কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘আমরা গাজায় যা করেছি, তার জন্য আমি দুঃখিত’, বললেন ইসরায়েলি সেনা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চালানোর একটি ছবি।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চালানোর একটি ছবি।

ইসরায়েলের সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইয়োতাম ভিল্ক ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজার বাফার জোনে ইসরায়েলি সেনারা একটি নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্য আজও তার মনে রয়ে গেছে।

ভিল্ক আরও জানান, গাজা উপত্যকার বাফার জোনে অননুমোদিত ব্যক্তি দেখলে গুলি করার নির্দেশ ছিল এবং তিনি নিজে অন্তত ১২ জনকে এভাবে নিহত হতে দেখেছেন। তবে ওই কিশোরের হত্যার দৃশ্য তাকে সবচেয়ে বেশি তাড়িত করেছে।

এদিকে ইসরায়েল ও হামাস বুধবার (১৫ জানুয়ারি) একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে। খবর এপি।

উল্লেখ্য, গাজা সংঘাতের মধ্যে এমন অনেক ইসরায়েলি সেনা রয়েছেন যারা যুদ্ধের পক্ষে নন। কিছু সেনা যুদ্ধ বন্ধের জন্য সরকারি পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। তাদের মতে, তারা এমন কিছু দেখেছেন বা করেছেন যা নৈতিকতার সীমা ছাড়িয়েছে। এর ফলে তারা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং সরকারকে যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটতে আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সাতজন ইসরায়েলি সেনা সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলেছেন, তারা যে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছেন, তা তাদের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জানিয়েছে, তাদের বলা হয়েছিল নির্দোষ ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে, যেগুলোর মধ্যে কোনো হুমকি ছিল না। তারা লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞেরও সাক্ষী ছিলেন।

‘সোলজারস ফর দ্য হোস্টেজেস’ নামক একটি গ্রুপ গঠন করেছে ইসরায়েলের সাবেক সেনারা, যারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। তারা তেল আবিবে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি উদ্ধৃতি ‘অন্যায্য আইন অমান্য করাটা নৈতিক দায়িত্ব’ শেয়ার করা হয়। তাদের মতে, গাজা উপত্যকায় যে অন্যায় হচ্ছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তাদের মানবিক দায়িত্ব।

ইসরায়েলি সেনাদের ওপর গাজার যুদ্ধের গভীর প্রভাব ফেলেছে। অসংখ্য সেনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন এবং তাদের অনেকেই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে নিয়মিত থেরাপি নিচ্ছেন। মানসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যুদ্ধের এমন চরম পরিস্থিতি সেনাদের ঘুমের সমস্যা, দুঃস্বপ্ন এবং অপরাধবোধের সৃষ্টি করছে।

ইসরায়েলের সাবেক এক পদাতিক সেনা এপিকে বলেন, তিনি অপরাধবোধে ভুগছেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে প্রায় ১৫টি বাড়িঘর অযথা পুড়িয়ে দিতে দেখেছেন তিনি। সাবেক এই সেনা বলেন, ‘আমি দেশলাই জ্বালাইনি, তবে আমি বাড়ির সামনে পাহারা দিয়েছিলাম। আমি যুদ্ধাপরাধে শামিল হয়ে গেলাম।’

নাম প্রকাশ না করে ওই পদাতিক সেনা বলেন, ‘আমরা গাজায় যা করেছি, তার জন্য আমি দুঃখিত।’

ইসরায়েলি সেনাদের এসব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং জাতিহত্যার অভিযোগ তুলেছে। এসব অভিযোগের তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। যদিও ইসরায়েল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তারা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে যথাসাধ্য পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনারা তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, সেনারা নিজেই এই তদন্ত করে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

এভাবে দীর্ঘ ১৫ মাস গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার মধ্যে দিয়ে অনেক ইসরায়েলি সেনার তীব্র হতাশা ও অনুশোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করতে যান ছাত্রদল নেতা, অতঃপর...

ছাত্রীদের হলে পুরুষ স্টাফ দিয়ে তল্লাশি

দাম কমলো ইন্টারনেটের

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

১০

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

১১

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

১২

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১৩

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১৪

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১৫

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৬

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৭

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

১৮

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

১৯

মেয়ের জন্য চিপস আনতে গিয়ে প্রাণ হারান মোবারক

২০
X