মোতাহার হোসেন, ঢাবি
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৩:০৪ এএম
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একদফার কর্মসূচি

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শেষ কোথায়!

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শেষ কোথায়!

দীর্ঘদিন ধরে একদফা দাবিতে আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল, অনশন, রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি করছেন তারা। এতে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে কয়েকজন হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এই আন্দোলনে জনদুর্ভোগও বেড়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শেষ কোথায়, এ নিয়ে নানা মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত কলেজে স্নাতকে পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য দুই ধরনের পদ্ধতি চালু রয়েছে। বিজ্ঞান অনুষদের ক্ষেত্রে সিজিপিএর এক ধরনের নিয়ম, আবার কলা ও বাণিজ্য অনুষদের ক্ষেত্রে এক ধরনের নিয়ম। একই কলেজে অনুষদ ভেদে দুই ধরনের নিয়ম মানতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। এটিকে বৈষম্য নীতি উল্লেখ করে সবার জন্য একই নিয়মের দাবি জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিজ্ঞান অনুষদে যে কোনো বর্ষে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে জিপিএ ২.০০ পেলেই পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন পাওয়া যায়। কিন্তু কলা অনুষদ ও বাণিজ্য অনুষদের সিজিপিএর ক্ষেত্রে ৪.০০ এর মধ্যে প্রথম বর্ষে ২.০০, দ্বিতীয় বর্ষে ২.২৫, তৃতীয় বর্ষে ২.৫০ না পেলে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। এ কারণে সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে ৩ বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত কলেজের কয়েকটি বিভাগে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা হলেও সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে, অন্তত ৭ থেকে ৯ মাস পর। এর মধ্যেই পরবর্তী বর্ষের ক্লাস, ইনকোর্স পরীক্ষা ও টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সে ক্ষেত্রে আগের বছরের পরীক্ষার ফলাফলে অনেক শিক্ষার্থী পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের জন্য সিজিপিএর শর্ত পূরণ করেন না। তাই টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিলেও শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় সেসব শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তাদের আগের বছরে ফিরে গিয়ে সব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এক বর্ষের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অন্য বর্ষে পরীক্ষা দেওয়া অসম্ভব বলে দাবি তাদের।

এ বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, আমি ক্লাস করেছি তৃতীয় বর্ষের। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছি। এখন আমাকে বলা হচ্ছে দ্বিতীয় বর্ষের সব পরীক্ষায় অংশ নিতে। তারা যদি ঠিক সময়ে ফল প্রকাশ করত তাহলে এমনটি হতো না। আমি এ সিদ্ধান্ত মানি না। সিজিপিএর শর্ত শিথিল করে আমাদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে হবে।

সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, একই কলেজে প্রমোশনের জন্য দুই ধরনের শর্ত থাকতে পারে না। পরীক্ষার ফলাফল পেয়েছি ৯ মাস পর। এরই মধ্যে আমরা ইনকোর্স ও টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু পরীক্ষার ঠিক আগমুহূর্তে জানতে পারি আমরা পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন পাব না। আমাদের দাবি একটাই সিজিপিএর শর্ত শিথিল করতে হবে এবং পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দিতে হবে।

এদিকে, সিজিপিএর শর্ত শিথিল করে সর্বোচ্চ তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন দিয়ে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গতকাল রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। আন্দোলনে যানজটের কারণে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করায় পুরো শহরে এর প্রভাব পড়ে। এতকিছুর পরও নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের ভাষ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় শিক্ষার মানকে অনুসরণ করে। শিক্ষার্থীদের দাবি ঢাবির মানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে তাদের দাবি মানা হচ্ছে না।

তিন বিষয়ে অকৃতকার্যদের বা সিজিপিএ শর্ত পূরণ করতে না পারা শিক্ষার্থীদের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের সুযোগ নেই উল্লেখ করে ঢাবি অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক এবং ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য গণমাধ্যমকে বলেছেন, সিজিপিএ শর্ত এবং অকৃতকার্যদের বিষয়টি আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি। এটি (সিজিপিএ শর্ত) মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম। সেদিক থেকে এখানে যদি কোনো ব্যতিক্রম না ঘটে তবে আমাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটানোর সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে যে দুবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সে জন্য আমাদের শিক্ষার্থীরাও পেয়েছে। এবার আমাদের আলাদা করে সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল কালবেলাকে বলেন, তারা পাস না করলে কী করা যাবে! তাদের অনেকে দু-তিনবার করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এভাবে তারা সুযোগ পেয়েই আসছে কিন্তু পাস করে না। এর পরও আমরা দেখি কী করতে পারি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দুটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শাহরিয়ার মাহমুদ অপু নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে আগামী মঙ্গলবার ঢাবি একটি মিটিং করবে। তারা জানিয়েছেন আমাদের বিষয়ে তারা পজিটিভ।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এ কলেজগুলোতে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এক দেয়াল ও ১৪ দরজা-জানালা রং করতে ৬৫৮ মিস্ত্রি!

এনসিসি জাতীয় কোনো ধারণার সাথে একমত হইনি : সালাহউদ্দিন

সাদিয়ার স্বপ্ন পূরণে পাশে পারভেজ মল্লিক

‘জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে আগামীতে কাদের সেবা করার সুযোগ দেবে’

শহীদ শিশু রিয়া গোপ হত্যার বিচারের আশ্বাস সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার

পাঠ্যপুস্তকে ভুল সংশোধনে শিক্ষকদের পরামর্শ চাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ঢাবির হল থেকে ছাত্রলীগ নেতা আটক 

বিএনপি নেতা প্রকৌশলী সেলিমের নেতৃত্বে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

মাহমুদুর রহমানের মায়ের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক

শেষ ওয়ানডের আগে শঙ্কায় শান্ত

১০

তারা কেমন পিআর পদ্ধতি চায়, প্রশ্ন নজরুল ইসলামের

১১

হাসিনার স্বজনরা গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণ জানালেন আলাল

১২

কেন ব্রিকস সম্মেলনে যাচ্ছেন না শি জিনপিং

১৩

দেশে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে কোথায়?

১৪

বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় নিজের সর্বনাশ করলেন যুবক

১৫

বিয়ে না করেই মা হচ্ছেন ভারতীয় এই অভিনেত্রী

১৬

পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না: ডা. তাহের

১৭

রথযাত্রা উৎসব মিলনমেলায় পরিণত হয় : ইসকন বাংলাদেশ

১৮

রিটার্ন জমা দিলে পাবেন যেসব ছাড়

১৯

ভয়াবহ চোটে কতদিনের জন্য মাঠের বাইরে মুসিয়ালা?

২০
X