গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত শতাধিক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৬ মে) শাফাক নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে মানবিক সংকট নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। চিকিৎসা ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৬ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। বেইত লাহিয়া, জাবালিয়া এবং গাজার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত উদ্বাস্তু শিবিরে আবাসিক ভবনগুলো লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, তাদের দল মধ্যরাত থেকে বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। হামলার তীব্রতার কারণে তারা এক হামলার স্থান থেকে আরেকটিতে দ্রুত ছুটে যাচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর গাজায় পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, খান ইউনিসের আল-ফুখারি এলাকা এবং ইউরোপীয় হাসপাতালের আশপাশের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ভবনে আটকে পড়া অসংখ্য পরিবারের ভাগ্য এখনও অজানা।
চিকিৎসা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, অব্যাহত বিমান হামলায় শত শত আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, যা চিকিৎসা সুবিধাগুলোর সক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অনেক আহত ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকটের কারণে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, গাজার পরিবারগুলো অনাহারে রয়েছে। সীমান্ত ক্রসিংয়ে জরুরি ত্রাণ আটকে থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষণে নিশ্চিত হয়েছে যে গাজা দুর্ভিক্ষ এড়াতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজায় জীবন বাঁচানোর সময় ফুরিয়ে আসছে। চলমান অবরোধের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল টম ফ্লেচার সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল এই সংকটের মাত্রা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থতার ভুল আমরা পুনরাবৃত্তি করতে পারি না। তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া ১১ হাজারের বেশি মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
মন্তব্য করুন