করা এটা মানুষ পছন্দ করে না। সুতরাং যারা গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে বিশ্বাস করেন আমি মনে করি তাদের সকলকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিহার করে তারা নির্বাচনের ময়দানে হাজির হবেন বলে আমি মনে করি

কালবেলা : বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। বিএনপির সময় যখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল সেটাও ভালো হয়নি বলে আমরা দেখেছি। ২০১৪ সালে ১৫১টি আসনে নির্বাচন হয়নি। ২০১৮ এর নির্বাচন নিয়েও অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাহলে কোন ভরসায় বর্তমান সরকারের অধীনে বিরোধীদলগুলো আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে?

আফজাল হোসেন : যারা মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারে তারা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। আওয়ামী লীগ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সামরিক শাসনের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছে সেখানেও আমরা অংশগ্রহণ করেছি। বর্তমানে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সুবাতাস বইছে। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেছেন। সেই আশ্বাসের ওপর ভরসা রেখে আগামী নির্বাচনে বিএনপির আসা উচিত। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের মেইন মেশিনারি নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় বা কোনো আলোচনা থাকলে যে কেউ সেটা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে। একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সদিচ্ছা থাকতে হয়। সকল রাজনৈতিক দলকে মাঠে থাকতে হয়, পলায়ন প্রবৃত্তি পরিহার করতে হয় এবং নির্বাচন জেতার একটি মানসিকতা থাকতে হয়। বিএনপি’র মধ্যে এই নির্বাচনমুখী ভাবটি অনেক দিন ধরেই অনুপস্থিত বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জনগণের ওপর বিএনপির আস্থা বিশ্বাস নেই।

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। শুধু বিএনপি না, সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শনিবার কী আছে আপনার ভাগ্যে, জেনে নিন রাশিফলে

২২ সেপ্টেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (স.) / ঢাকায় আসছেন আল্লামা তাহের শাহ

মানবাধিকার রক্ষায় আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ : প্রধানমন্ত্রী

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

২৩ সেপ্টেম্বর : নামাজের সময়সূচি

জাতীয় নির্বাচনের আগে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

পশ্চিমা গোষ্ঠীকে দাওয়াত দিয়ে না আনলে নাকি নির্বাচন হবে না : নওফেল

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার ৭৫তম আসরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে যোগ দেবে বাংলাদেশ 

‘আওয়ামী লীগ সহনশীল ও দানশীল দল’

১০

বাংলাদেশকে পুরো ঋণ পরিশোধ করল শ্রীলঙ্কা

১১

শ্রীমঙ্গলে ৩ হাজার ২৫ কেজি অবৈধ চা জব্দ, ২ লক্ষ টাকা জরিমানা

১২

আশা করি ভিসা নিষেধাজ্ঞার ফলে কেউ নির্বাচনে বাধা দেবে না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৩

যুদ্ধ-সংঘাত ও নিষেধাজ্ঞার পথ পরিহার করুন : জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী

১৪

জনগণের কাছে নতি স্বীকারে লজ্জা নেই : মঈন খান

১৫

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ

১৬

আ.লীগের কারণে দেশ মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়লো : শামা ওবায়েদ

১৭

রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ২৬ সেপ্টেম্বর

১৮

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার বিকল্প নেই : রুমি

১৯

এবার ভিসানীতির প্রয়োগ নিয়ে মুখ খুললেন ডোনাল্ড লু

২০