আসিফ পিনন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫১ পিএম
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামে গণপরিবহন ধর্মঘট স্থগিত

গণপরিবহন মালিক শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে চট্টগ্রামে ভয়াবহ গণপরিবহন সংকট সৃষ্টি হয়। ছবি : কালবেলা
গণপরিবহন মালিক শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে চট্টগ্রামে ভয়াবহ গণপরিবহন সংকট সৃষ্টি হয়। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রামে ডাকা পরিবহন ধর্মঘট ১২ ঘণ্টার মাথায় তা স্থগিত করেছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভার পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এর আগে ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্তিতি সামাল দিতে বৈঠকে ডাক দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। এ সময় সংগঠনটির নেতারা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে আলোচনায় বসেন। দুপুরে শুরু হওয়া আলোচনা শেষ হয় বিকেল ৬টার দিকে। সর্বশেষ আলোচনা শেষে কিছু দাবি দাওয়া তুলে ধরেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা কালবেলাকে বলেন, আপাতত আমরা ধর্মঘট স্থগিত করেছি। কিন্তু আমরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের নিরাপত্তা চায়। এখন থেকে কাপ্তাই সড়কে পুলিশ পাহারা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। যদি আমাদের কোনো গাড়িতে ফের হামলা হয়, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

এর আগে ধর্মঘট চলাকালীন সময় সরেজমিনে দেখা যায়, ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর ১২টায়। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ। সাতকানিয়া থেকে মাকে চিকিৎসক দেখাতে ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ পর্যন্ত আসেন ইব্রাহিম। মূল শহরে আসার প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরুত্ব পাড়ি দিতে বাসে চড়ে লাগে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। কিন্তু রোববার পুরো ৩ ঘণ্টায় সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চেপে নগরের প্রবেশমুখ নতুন ব্রিজ পর্যন্ত এসেছেন ইব্রাহিম। এইটুকু দুরুত্ব পাড়ি দিতে তীব্র গরমে হাপিয়ে উঠেছেন তিনি, সঙ্গে কাতরাচ্ছিলেন ছিলেন অসুস্থ মা। চট্টগ্রামে গণপরিবহন ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে এমনটাই দুর্ভোগে মুখে পড়েন ইব্রাহিম।

এভাবে ইব্রাহিম একা নয়। বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ। নতুন ব্রিজ এলাকায় বাস-মিনিবাস না পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে বাড়ির পথে যেতে কেউ ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়েন ট্রাকে, কেউ ভাড়া করেন মিনি ট্রাক। তুলনামূলক কাছাকাছি দূরুত্বে যারা পাড়ি দিচ্ছিলেন তাদের ভরসা ছিল ভ্যানগাড়ি কিংবা বাইক। বাইক-ট্রাক-ভ্যানগাড়িকে ভরসা করে অনেকেই গন্তব্যে যেতে পারলেও তল্পিতল্পা হাতে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন ফুটপাত কিংবা সড়কে। জেলা-উপজেলা থেকে কোনো গণপরিবহনও নগরীতে প্রবেশ করেনি। দূরপাল্লার গণপরিবহনেরও একই পরিস্থিতি। পরিবহন ধর্মঘটকে সকাল থেকে কার্যত চট্টগ্রাম অঞ্চল সড়ক পথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরপর বেলা গড়াতেই গণপরিবহন সংকটের সাথে পাল্লা দিয়ে তপ্ত রোদ যেন সেই দুর্ভোগে বাড়তি মাত্রা যোগ করে দেয়।

রোববার সকাল থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সিটি গেইট, নতুন ব্রিজ এলাকাসহ নগরের বিভিন্ন প্রবেশমুখে একই চিত্র দেখা গেছে। গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে মহাসড়ক-সড়ক ও প্রবেশমুখগুলো ছিল একেবারেই গণপরিবহন শূন্য। মূলত চট্টগ্রাম শহর থেকে ছেড়ে যাওয়া এবং চট্টগ্রামমুখী গণপরিবহন চলাচল একেবারেই বন্ধ ছিল।

এর আগে গত সোমবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী চুয়েট শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং তাওফিক হোসাইন নিহত হন। সহপাঠী মৃত্যুর ঘটনায় টানা চার দিন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় অবরুদ্ধ ছিল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়ক। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় প্রশাসন। এতে ছাত্রদের বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে ও ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘোষণার পরপর শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে থাকা ও মূল ফটকে রাখা দুটি বাসে তারা আগুন ধরিয়ে দেন।

