আলী ইব্রাহিম
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০২:২৮ এএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

৩০ ট্রাভেল এজেন্সির আয়কর নথি তদন্ত করছে এনবিআর

তদন্তে বেরিয়ে আসছে সম্পদের নানা তথ্য
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভবন। ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভবন। ছবি : সংগৃহীত

দেশের অন্যতম ট্রাভেল এজেন্সি ‘শেয়ার ট্রিপ’ অতিরিক্ত মুনাফা করতে এয়ারলাইন্সের টিকিট সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে গঠিত একটি কমিটি এ সিন্ডিকেটে শেয়ার ট্রিপের সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় আরও ৩০টি ট্রাভেল এজেন্সির জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথি তদন্ত করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সৌদি এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, গালফ এয়ারলাইন্স, আমিরাত এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যারাবিয়া, জাজিরা, ফ্লাই দুবাইসহ ১৬টি এয়ারলাইন্সের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) ও ৩০টি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক, পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কর ফাঁকি ধরতে তদন্ত শুরু করেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। সংস্থাটি চলতি মাসের শুরুতে যাবতীয় তথ্য চেয়ে চিঠিও দিয়েছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আয়কর গোয়েন্দাও তাদের কাজ শুরু করেছে। একই সঙ্গে জিএসএদের ম্যানেজারদের কর ফাইলও তদন্তের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা সূত্র।

জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব কালবেলাকে বলেন, ‘প্রবাসীরা আমাদের বড় সম্পদ। তারা দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করছেন। আর তাদের বিমান টিকিট নিয়ে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট করে আসছে। সরকার এই সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্রও জারি করেছে সরকার। এসব ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ও সংশ্লিষ্টদের আয়কর সংক্রান্ত বিষয়টি আমরা দেখছি। বিষয়টি নিয়ে আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেশকিছু অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়েছে। মোট কথা হলো, যারাই সরকারের কর ফাঁকি দেবে বা ফাঁকির চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধেই সরব থাকবে আয়কর গোয়েন্দা।’

সূত্র আরও জানায়, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে টিকিট সিন্ডিকেটে বিদেশি এয়ারলাইন্সের জিএসএ ও ট্রাভেল এজেন্সির সম্পৃক্ততা পেয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথি অনুসন্ধানে নেমেছেন আয়কর গোয়েন্দারা। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো হলো ট্রাভেলস, শেয়ার ট্রিপস লিমিটেড, সানসাইন এক্সপ্রেস ট্রাভেলস, আল গাজী ট্রাভেল লিমিটেড, জেএস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর, হাজী এয়ার ট্রাভেলস, রাজশাহী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর, ইস্ট-ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর, গোল্ডেন বেঙ্গল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর, হাসেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল মারিয়া, ভ্যালেন্সিয়া এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর, তালন করপোরেশন, ডায়নামিক ট্রাভেলস, এয়ার ট্রিপ ইন্টারন্যাশনাল, বি ফ্রেশ লিমিটেড, হাসান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর, আল ইমাম হজ কাফেলা, গালফ ট্রাভেলস, সুমা ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস, ভার্সেটাইল ট্রাভেলস, কিং এয়ার এভিয়েশন, আরবিসি ইন্টারন্যাশনাল, সাদিয়া ট্রাভেলস, ফ্লাই ফেয়ার ও গ্যালাক্সি ট্রাভেলস। মোট ৩০টি ট্রাভেলস মালিকের কর ফাইল তদন্ত করা হচ্ছে। চলতি মাসের শুরুতে তাদের ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়। কর ফাইলগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এরই মধ্যে বিদেশি সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের জিএসএ ইউনাইটেড লিঙ্ক লিমিটেডের এমডি আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ, তার স্ত্রী জাজিরা জিএসএ জেড এভিয়েশনের মেরিনা আহমেদ, সালাম এয়ারের জিএসএ এমএ লতিফ শাহরিয়ার জাহিদি এবং সাদিয়া ট্রাভেলস ও মিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ রৌশন আলীসহ বেশকিছু মালিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। আরও কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের কর ফাঁকির প্রমাণ গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। এসব করদাতা ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের (প্রোপ্রাইটরশিপ) নামে ব্যাংকে বা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত বা রক্ষিত যে কোনো মেয়াদি আমানত হিসাব (এফডিআর ও এসটিডি হিসাবসহ যে কোনো ধরনের বা নামের মেয়াদি আমানত হিসাব), যে কোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, যে কোনো ধরনের বন্ড, সঞ্চয়পত্র বা অন্য যে কোনো ধরনের সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিম বা অন্য যে কোনো ধরনের বা নামের হিসাব পরিচালিত বা রক্ষিত হিসাবগুলোর ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ বিবরণী ও ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানতের বিবরণী বা ঋণ মঞ্জুরিপত্রের তথ্যও চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের এয়ার টিকিটের উচ্চমূল্য কমানো ও এই সেক্টরে শৃঙ্খলা আনার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি একটি পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রে যাত্রীর নাম, পাসপোর্টের বিবরণ ও পাসপোর্টের ফটোকপি দিয়ে টিকিট বুকিং করা যাবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ফলে যেসব টিকিট নাম ছাড়া ব্লক করে রাখা হতো, সরকারি নির্দেশনায় এয়ারলাইন্সগুলো ব্লকগুলো ওপেন করে দেয় এবং কম্পিউটার রিজার্ভেশন সিস্টেমে সিট সহজলভ্য হয়ে যায়। এর ফলে সব এজেন্সি ও যাত্রীরা অনলাইনে ভাড়া দেখতে পারেন এবং ফ্লাইটে সিট খালি আছে কি না, সেটা তাদের কাছে উন্মুক্ত হয়। বিষয়টি দৃশ্যমান হয় এবং সবাই তাদের চাহিদা মতো টিকিট বুকিং করতে পারে। বাজারে সিটের যে কৃত্রিম সংকট ছিল, সেটা অনেকাংশে কমে যায়। ফ্লাইটের সিট সহজলভ্য হওয়ার কারণে এয়ারলাইন্সের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয় এবং টিকিটের মূল্য কমে আসে।

আটাব জানিয়েছে, গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা থেকে জেদ্দা, মদিনা, দাম্মাম—এই রুটগুলোতে টিকিটের মূল্য গ্রুপ নামেই প্রায় ১ লাখ টাকায় বিক্রি হতো এবং কম্পিউটার সিস্টেমে এটা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। আর সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিটের দাম ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সরকারের এই নির্দেশনার ফলে এখন ওইসব রুটের টিকিট ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। কিছু এয়ারলাইন্স ঢাকা-দাম্মাম, ঢাকা-রিয়াদ রুটের টিকিট মাত্র ৩৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি করছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দাম কমলো ইন্টারনেটের

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

১০

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১১

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১২

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১৩

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৪

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৫

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

১৬

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

১৭

মেয়ের জন্য চিপস আনতে গিয়ে প্রাণ হারান মোবারক

১৮

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় সংকটে মার্কিন ডলার

১৯

তারেক রহমান জুলাই বিপ্লবের মূল নেতৃত্বে ছিলেন : অধ্যাপক মোর্শেদ

২০
X