প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিলেটের সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যার বিচার চেয়েছেন তার বড় ভাই জাবুর আহমদ। গত ২৮ জুলাই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তুরাবের পরিবার। ওই সাক্ষাৎকারের বিষয়ে তুরাবের ভাই জাবুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন। তিনি সবগুলো হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
জাবুর বলেন, ১৯৭১ সালের পর সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেনি। কোর্ট পয়েন্টকে তুরাব চত্বর নামকরণের অনুরোধ করলে প্রধানমন্ত্রী তা দেখবেন বলেও আশ্বস্ত করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও উপস্থিত ছিলেন।
জাবুর বলেন, পরিকল্পিতভাবে পুলিশ আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমার ভাইয়ের শরীরে ৯৮টি স্প্রিন্টার পাওয়া গেছে। আমার মাও বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, থানায় অভিযোগ করার ৭ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো আদালত পর্যন্ত মামলাটি যায়নি। এ ব্যাপারে সিলেটের সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা দেখা করব। তিনি সিলেটের সব সাংবাদিক ও সুধী সমাজের সহযোগিতা কমনা করেন।
জানা যায়, তুরাবের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ফহেতপুর গ্রামে। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে তুরাব ছিল সবার ছোট। যতরপুরের ১০৫ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তাদের বোন স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে থাকেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মাত্র দুই মাস আগে বিয়ে করেন এটিএম তুরাব। বিয়ের কিছুদিন পর যুক্তরাজ্যে চলে যান তার স্ত্রী তানিয়া ইসলাম। তুরাবকেও সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্রুত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু তা আর হলো না। নিমিষেই শেষ হয়ে গেল সব স্বপ্ন। শেষ দেখা হলো না তাদের। তুরাবের স্ত্রী তানিয়া বারবার ফোন দিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করছেন। স্বামীর শেষ স্মৃতিটুকু ব্যবহারের জিনিসপত্র-কাপড়চোপড় যেভাবে আছে সেভাবে রাখার অনুরোধ করেছেন তিনি।
ছেলের মৃত্যুর ১১ দিন পার হয়ে গেলেও স্বাভাবিক হতে পারেননি তুরাবের মা মমতাজ বেগম। সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা। আদরের ছেলেকে হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। সন্তানের স্মৃতি রোমন্থন করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
তুরাবের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামসুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের শরীরে ৯৮টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। গুলিতে তার লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথায় ঢিলের আঘাতও ছিল।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) ও অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখ বলেন, সাংবাদিক তুরাবের মৃত্যুর ঘটনায় আগেই পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছে। নিহতের ভাই জাবুর বাদী হয়ে আরেকটি অভিযোগ দিয়েছেন। দুটি একসঙ্গে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে জুমার নামাজের পর বন্দরবাজারে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। তুরাব জাতীয় দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মন্তব্য করুন