কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ০১:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. ইমদাদুল হক মামুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গম্ভীরা : রসের আধারে সচেতনতা

গম্ভীরা লোকগানের অনুষ্ঠান। ছবি : সৌজন্য
গম্ভীরা লোকগানের অনুষ্ঠান। ছবি : সৌজন্য

রসালো আমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তার সঙ্গে আছে কাসা, পিতল, লাক্ষা, নকশীকাঁথা ও রেশমের সম্ভার। সঙ্গে অলংকার হিসেবে আছে দেশখ্যাত গম্ভীরা, আলকাপ আর মেয়েলি গীত। এ জেলার রয়েছে গৌরবময় অতীত। ঐতিহ্যে ভরপুর এ জেলা। স্থাপত্যকলার অজস্র নিদর্শন এর আনাচে কানাচে। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের উল্লেখযোগ্য জনপদ এটি। ঐতিহ্যের সঙ্গে রয়েছে এ এলাকার মানুষের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার দীপ্তময় ইতিহাস। দেশি ও বহিঃশক্তির প্রতিরোধে যুগে যুগে এ জেলার মানুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ গৌড়ের খণ্ডাংশ ছিল। এখানকার ইতিহাস গৌড়ের ইতিহাসের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। এ অঞ্চল ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি। নবাবরা তাদের পাত্রমিত্রসহ এখানে শিকার করতে আসতেন বলে এ স্থানের নাম হয় নবাবদের গঞ্জ বা নবাবগঞ্জ। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বয়ে আসা মহানন্দা, পুনর্ভবা, পাগলা আর পদ্মা নদীর কোলজুড়ে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। বরেন্দ্রভূমির বিস্তীর্ণ মাঠ, প্রাচীন গৌড় নগরীর পরিত্যক্ত বিরাণভূমি আজ দেশের ব্যস্ততম জনপদে পরিণত। কিন্তু খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, শত বছর আগেও এখানে ছিল দুর্ভেদ্য জঙ্গল। আর এই দুর্ভেদ্য জঙ্গলেই তৈরি হয়েছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশিল্প।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শুধু স্থাপত্য শিল্পেই প্রসিদ্ধ নয়। এর যেমন ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশিল্প রয়েছে ঠিক তেমনি এর রয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও। লোকসংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এ জনপদটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ খুবই সাধারণ। চাষাবাদ করে ফসল ঘরে তুলে পেট পুরে ভাত খায়। সঙ্গে নদীর মাছ। মাছ না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। লবণ মরিচ পেঁয়াজ মাখিয়ে পেট পুরে তারা ভাত খায়। তারপর সারা রাতজুড়ে আমরা ‘আলকাপ গান’ শুরু করে। আলকাপের সুরেলা তর্কবিতর্কে স্বর্গীয় আনন্দে নেচে ওঠে জনগণ। একসঙ্গে বসে হুকা টানে আর গান শুনে। কী ছোট কী বড়। তাদের তখন ধর্ম থাকে না, জাত-পাত থাকে না। একই হুকাতে মুখ লাগিয়ে একসঙ্গে বসে টানে সবাই। আবার সমাজের অসঙ্গতি দেখলে বা মানুষকে সজাগ করতে কখনো আলকাপ কখনো গম্ভীরা গান গায়। গম্ভীরার মাধ্যমে তারা তাদের সচেতন বিদ্রোহ প্রকাশ করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গম্ভীরা। যদিও এ গম্ভীরা এসেছে স্রষ্টার গুণকীর্তন থেকে। সুর দিয়ে গম্ভীরার শুরু আর সুর দিয়ে শেষ। মাঝে কিছু বাক্যালাপ; তা অভিনয়ের মাধ্যমে। যার কারণে গম্ভীরাকে লোক সংগীত আর লোক সাহিত্য উভয়ের মধ্যেই ফেলা যায়। তবে গম্ভীরার শুরু মূলত শিব বন্দনা দিয়ে। গম্ভীরা শব্দটির উৎপত্তি যেভাবে হয়েছে তার সঙ্গে বর্তমান সংস্কৃতির তেমন একটা মিল নেই বলা চলে। কারণ গম্ভীরা শব্দটি সম্পর্কে বলা হয়, পুরীতে কাশীমিশ্রের ভবনে চৈতন্যদেবের বাসস্থানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। দালানের পর দালান, তার মধ্যে খুবই ছোট ঘর বা কক্ষ। যেখানে বাইরের কোনো শব্দ যায় না; কোনো আলো যায় না। এরকম জায়গায় বসে শিবকে একান্ত স্মরণ করা বা শিবের বন্দনা করা বা শিবের পুজো করা বা শিবের গাজন। আবার গম্ভীরা শব্দের অর্থ মশারিও বোঝায়। তবে যাই বোঝাক না কেন, আমরা এখন বুঝি গম্ভীরা হচ্ছে খুবই হাস্যরসাত্মক লোক নাট্য ও লোক সংগীত। যার মধ্যে নানা নাতির মজার সংলাপ আছে। মজার গান আছে। হাস্যউদ্রেগকারী হালকা নাচ আছে। আর আছে গানে গানে সমাজের অসংগতি সবাইকে জানানোর প্রচেষ্টা। এই গম্ভীরা দিয়েই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পরিচিতি হয় সারা দেশে।

গম্ভীরার উৎপত্তি নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্কের অন্ত নেই। লোকসাহিত্যের গবেষক প্রদ্যোত ঘোষ চৈতন্য চরিতামৃতের ৩১০ নম্বর শ্লোক: ‘গম্ভীরা ভেতরে রাত্রে নাহি নিদ্রা লব’, ৩৫০ নম্বর শ্লোক ‘গম্ভীরাতে গোসাঞি প্রভুকে শোয়াইল’ এবং ৩০৩ নম্বর শ্লোক ‘গম্ভীরা কক্ষে অন্ধকার অতি গম্ভীরা কুহরে জ্বলে প্রদীপ স্মৃতি’ দেখে মন্তব্য করেছেন অন্ধকার প্রকোষ্ঠ বা ছোট ঘর থেকে গম্ভীরা শব্দের উৎপত্তি। তবে গম্ভীরা মানে যে ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ বা ছোট ঘর তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অবশ্য কোনো কোনো গবেষক গম্ভীরা শব্দের অর্থ শিব মন্দিরকে বুঝিয়েছেন। গম্ভীরা একসময় পূজা উৎসব হিসেবে প্রচলিত ছিল। অনুমান করা হয়ে থাকে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এর উৎপত্তি হয়। এ পূজা সাধারণত শিব বা মহাদেবকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হতো। যা শিবের গাজন নামে পরিচিত ছিল। তবে গম্ভীরা গবেষক ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য গম্ভীরা গানের সঙ্গে গাজনের সম্পৃক্ততা স্বীকার করতে রাজি নন। তার মতে গম্ভীরা গান লোকসংগীত ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এই লোকসংগীত উদ্ভবের পেছনে একটা বিশেষ জাতিগত এবং ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব রয়ে গেছে। উত্তরবঙ্গের আদি অধিবাসী মূলত ইন্দো-মঙ্গলয়েড গোষ্ঠীভুক্ত। এদের মধ্যে ‘গম্ভীরা উৎসব’ বা বাৎসরিক অধিবেশন উপলক্ষে সংগীত ও নৃত্য প্রচলিত ছিল। এখান থেকে গম্ভীরার উদ্ভব বলে মনে করেন তিনি।

গম্ভীরার প্রথম গবেষক শ্রী হরিদাস পালিত তার ‘আদ্যের গম্ভীরা’ গ্রন্থে বলেন, ‘পূর্ব্বকালে চণ্ডীমণ্ডপের ন্যায় গৃহ বিশেষকে এতদঞ্চলে গম্ভীরি বা গম্ভীরা বলিত। গৌড়, রঙ্গপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে দ্বিতীয় ধর্মপাল দেবের গোবিন্দ চন্দ্রের রাজত্বকালে ‘গম্ভীরা’ শব্দে ওই প্রকারের গৃহবিশেষকেই বুঝাইত। . . . গম্ভীরা বলিলে আরাধনা বা ধর্মসংক্রান্ত কোনো গৃহকেই বুঝাইতেছে।’

তবে গম্ভীরা শব্দের অর্থ যাই হোক না কেন আধুনিক বর্তমান সমাজের মানুষজন গম্ভীরা বলতে হাস্য রসাত্মক উপায়ে গান আর অভিনয়ের মাধ্যমে সমাজ সমালোচনাকেই বুঝে থাকেন। গম্ভীরার এই নতুন ফর্ম অর্থাৎ আরাধনা থেকে বের করে এনে রসের আধার করে দেওয়া কাজটা মূলত সুফি মাস্টার করে দিয়ে গেছেন। যা দিয়ে মাতি আমরা যা দিয়ে মাতে সারা দেশ। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে গম্ভীরার সৃষ্টি। গম্ভীরা গানের শুরুতেই নাতি মঞ্চের নিচে দর্শকদের জিজ্ঞেস করে ‘হ্যাঁজি, তোমরা হামার নানাকে দেখ্যাছো জি?’ এ প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকের মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। মনে মনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে নাচতে শুরু করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের একদিকে বরেন্দ্র ভূমির লাল এঁটেল মাটি আর তারই মাঝে মাঝে আছে বিল, ঝিল, নদী আর ডোবা। আর এর সঙ্গে এর জলবায়ু, জনবসতির ধরন, লোক সমাজের আচার, বিশ্বাস, সংস্কার, ঐতিহ্য এবং নিয়ত পরিবর্তনশীল মানসকিতা আর বাইরের জনসমষ্টির প্রভাবে গড়ে উঠেছে এখানকার বিচিত্র, বহুমাত্রিক এবং ঋদ্ধ লোকসংস্কৃতি। অনতিপূর্বকাল থেকেই এ এলাকার আচার অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবেই গড়ে উঠেছে এখানকার লোক সংস্কৃতি। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে গম্ভীরার সৃষ্টি। গম্ভীরার নাতির প্রশ্নে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী না, সারা দেশের মানুষ এখন আনন্দে নাচে। আর চিৎকার করে দর্শক, শ্রোতারা তার নানাকে দেখেনি বলে জানালে নাতি মঞ্চের দিকে তাকায় এবং উপবিষ্ট শিল্পীদের একই প্রশ্ন করে। মঞ্চের শিল্পীরা নাতিকে মঞ্চে আহ্বান জানায় আর নানা যেহেতু নাই তাই তাকে গান গাইতে অনুরোধ করে। তাদের অনুরোধে নাতিও মনের আনন্দে মঞ্চে গিয়ে বন্দনা গেয়ে নাচতে শুরু করে। এমন সময় লাঠি হাতে অকস্মাৎ নানার আগমন ঘটে। নাতিকে এভাবে ধেই ধেই করে নাচতে দেখে বিরক্ত নানা লাঠি দিয়ে নাতিকে একটা বাড়ি দেয়। আর সকালের খাবার অর্থাৎ নাস্তা (স্থানীয় ভাষায় ‘লাহারি’) নিয়ে খেতে না গিয়ে এখানে আসার জন্য কৈফিয়ত তলব করেন। নাতি ইনিয়ে বিনিয়ে মঞ্চে আসার কারণ বর্ণনা করে এবং অনুষ্ঠানটির গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝিয়ে নানাকে কিছু বলার জন্য রাজি করায়। তারপর নানা-নাতির যৌথ কণ্ঠে শুরু হয় গান আর কথাবার্তা। মূলত গান দিয়ে গম্ভীরার শুরু, মাঝে অভিনয়ের মাধ্যমে বাক্যালাপ আর গান দিয়ে শেষ। এজন্য গম্ভীরাকে লোক সংগীত আর লোকনাট্য দুটোই বলা যায় অর্থাৎ নাট্যগীতি বা নাট্যসংগীত। নানা-নাতির মজার সংলাপ আছে। মজার গান আছে। হাস্যউদ্রেগকারী হালকা নাচ আছে। আর আছে গানে গানে সমাজের অসংগতি সবাইকে জানানোর প্রচেষ্টা।

গম্ভীরার বন্দনা পূর্বে শুরু হতো দেব বন্দনা দিয়ে। সুফি মাস্টার সেটাকে গম্ভীরা উপভোগরত মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গের বন্দনাতে পরিণত করেন। দেবতার কাছে অভিযোগ অনুযোগকে তিনি করেন মান্যগণ্য বা সমাজপতিদের কাছে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে সে সবের সমাধানের প্রচেষ্টা চালানো। দেবতার কাছে তো সব কথা বলা যায়, কিন্তু সমাজপতিদের কাছে তো আর বলা যায় না, সুফি মাস্টার তাই তার মধ্যে হাস্যরস বা উইট মিশিয়ে দেন। এই হাস্যরসের মাধ্যমে বা নানা-নাতির মজার সংলাপের মাধ্যমে মনের সব অভিযোগ অনুযোগ প্রকাশ করে দেন। গম্ভীরা নাট্যসংগীত মূলত সমাজ আশ্রয়ী এবং ভাবনায় বৈচিত্র্যপূর্ণ। গ্রামীণ জীবনের সামাজিক চিত্র এতে যেমন প্রতিফলিত; তেমনি রাজনৈতিক, সামাজিক, সরকারি কর্মকাণ্ডের অসঙ্গতির মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। এ নাট্যসংগীতের এমন একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, সাধারণ মানুষ সহজেই এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নানা নাতির চটুল এবং কৌতুককর সংলাপ। যদিও এই কৌতুককর সংলাপের মধ্যেই নিহীত থাকে সমাজের অসংগতিগুলো।

গম্ভীরার এই নতুন ফরম তৈরি করেন রহনপুরের সুফি মাস্টার আর কুতুবুল আলম ও রকিবুদ্দীন বঙ্গবন্ধুর সামনে নাটোরের গণভবনে পরিবেশনের মাধ্যমে গম্ভীরাকে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে রূপান্তরিত করেন আর দেশ-বিদেশে পরিচিত করে তোলেন। তারা দুজনেই আর নেই। বর্তমানে যারা গম্ভীরা চর্চায় খ্যাতি লাভ করেছেন তাদের মধ্যে মাহবুবুল আলম, ফাইজুর রহমান মানি, খাইরুল আলম, আব্দুর রাজ্জাক, সাইদুর রহমান, এম বি আই খাবির, সৈয়দ শাহজামাল, শীশ মোহাম্মদ, নাম না জানা আরও অনেকে। আসলে একজনের নাম দেওয়াটা মোটেও সমীচীন নয়। কারণ চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় প্রতিটি সংস্কৃতিবান মানুষই গম্ভীরা পারে এবং চর্চা করে। হাজার বছরের এ ঐতিহ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবার রক্তে মিশে আছে। বর্তমানে ছাত্র, যুবক থেকে শুরু করে প্রবীণ এবং প্রৌররাও গম্ভীরা গান করে আসছে। উপরে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তারা প্রায় সবাই প্রবীণ। এখনো তারা নিয়মিত গম্ভীরা উপস্থাপন করেন বিভিন্ন প্রোগ্রামে। তবে জেলা প্রশাসন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গম্ভীরা দলে আছেন দুজন তরুণ যুবক। মাঠে ঘাটে পথে প্রান্তরে, বিভিন্ন প্রোগ্রামে সরকারি সচেতনতা প্রচারে; যেমন: মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলার জন্য যুবসমাজকে বা তরুণ সমাজকে বোঝানোর জন্য গম্ভীরা পরিবেশন হয়ে থাকে। একসময় বাল্যবিয়ে কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য গম্ভীরা পরিবেশন হতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা এবং রাষ্ট্রীয় ঘোষণা জনগণকে জানানো এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্যও গম্ভীরা পরিবেশন হতো। যদিও গম্ভীরার সৃষ্টি বলা হয় কাশীধামে পূজা অর্চনা থেকে। পূজা অর্চনা থেকে লোকজ সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়। আর তা বর্তমানে সমাজ সচেতনতার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। আনন্দের মাঝে সমাজের অসংগতিগুলো জনগণকে জানানোর প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে গম্ভীরা। সফিউর রহমান সুফি মাস্টারের তৈরি করা গম্ভীরার এই নতুন ফরম বা সংস্করণকেও শানিত করে তোলা হয়েছে আজ নতুন নতুনরূপে।

গম্ভীরা পরিবেশন হয় মূলত ডুয়েট বা দ্বৈত রীতিতে। নানা আর নাতিই মুখ্য চরিত্র। তাদের পারস্পরিক কথাবার্তা, তর্ক-বিতর্ক, বোঝাপড়া, নাচ ও গানের মাধ্যমেই গম্ভীরা গানের সূচনা হয়ে থাকে। নাতি প্রথমে সংলাপ দিয়ে শুরু করে। নানাও এসে সংলাপ শুরু করে করে। এরপর বন্দনা পরিবেশন হয়। বন্দনার রীতি রয়েছে বর্তমান গম্ভীরা গানে, যা অতীতেও পরিবেশিত হতো। তবে পার্থক্য হচ্ছে পূর্বের বন্দনা ছিল শিব বা মহাদেবকে উপলক্ষ করে। আর বর্তমানে বন্দনা হয় যুগের ওপর ভিত্তি করে।

তবে বর্তমানে অবশ্য বন্দনা শুরু হয় অনুষ্ঠানে অভ্যাগত অতিথিরা বা প্রধান অতিথিসহ বিশেষ ব্যক্তিদের বন্দনা। এই বন্দনার পরই গম্ভীরা গান শুরু হয়। নানা-নাতি ছাড়াও গম্ভীরা গানে সহযোগী শিল্পী থাকেনÑ৬/৭ জন দোহার বা সহকারী গায়ক, হারমোনিয়াম বাদক থাকেন এক থেকে দুজন, তবলা বাদক থাকেন একজন, জুড়ি বাদক থাকেন একজন, এখন আবার ঠুনঠুনি বাদকও দেখা যাচ্ছে গম্ভীরা গানগুলোতে। হারমোনিয়াম, তবলা ও জুড়ি বাদকরাও দোহার হিসেবে কণ্ঠ দিয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে দোহাররা নাতির প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে থাকেন। নাতির গান দিয়ে মূলত গম্ভীরা শুরু হয়। এরপর বন্দনা, তারপর নানা-নাতির সংলাপ। এই সংলাপেই সমস্যার কথা জানানো হয়। তারপর নানা-নাতির গান। গানের মাধ্যমে মূলত সমস্যা সমাধানের পথ বাতলানো হয়। তারপরে সালাম, সবার শুভ কামনা জানিয়ে শেষ করা হয়। গম্ভীরার নানা-নাতির সংলাপের বর্তমানে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। পূর্বে নানাকে অভিজ্ঞ, সব কিছু জানে এমনভাবে উপস্থাপন করা হতো। নাতি বিষয়গুলো বুঝত না, নানা তাকে বুঝিয়ে দিত—এ ফরমে গম্ভীরা পরিবেশিত হতো। যেমন শিক্ষা সম্পর্কিত একটি গম্ভীরার দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার মধ্য দিয়েই জাতি উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিষাক্ত বীজ ঢুকে পড়েছে। শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দিনের পর দিন সন্ত্রাস আর হানাহানিতে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে নানা-নাতির মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা নিন্মরূপ: ধুয়া (স্থায়ী) : হে নানা শুনোব্যাতো আইসোজি দ্যাশের ক্যামুন ল্যাখা পড়্যা । পড়্যা শুন্যা মানুষ হোতে পারে না হাঁরঘে ছোঁড়া ॥

