সরকারি চাকরির সব গ্রেডে ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে এক দফা দাবি আদায়ে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করেছে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাটে রেলপথ ও সড়কপথ অবরোধ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে চট্টগ্রামের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টার পর থেকে চট্টগ্রাম ছাড়েনি মহানগর এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি ট্রেন।
এদিকে টাইগারপাস মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে দুপুর থেকে চলাচল করতে পারেনি কোনো গাড়ি। বন্ধ রয়েছে নিউমার্কেট, দেওয়ানহাট মোড়, আমবাগান, পাহাড়তলির পথের যানচলাচল। তবে জরুরি প্রয়োজনে ঘরে বসে থাকতে পারেননি অনেকেই। কেউ চাকরি, কেউ হাসপাতালে যেতে, কেউ বা অন্য প্রয়োজনে বেরিয়েছেন রাস্তায়।
তবে এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন রিকশাচালকরা। ২০ টাকার ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন তারা। প্রয়োজন থাকায় বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়ায় রিকশায় গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিউমার্কেট থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন সিআরবি-রেডিসন ব্লু হয়ে লালখান বাজার গিয়ে ঘুরে জিইসি অভিমুখে যাচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড়তলির পথ থেকে আসা যানবাহন সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনের পথ ধরে বের হচ্ছে লালখান বাজারে।
এদিকে টাইগারপাসের পথে আটকা পড়েছে শত শত গাড়ি। এসব যানবাহনের যাত্রীরা বেশিরভাগ হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। নগরের প্রবেশমুখ সিটি গেট, দুই নম্বর গেট, একে খান, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, অলংকার পর্যন্ত গণপরিবহনের সংখ্যা বেশ কিছুটা কম দেখা গেছে। সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত পরিবহনের সংখ্যাও বেশ কিছুটা কম।
লালখান বাজারে নিউমার্কেট থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ওয়াহেদ মালেক কালবেলাকে বলেন, টাইগারপাস মোড়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে গাড়ি ঘুরিয়ে সিআরবি হয়ে আসছে। সেদিকেও ধীরে ধীরে যানজট বাড়ছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার শফিকুল ইসলাম বলেন, দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে রেলপথ অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন ও কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ছেড়ে যেতে পারেনি।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক আবুল ফয়েজ মামুন বলেন, আমাদের এক দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে সকাল-সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছি। আমরা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটার কথা প্রস্তাব করেছি। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কোনোভাবেই নাতি-নাতনি নামক পোষ্য কোটা ছাত্রসমাজ মানবে না। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ও সেবাসংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে অধিক সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন হলে আমরা সেটিকে শতভাগ সমর্থন করি। অন্যান্য কোটাগুলোকে এই মুহূর্তে আমরা বাংলাদেশের পার্সপেক্টিভে প্রাসঙ্গিক মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে, সরকারের কাছে। যখনই সরকার কিংবা নির্বাহী বিভাগ কোনো ত্রুটিমুক্ত নির্বাহী আদেশ বা পরিপত্র জারির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে কমিশন গঠন করার নির্দেশ দেবেন এবং কোটা সংস্কারের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তখনই আমরা রাজপথ ছেড়ে পড়ার টেবিলে ফিরে আসব।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে দুপুরে দেখা যায়, মহানগর এক্সপ্রেসের যাত্রীরা ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে বসে আছেন। ট্রেনের যে শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে জানেনই না যাত্রীরা। তারা মনে করছেন, হয়তো অনেক সময় ট্রেন দেরি করে; আজও তেমনটাই করছে।
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হওয়ায় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা ম্যানেজারের রুমে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে যাত্রীরা একের পর এক প্রশ্ন করে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেন স্টেশন ম্যানেজারের ওপর। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় তখনই যাত্রীদের কিছু নিশ্চিত করতে পারছিলেন না স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
পরে যাত্রীরা টাকা ফেরত না দিলে রুম ছাড়তে রাজি না হলে তিনি মুঠোফোন অপর প্রান্তে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। ঘোষণা আসে, মহানগর এক্সপ্রেসের যাত্রীরা টাকা ফেরত পাবেন।
এ ঘোষণা পেয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান যাত্রীদের কাউন্টারে যোগাযোগ করতে বলেন। আর যারা অনলাইনে টিকিট কেটেছে তাদেরও টাকা ফেরত পাবেন বলে জানান।
তবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী ম্যানেজারের রুমে গিয়ে টিকিটের মূল্য ফেরত চান। পরে যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন