কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ০৩:৪০ পিএম
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩, ০৩:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিদ্রোহের পর এবার পুতিন কোন পথে হাঁটছেন?

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত

ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার ক্ষমতায় এসেছিলেন দুই দশকেরও বেশি সময় আগে। এরপর তার কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহ। বাহিনীটির নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন পুতিনের জেনারেলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিদ্রোহ শুরুর পর ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ায় যা যা ঘটেছে, তা যেমন ছিল শ্বাসরুদ্ধকর, তেমনি ছিল কল্পনাতীত।

তবে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থেকে সরে আসে ওয়াগনার বাহিনী। লুকাশেঙ্কো জানিয়েছিলেন, ওয়াগনার বাহিনীর মস্কো অভিমুখী পদযাত্রা স্থগিত করতে তিনি প্রিগোজিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় প্রিগোজিন তার প্রস্তাব গ্রহণে সম্মত হন বলেও জানায় লুকাশেঙ্কোর কার্যালয়। তবে এ সমঝোতা নিয়ে এখনো অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। সমঝোতা অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রিগোজিনের।

এদিকে সংকট কাটলেও প্রেসিডেন্ট পুতিন হঠাৎ করেই বেশ দুর্বল এবং নাজুক হয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, রাশিয়ার এই বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে খোলাসা হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট পুতিনের শাসন কতটা নড়বড়ে।

ওয়াগনার বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর যেভাবে তাদের সঙ্গে পুতিন সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছেন, সেটি তার জন্য এক অপমানজনক পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে।

কী কারণে এমন সমঝোতায় যেতে হলো পুতিনকে? এই বিদ্রোহের পর পুতিন কি তার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবেন? ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব দ্য ওয়ার বলছে, সামনের দিনগুলোতে ক্রেমলিনকে অনেক অস্থির পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

সংস্থাটি লিখেছে, ‘ওয়াগনার বাহিনীর সঙ্গে আপাত সমঝোতার মাধ্যমে সংকট এড়ানো গেলেও প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকার এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধের বিরাট ক্ষতি করেছে।’

সংস্থাটি পর্যালোচনায় আরও বলেছে, এই বিদ্রোহের ফলে পরিষ্কার হয়েছে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্বলতা। এই সংকটের মধ্যে এ-ও প্রকাশ পেয়েছে, পুতিন অভ্যন্তরীণ হুমকি মোকাবিলায় সময়মতো নিজের নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহারে সক্ষম নন। এ ছাড়া এসব বাহিনীর ওপর তার কর্তৃত্বও যেন আর আগের মতো নেই।

তবে শনিবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বেশ কঠোর, গুরুগম্ভীর দেখা যায়। তবে সমঝোতার ঘোষণার পর পুতিনকে এখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, নতুন করে কোনো ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই প্রেসিডেন্টের।

বিবিসির রাশিয়া এডিটর স্টিভ রোজেনবার্গ বলছেন, শনিবার জাতীয় টেলিভিশনে ভ্লাদিমির পুতিনকে কঠোর দেখা গেলেও সমঝোতার পর তাকে তেমন দেখাচ্ছে না।

রোজেনবার্গ বলেন, ‘এই সমঝোতার বিস্তারিত আমরা এখনো জানি না। তবে সমঝোতার পর তাকে একদমই শক্তিশালী বলে মনে হচ্ছে না।’

এমন সমঝোতায় আসতে বাধ্য হওয়ার পর পুতিন এখন কী করবেন, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পোল্যান্ডের একজন এমপি রাডেক সিকোরস্কি মনে করেন, প্রিগোজিনের বিদ্রোহ পুতিনকে দুর্বল করলেও এটি তার ক্ষমতাকে সংহত করার একটি সুযোগও এনে দিয়েছে।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাডেক সিকোরস্কি বলেন, ‘কোনো বাধা ছাড়াই রাশিয়ার ভেতরে শত শত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে একটি সশস্ত্র বাহিনী। এর ফলে পুতিনের দুর্বলতা বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে।’

সিকোরস্কি বলেন, ‘পুতিন এখন কর্তৃত্ববাদী এবং নিষ্ঠুর হয়ে উঠবেন। নিজের ক্ষমতা সংহত করতে তিনি শুদ্ধি অভিযান চালাবেন। যাদের দোদুল্যমান বলে মনে হবে, তাদের বিরুদ্ধে নেবেন শক্ত ব্যবস্থা।’

বিবিসির রুশ বিভাগের সাংবাদিক ওলগা ইভশিনাও বলেছেন, এখন অবশ্যই পুতিন তার ক্ষমতা দেখাবেন। এ ঘটনার পর রাশিয়ায় খর্ব হতে পারে অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা। নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে টেলিগ্রাম চ্যানেলসহ সংবাদমাধ্যম।

