চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম রয়েছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ ও এপ্রিল—এ দুই মাস অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। তবে এ সময়ে সরকারিভাবে পুনর্বাসনের জন্য চাল দেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৪৬ শতাংশ জেলে তা পাননি। জেলেদের দাবি, কোনো কোনো পরিবারে দুই মাসের জন্য ৮০ কেজি চাল পর্যাপ্ত নয়। তা ছাড়া জেলেদের তালিকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের নাম রয়েছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলার মধ্যে চারটিতে সরকারি তালিকাভুক্ত ও পরিচয়পত্রধারী জেলের সংখ্যা ৫২ হাজার ৩৫১ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৪৪৬ জন, রায়পুরে ৭ হাজার ৯৯৮, রামগতিতে ২৩ হাজার ৯৬৯ ও কমলনগরে ১২ হাজার ৯৩৮ জন। নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধিত জেলেদের মাথাপিছু ৮০ কেজি করে ভিজিএফ চাল দেওয়ার কথা। তবে জেলায় ২৮ হাজার ৩৪৪ জেলের জন্য ২ হাজার ২৬৭ দশমিক ৫২ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বাকি ২৪ হাজার ৭ জন জেলের বরাদ্দই আসেনি।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম। এর মধ্যে হাইমচর থেকে রামগতির চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার লক্ষ্মীপুরের অংশ। জাটকা সংরক্ষণে সরকারের নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিত করতে নদীতে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।
সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমণীমোহন জেলেপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা থাকায় নদীতে যেতে পারছেন না জেলেরা। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বঞ্চিত জেলেরা নিজ বাড়িতে বা নৌকায় অলস সময় পার করছেন। নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিন যেতে না যেতেই অনেক জেলে পরিবারে এখন দিনে এক বেলা আহার জোগানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়েও রয়েছেন হতাশায়।
চর রমণীমোহন এলাকার জেলে পল্লীর সর্দার সৌরভ মাঝি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা আমরা মেনে চলছি। কিন্তু আমাদের দুর্দশা কেউ দেখে না। এ পল্লীতে দুই শতাধিক জেলে পরিবারে মধ্যে ৪০টি পরিবার সরকারি সহায়তা পেয়েছে। বাকিরা পায়নি। ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫৬ জেলে সরকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ওই বছর আরও ৫২টি কার্ডের জন্য আবেদন করা হলেও তিন বছরেও তা পাননি জেলরা। মৎস্য কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েও তারা কার্ড পাচ্ছেন না, জেলে হয়েও কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। অথচ জেলেদের সুবিধা নিচ্ছেন কৃষক, ব্যবসায়ীসহ অন্য পেশার লোকজন।’
সুবিধাবঞ্চিত জেলেদের সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ২৮ হাজার ৩৪৪ জেলের জন্য ২ হাজার ২৬৭ দশমিক ৫২ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা এরই মধ্যে বিতরণও করা হয়েছে। কার্ডধারী বঞ্চিত জেলেদের পরবর্তী সময়ে বরাদ্দ অনুযায়ী চাল বিতরণ করা হবে।
জেলে তালিকায় অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলে তালিকায় কিছুটা গরমিল থাকতে পারে। কারণ ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে জেলেদের তালিকা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন