মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এ ছাড়া রায়ে বাকি তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন।
মামলার বাকি তিন আসামি হলেন- শিশুটির বোনের জামাতা সজীব শেখ, সজীবের ভাই রাতুল শেখ ও তাদের মা রোকেয়া বেগম পেয়েছেন খালাস।
এর আগে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানা থেকে মাগুরার বিচারিক আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে আসামিদের রায় পড়ে শোনানো হয়। এ সময় আসামিরা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাড. এহসানুল হক সমাজি বলেন, আদালতে আমরা প্রসিকিউশন কেইসের বর্ণনা ও অভিযোগ অনুযায়ী সকল আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। হিটু শেখের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, মেডিকেল সাক্ষ্য, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যসহ যা কিছু সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলিকে পর্যালোচনা ও সাম্প্রতিককালে উচ্চ আদালতের যে নজির ও অবজারভেশনগুলি রয়েছে সে অনুযায়ী হিটু শেখের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য আসামিদেরও খালাস দেওয়ায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ শেষে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করছি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল মাগুরার স্পেশাল পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, চাঞ্চল্যকর এই মামলায় দ্রুত ও সকল ধরনের আইনগত পদ্ধতি মেনে সকল আসামি ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে সপ্তাহের প্রতি কর্ম দিবসে সাক্ষ্যসহ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। একইসঙ্গে মামলার ২৯ জন সাক্ষীকে জেরা করছেন আসামিদের পক্ষে লিগাল এইড নিয়োজিত আইনজীবীরা।
আদালত প্রাঙ্গণে মামলার বাদী ওই শিশুর মা আয়েশা আক্তার জানান, রায়ে হিটু শেখের ফাঁসির আদেশ হওয়ায় তিনি খুশি। তবে অন্য তিন আসামির বেকসুর খালাস হওয়া ঠিক হয়নি। তিনি উচ্চতর আদালতে এ মামলার আপিল করার আহ্বান জানান।
গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে মামলার চার্জশিট জমা দেন। চার্জশিটে মামলার ৪ আসামিকেই অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি হিটু শেখকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহত শিশুর বোনজামাই সজিব শেখ ও তার ভাই রাতুল শেখকে খুন ও জখমের ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং বোনের শাশুড়ি জাহেদা বেগমকে তথ্য গোপনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ শনিবার মাগুরা সদরের নান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যায় ভুক্তভোগী ওই শিশু। ৫ মার্চ বুধবার রাতে বোনের শ্বশুর হিটু শেখ ওই শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যার চেষ্টা করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ওই শিশু মারা যায়।
এ ঘটনায় ৮ মার্চ নিহত শিশুর মা বাদী হয়ে ৪ জনের নামে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। ঘটনাটি নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ ও আলোচনার সৃষ্টি হয়।
মন্তব্য করুন