তবে ওলগা ইভশিনা বলছেন, এটি যদি রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতার সংকট হিসেবে দেখা হয়, তাহলে তা ঠিক হবে না। কারণ বিদ্রোহের পরই রাশিয়ার আঞ্চলিক গভর্নররা মস্কোর প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছে। ১৯৯১ সালের তুলনায় যেটি একদমই ব্যতিক্রম। ওই সময় অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টার বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়েছিলেন অনেক আঞ্চলিক নেতা।’

লন্ডনে ২০০৬ সালে তেজস্ক্রিয় বিষ প্রয়োগ করে আলেক্সান্দার লিটভিনেনকো নামে পুতিনের এক সমালোচককে হত্যা করা হয়েছিল। এ হত্যার পেছনে রুশ গুপ্তচরদের হাত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়।

আলেকজান্ডার লিটভিনেনকোর স্ত্রী মারিনা লিটভিনেনকো মনে করেন, মানুষকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যেই পুতিনের নিষ্ঠুর ভাবমূর্তি গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়। তবে এবারের ঘটনা নতুন বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন মারিনা। তিনি বলেন, ‘এবারের ঘটনায় বোঝা যায় পুতিন এমন কেউ লোক নন যিনি রাশিয়ার সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আসলে তার নিয়ন্ত্রণে সবকিছু নেই।’

প্রেসিডেন্ট পুতিনের অধীনে ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রুশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মিখাইল কাসিয়ানভ। তবে তিনি এখন পুতিনের বড় সমালোচক। তিনি বলছেন, এবারের ঘটনাবলির মাধ্যমে শুরু হয়েছে পুতিনের পতন।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিখাইল কাসিয়ানভ বলেন, ‘পুতিনের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করে দিয়েছেন প্রিগোজিন। পুতিন তাকে ক্ষমা করতে পারবেন না। সেজন্য এখন বড় প্রশ্নের মুখে থাকবে প্রিগোজিনের জীবন। পুতিন এখন বড় সংকটে রয়েছেন।’

এদিকে ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহের পর রুশ সরকার এখন সংকটে পড়েছে বলে স্বীকার করছেন পুতিনের সাবেক উপদেষ্টা সের্গেই মারকভ। তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনায় ইঙ্গিত পাওয়া যায়, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সব অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের। কাজেই এখন নিজের নীতি বদলাতে হবে ভ্লাদিমির পুতিনকে। সামরিক বাহিনীর একটি অংশ ও রুশ সমাজের অন্যান্য অংশের দাবির মুখে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতার জন্য কঠোরতর অবস্থান নিতে হবে।’

সের্গেই মারকভ আরও বলেন, পুতিনের জন্য গুরুতর অবস্থা তৈরি করেছে ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহ। রাশিয়ায় বড় গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারতো এটি। সের্গেই মারকভ মনে করেন, এখন চরম বিপদে রয়েছে রাশিয়ার পরিস্থিতি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জোটে ভাঙন, ইসরায়েলে পতনের মুখে নেতানিয়াহুর সরকার

মোদিকে আম পাঠানোর প্রশ্নের জবাব দিলেন প্রেস সচিব 

ব্যবসা সম্প্রসারণে কমলো নীতি সুদহার

মার্কিন শুল্কনীতি নিয়ে কাজ করবে বিএনপি : আমীর খসরু 

স্বাচিপ নেতাকে বিভাগীয় প্রধান করতে হাসপাতাল পরিচালককে চাপ

ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে টিকটক করায় যুবকের কারাদণ্ড

ভূমি অফিসের নথিপত্রের ছবি তোলার সময় আ.লীগ নেতা ধরা

দরপতন ঠেকাতে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রিয় মানুষের সঙ্গে একটা দিন অযথাই বকবক করতে চান চমক

চরকিতে মুক্তি পাচ্ছে ‘দেয়ালের দেশ’

১০

পরীক্ষার সিটে বসা নিয়ে সংঘর্ষ, আটক ১৮

১১

১০ হাজার বাস রিজার্ভ, রাজধানীতে ঐতিহাসিক সমাবেশের প্রস্তুতি জামায়াতের

১২

১৪ হাজারে বিক্রি হলো দুই ইলিশ

১৩

মুজিববাদী আদর্শ ৫০ বছর ধরে দেশকে বিভাজিত করে রেখেছিল : নাহিদ ইসলাম 

১৪

বনশ্রীতে আবাসিক ভবনে আগুন

১৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে হস্তক্ষেপ বন্ধে গণভোট চায় বিএনপি

১৬

শান্তির হ্যাটট্রিকে দুই ভেন্যুর ম্যাচে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়

১৭

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে বিভক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন

১৮

বকা দেওয়ায় মা-মেয়ের বিষপান

১৯

গণঅভ্যুত্থানে ‘মহাকাব্যিক’ বীরত্বগাথা রচনা করে গেছেন জুলাই শহীদরা : প্রধান উপদেষ্টা

২০
X