যন্ত্র সংগীতের তালে তালে নানা ও নাতি ধুয়া পরিবেশন করে। দোহারাও তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলায়। এক সময় উভয়েই থেমে যায়। নাতি ধুয়ার বক্তব্য সম্পর্কে নানাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। নানা বয়স্ক মানুষ, তার অভিজ্ঞতা অনেক। তিনি যুক্তি তর্কের মাধ্যমে নাতিকে সবকিছু বুঝিয়ে দেন। নাতির বয়স কম। বাস্তবতা সম্পর্কে তার জ্ঞান সীমিত। সে এমন উক্তি করে যাতে দর্শক শ্রোতারা কৌতুক অনুভব করেন। তার কথাবার্তাগুলোও দর্শক শ্রোতাদের বেশ আনন্দ দেয়। কথাবার্তাগুলো নানা-নাতি তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি করেন। ধুয়ার পর শুরু হয় গান এবং নৃত্য। প্রতিটি অন্তুরার (পরধুয়া) পর নানা-নাতির কথাবার্তা হয় এবং দোহারীরা ধুয়া পরিবেশন করেন। নানা-নাতির কথাবার্তার মধ্যে থাকে সমস্যার কথা, সমাধানের উপায় এবং কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধানের জন্য পদক্ষপে গ্রহণের আবেদন।

গম্ভীরার অন্তরাগুলো নিন্মরূপÑ ক্যামনে পড়ভে হাঁরঘে গোভ্যা তোমরা সভাই বলো বন্ধ থাকে এগারো মাস খুলা থাকে এক মাস এদিক ওদিক শুধু চলো। কার কথা কেবা শুনে না শুন্লে দ্যায় তাড়া ॥ নানা হে ... । নানা-নাতির প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা, নাচ, যন্ত্র সহযোগে দোহারদের ধুয়া পরিবেশন।

গম্ভীরা গানের সমাপ্তি হয় বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে দর্শক শ্রোতা ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির (গম্ভীরা শিল্পীরা তাকে ‘বড় নানা’ বলে সম্বোধন করে থাকেন) মনে সমস্যাটি সম্পর্কে নতুন অনুভূতি জাগিয়ে তা সমাধানের পদক্ষপে গ্রহণের আবেদন জানানোর মধ্য দিয়ে। গম্ভীরা অনুষ্ঠানের উৎকর্ষ নির্ভর করে দলনেতার সাফল্য ও ব্যর্থতার ওপর।

বর্তমানে উল্টো হয়ে গেছে। নানা হয়ে গেছে প্রাচীন যুগের মানুষ। বর্তমান বিষয়-আশয় সম্পর্কে তার ধারণা খুবই কম। বর্তমান বিষয় সম্পর্কেও তার ধারণা বা অভিজ্ঞতা নেই। নাতি বর্তমান সময়ের আধুনিক কিছুটা শিক্ষতি মানুষ। সমাজের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সচেতন। এখন নাতি-নানাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়। এই গম্ভীরা সাধারণত ২০ মিনিট থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

গম্ভীরার পোশাক চিরকালীন গ্রাম বাংলার পোশাক। গ্রাম বাংলায় সাধারণ বৃদ্ধরা খালি গায়ে থাকে লুঙ্গি পরে। জোয়ানরা সেন্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে থাকে। ঠিক সেরকম গম্ভীরাতেও নানা খালি গায়ে লুঙ্গি পরে থাকে। হাতে থাকে ছোট লাঠি। যেটা গরু বা ছাগল চড়ানোর কাজে লাগে। আর নাতি থাকে লুঙ্গি আর ছেঁড়া সেন্ডো গেঞ্জি পরে। দোহার, তবলা বাদক, ঠুঙরি বাদক এরা সাদারণত রঙিন পাঞ্জাবি পরে আর সাদা পায়জামা পরে। দোহার বা বাদকদের নির্ধারিত কোনো পোশাক নেই। নানা-নাতির আছে। তবে বর্তমানে কোনো কোনো গম্ভীরাতে নাতিকে কোয়ার্টার প্যান্ট পরতে দেখা যায়। নানা মূলত একটু বয়স্ক ব্যক্তি হয়ে থাকেন; পঞ্চাশোর্ধ, চুল দাড়ি পাকা। আর অন্যদিকে নাতি সদ্য যুবক।

গম্ভীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেছে—এ অঞ্চলের প্রতিটা মানুষ গম্ভীরাজাত। ছোট বড় সবাই গম্ভীরা কিছু না কিছু করতে পারে। গম্ভীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুধু লোকজ সংস্কৃতি হয়ে নাই বরং এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জাতীয় সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কারণ এর মধ্যে আছে একেবারে গ্রামের সাধারণ মানুষের রসালো সংলাপ। এই রসালো সংলাপের কারণেই অত্যন্ত জনপ্রিয় লোকজ সংস্কৃতি এটি। এ সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এলাকার সংস্কৃতিবান প্রত্যেক মানুষ। এ সংস্কৃতির চর্চা ধরে রাখার জন্য চাঁপাইগম্ভীরাসহ বিভিন্ন নামে বেশ কয়েকটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। সে সব সংগঠনে নিয়মিত চর্চা হয় এ কথা বলা যাবে না, তবে মোটামুটি চর্চা অব্যাহত আছে বলা যায়। তরুণ ও যুবকরা মূলত গম্ভীরার চর্চা ধরে রেখেছে। আগের মতো এখন আর তেমনভাবে প্রৌঢ়রা গম্ভীরার সঙ্গে যুক্ত নেই বলা যায়; হাতে গোনা দুএকজন ছাড়া।

বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির চাপে পড়েই বলা যায় গম্ভীরার চর্চা আগের মতো আর নেই। পূর্বে অনুষ্ঠানের ওপর গম্ভীরানির্ভর করত না। যে কোনো সময় যে কোনো উপলক্ষকে কেন্দ্র করেই গম্ভীরা শুরু হয়ে যেত। আবার সমাজ সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গম্ভীরা পরিবেশন হতো যত্রতত্র। অথবা সরকারি বিশেষ আদেশ বা জনমত গঠনের জন্যও গম্ভীরার সহযোগিতা নিত। বর্তমানে সে ধারাবাহিকতা অনেকাংশে কমে গেছে। বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া গম্ভীরা পরিবেশিত হয় না। সরকারি হস্তক্ষেপে বা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে গম্ভীরার চর্চাও এখন অনেকাংশে কমে গেছে। সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীগুলোও সেভাবে নিয়মিত গম্ভীরার চর্চা করে না এখন আর। হাতে গোনা দুএকটা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী গম্ভীরার চর্চাকে কিছুটা টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমানে কিছুটা পারিপার্শ্বিক চাপে পড়েও গম্ভীরার চর্চা কমে গেছে অনেকাংশে।

গম্ভীরা সেই আদিকাল থেকেই ব্রিটিশ আমলের বৃহত্তর মালদাহ জেলায় এর প্রচলন ছিল। দেশ ভাগের পরও এর চর্চা ছিল নিয়মিত। সর্বশেষ দেশ স্বাধীন হলে গম্ভীরার রূপের পরিবর্তন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানর প্রথম গম্ভীরা শুনে মুগ্ধ হয়ে তার চর্চা অভ্যাহত রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তার প্রয়াণের পর কিছু দিন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও পরে তার ধারাবাহিকতা আর নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় গম্ভীরা শিল্পী মানি রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতে জানা যায়—যেহেতু গম্ভীরায় সমাজের অসঙ্গতিগুলো সমাজের মানুষকে জানানো হয়; সেহেতু তা সাধারণত শাসকের বিপক্ষেই চলে যায় বেশিরভাগ সময়। যার কারণে গম্ভীরার শিল্পীরা মাঝে মাঝে হুমকি ধামকির শিকারও হয়। আর পৃষ্ঠপোষকতারও ঘাটতি পড়ে গেছে বর্তমানে। এ কারণে এখন অনেকে আর তেমনভাবে গম্ভীরা চর্চায় আগ্রহ দেখায় না।

তবে গম্ভীরা যেহেতু খুবই জনপ্রিয় নাট্যসংগীত তাই জনসচেতনতা প্রচারে মাঝে মাঝে ব্যবহারও হয় বলে কেউ কেউ মাঝে মাঝে এর চর্চ করে থাকেন। তবে এর সংখ্য অত্যন্ত নগণ্য। গম্ভীরা চর্চার এ ধরনের ঘাটতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের তথা সারা দেশের এ জনপ্রিয় লোকসংগীত কিছুটা হলেও হুমকির মুখে পতিত হয়েছে বলা যায়। তাছাড়া আগে গম্ভীরা গানের মধ্যে বেশ কয়েকটা সুর প্রচলিত ছিল। এখন চর্চার অভাবে বা গম্ভীরা নিয়ে ভাবনার অভাবে মাত্র একটা সুরে এসে দাঁড়িয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে হয়ত গম্ভীরার স্বর্ণ যুগ ফিরে আসত। জনগণ উপভোগ করতে পারত গম্ভীরার বিভিন্ন সুর। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন গম্ভীরা আট-নয়টি সুরে গাওয়া হতো। সে সব সুর এখনকার প্রজন্ম মোটেও জানে না। কালের গর্ভে সে সব সুর হারিয়ে গিয়ে কোনো রকমে একটি সুর নিয়ে জনপ্রিয় এ নাট্যসংগীতটি টিকে আছে নিবু নিবু করে।

ড. ইমদাদুল হক মামুন : ইন্সট্রাক্টর, বাংলা বিভাগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও গবেষক

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাতক্ষীরা-৪ আসনে কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর রাখার দাবিতে বিএনপির স্মারকলিপি

জকসুর দাবিতে জবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

স্ত্রীকে নোরা ফাতেহির মতো বানাতে না খাইয়ে রেখে ব্যায়াম করান স্বামী

‘ভুল’ আংটি দিয়ে প্রেমিকাকে ‘প্রপোজ’ করেন রোনালদো!

ঢাকা ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফের সংঘর্ষ, স্থায়ী সমাধান চান রমনার ডিসি

বসুন্ধরা শপিংমলে ক্লাব হাউসের ফেস্টিভ কালেকশন উন্মোচন

কালো তালিকাভুক্ত হলেন ৭১ শিক্ষক

দায়িত্ব নিয়েই হুঁশিয়ারি দিলেন সারোয়ার আলম

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইআরআইর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

পাকিস্তানের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি অনুমোদন

১০

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইসির রোডম্যাপ এ সপ্তাহে আর ঘোষণা হচ্ছে না

১১

ভরা মৌসুমেও ইলিশ নেই, হতাশ জেলেরা

১২

গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

১৩

জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করলেন তামিম

১৪

পেছনের পকেটে মানিব্যাগ রাখেন? অজান্তেই ডেকে আনছেন যে অসুখ

১৫

দিনাজপুরে পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবন নিয়ে কর্মশালা

১৬

মাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে ধরা পড়লেন চীনা গুপ্তচর

১৭

নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও ৬ বিভাগে ভারী বৃষ্টির শঙ্কা

১৮

সাদাপাথর লুট, এবার তদন্তে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ

১৯

মালয়েশিয়া যাচ্ছেন নাহিদ ইসলাম

২০
X