

ব্রাজিলের রিও দে জেনেইরোতে মাদকচক্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত পুলিশি অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজ্যের পাবলিক ডিফেন্ডারস অফিস এই নতুন তথ্য জানিয়েছে, যা আগের সরকারি হিসাবের দ্বিগুণেরও বেশি।
প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সর্বশেষ হালনাগাদ হিসাবে নিহতের সংখ্যা ১৩২ জনে দাঁড়িয়েছে।’ সংস্থাটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আইনি সহায়তা প্রদান করে থাকে।
এর আগে রিও রাজ্যের গভর্নর ক্লাউদিও কাস্ত্রো নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬০ বলে জানিয়েছিলেন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘মৃতদেহগুলো মর্গে নেওয়া হচ্ছে, তাই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবারের অভিযানে প্রায় ২,৫০০ সদস্য অংশ নেয়। তারা দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অপরাধচক্র ‘কমান্ডো ভারমেলিও’ (রেড কমান্ড)-এর বিরুদ্ধে উত্তর রিওর পেনহা কমপ্লেক্স ও আলেমাও কমপ্লেক্স এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে পুলিশের চার সদস্যও প্রাণ হারান।
অভিযানটির পর রাজ্যজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ। স্থানীয় পেনহা কমপ্লেক্সের এক নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে এএফপি-কে বলেন, ‘এটা কোনো অভিযান ছিল না। রাষ্ট্র এখানে গণহত্যা চালাতে এসেছে—মানুষকে হত্যার জন্য।’
৩৬ বছর বয়সী স্থানীয় অধিকারকর্মী রাউল সান্তিয়াগো বলেন, ‘অনেককে মাথার পেছনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কারও পিঠে গুলি লেগেছে। এটাকে কোনোভাবেই জননিরাপত্তা বলা যায় না।’
তবে গভর্নর কাস্ত্রো বলেছেন, নিহতদের সবাই অপরাধী এবং ঘটনাগুলো মূলত বনের ভেতরে ঘটেছে, যেখানে সাধারণ মানুষ থাকার কথা নয়। তার দাবি, ‘ওই দিন কেউ বনে হাঁটছিল না। প্রকৃত ভুক্তভোগী কেবল আমাদের পুলিশ সদস্যরাই।’
উল্লেখ্য, ব্রাজিলে ফাভেলা অঞ্চলে পুলিশের অভিযান নতুন কিছু নয়। শুধু ২০২৪ সালেই রিওতে পুলিশের অভিযানে ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
আগামী সপ্তাহেই রিওতে বসছে সি৪০ ওয়ার্ল্ড মেয়রস সামিট এবং প্রিন্স উইলিয়ামের আর্থশট প্রাইজ প্রদান অনুষ্ঠান। এরপর ১০ নভেম্বর থেকে অ্যামাজনের বেলেম শহরে শুরু হবে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বড় আন্তর্জাতিক আয়োজনের আগে এই ধরনের ‘বৃহৎ পুলিশি অভিযান’ প্রায়ই চালানো হয়, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সূত্র : আল জাজিরা ও রয়টার্স
মন্তব্য করুন