মরু অঞ্চলের ফল ‘সাম্মাম’ (রক মেলন)। সৌদি আরবে তরমুজ জাতীয় এ ফলের চাষ হয় অনেক। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সাম্মাম চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুর পহেলা গ্রামের কৃষক মো. মুস্তাকিম সরকার।
সাম্মাম সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের ফল। এরই মধ্যে সাম্মাম এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাম্মামের বাইরের অংশ হলুদ আর ভেতরে লাল। এ ফল খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। নতুন জাতের এই ফলের চাষ হওয়ায় মুস্তাকিমের সাম্মাম দেখতে আসছেন আশপাশের গ্রামের কৃষকরা। কেউ কেউ সাম্মাম চাষের পরামর্শও নিচ্ছেন মুস্তাকিমের কাছ থেকে।
উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বাণিজ্যিকভাবে এ চাষ করে তিনি সফলতা পান। আবহাওয়া অনুকূল ও বিক্রিতে দর ভালো পাওয়া গেলে এ চাষে ৬ লাখ টাকার ওপর ফলন বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে সরেজমিন উপজেলার আদমপুর গ্রামে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে মায়ের দোয়া বহুমুখী কৃষি প্রকল্প। এই প্রকল্প বছরজুড়ে নানা প্রকারের সবজি চাষ করলেও পাশাপাশি সাম্মাম ফল তরমুজ চোখে পড়ছে। মাচায় ফুলে-ফলে সাম্মাম আর মাটিতে তরমুজে ভরপুর হয়ে উঠেছে। চলছে নিয়মিত বাগানের পরিচর্যা। যেদিকে চোখ যাচ্ছে ওইসব ফল চোখে পড়ছে। গরু, ছাগল ও কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা পেতে বাগানের চারপাশে দেওয়া হয়েছে নেট জালের বেড়া।
কৃষক মোস্তাকিম সরকার বলেন, মোগড়া ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রায় ৯ বিঘা জমিতে মরুর ফল সাম্মাম ও তরমুজ ফল চাষ করি। এর মধ্যে প্রায় ১ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সাম্মাম ফল এবং ৮ বিঘা জমিতে দেশীয় পদ্ধতিতে তরমুজ রয়েছে। জমিতে সাম্মাম ও তরমুজ চাষ করতে সেচ, বীজ, চারা রোপণ, জমি ইজারা, সার,পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকার ওপর। এরই মধ্যে ফল বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারদর ভালো থাকলে এ দুটি বাগান থেকে ৬ লাখ টাকার ওপর ফল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, আসলে সাম্মাম ফলের তেমন কোনো রোগবালাই নেই, গাছে খুব সামান্য সার ও কীটনাশক দিতে হয়। আর এ ফল গাছের সঠিক চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন হলে একেকটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফল উৎপাদন করা সম্ভব। একেকটি সাম্মাম এক থেকে দেড় কেজির বেশি হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক পরামর্শে ও নিজেদের সঠিকভাবে পরিচর্যায় ফলন অনেকটাই ভালো হয়েছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি সাম্মাম খুচরায় ১৬০-১৭০ টাকা আর তরমুজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বাজারদর ভালো থাকলে আশা করছি এ চাষে দ্বিগুণ লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, মুস্তাকিম একজন উদীয়মান কৃষক। তিনি সব সময় নতুন নতুন কৃষিপণ্য চাষে আগ্রহী। কৃষি অফিসের প্রযুক্তিগত সহায়তায় তরমুজের মতো অনেকটা সংকর জাতের ফল সাম্মাম চাষ করেছে। ফলনও বেশ ভালো। আমরা চেষ্টা করব সাম্মাম চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে। তার পাশাপাশি কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পায় সেদিকটাও খেয়াল রাখব। কৃষি অফিস সব সময় কৃষকের পাশে আছে থাকবে।
মন্তব্য করুন