পরে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণা থেকে সরে আসে চুয়েট কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে ঘোষণা হয় ৯ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের ক্ষতিপূরণ দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। রোববার ধর্মঘটের প্রথম দিনে সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ সংকট। দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা।

নগরের অন্যতম প্রবেশমুখ কাপ্তাই রাস্তা এলাকা। রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, রাজস্থলীসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে এ প্রবেশমুখ দিয়েই প্রতিদিন মূল শহরে যাতায়াত করে অন্তত ৮ লাখ মানুষ। দুর্ঘটনায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানা চারদিন সড়কটি অবরুদ্ধ ছিল। রোববারের ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে সড়কটি একেবারেই গণপরিবহনশূন্য হয়ে পড়ে। নগরের অন্যতম প্রবেশমুখ সিটি গেইট এলাকার চিত্রও ছিল একই রকম।

রাঙ্গামাটির বাসিন্দা খলিলুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘চুয়েটের দুজন স্টুডেন্ট এক্সিডেন্টের পর থেকে চারদিন দুর্ভোগ হয়েছে। শুনেছি এতদিন তারা আন্দোলন করেছে। আজকে শুনছি বাস চালকরা আন্দোলন করছে। আজকে কাপ্তাই রাস্তা মাথা পর্যন্ত এসেছি ট্রাকে চড়ে। এগুলো নিয়ে প্রতিদিন দুর্ভোগের মধ্যে আছি। এগুলো করে কি লাভ?’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হামলা

গণপরিবহন ধর্মঘট চলাকালে নগরের অক্সিজেন মোড় এলাকায় একটি বাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই বাসটি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ। বিকেল ৫টার দিকে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো সংশ্লিষ্ট থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানা গেছে। চুয়েট শিক্ষার্থীদের পাশে ক্যাব

এদিকে চুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এ সময় ক্যাবের নেতারা বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বা অন্য যারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই সরকারি দলের নেতা বা কর্মী। আর তারাই বিভিন্ন সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায়ের জন্য জনগণকে বারবার জিম্মি করেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকার দলীয় নেতাকর্মী হিসাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এধরনের কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত।

ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, গণপরিবহন, শ্রমিক ও মালিকরা দেশের আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শন করে বারবার দেশের জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় করার কারনে তারা বেপরোয়া হয়ে গণপরিবহনের লাইসেন্স, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যা করবে আর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার করতে চাইলেই মানুষকে জিম্মি করে ঘর্মঘট ডাকবে এটা নিছক বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়। তারা যদি আইনের শাসনে প্রতি বিশ্বাসী হয় তাহলে আইনগতভাবেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় হয়ে থাকলে তার প্রতিকার চাইতে পারতো।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৩ মে : নামাজের সময়সূচি

সোমবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

খেলাধুলাই পারে বাংলাদেশের মানুষকে এক কাতারে আনতে : জাভেদ ওমর

জরুরি বিভাগে ডাক্তার অনুপস্থিত, রোগীর মৃত্যু

পাইপলাইনে গ্যাস, ১০ বছরেও আবেদন করেনি কেউ!

নারায়ণগঞ্জে নারী কাউন্সিলর লাঞ্ছিত, অতঃপর...

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে বিএসপিএ স্পোর্টস কার্নিভাল

জামায়াতকে একমঞ্চে চায় ১২ দলীয় জোট

সৈয়দপুরে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ

১০

মেক্সিকোতে শক্তিশালী ভূমিকম্প, ধ্বসে পড়েছে রাস্তাঘাট

১১

‘সরকার দুর্নীতি দমন না করে বিএনপি দমনে ব্যস্ত’

১২

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে প্রণয় ভার্মার সাক্ষাৎ

১৩

ইউএস ট্রেড শো ২০২৪ / সেরা প্যাভিলিয়নের পুরস্কার জিতে শেষটা রাঙিয়ে তুলল রিমার্ক-হারল্যান

১৪

সোমবার রাতে কুতুবদিয়ায় পৌঁছবে এমভি আব্দুল্লাহ

১৫

জিপিএ-৫ পেল মেয়ে, দুশ্চিন্তায় রিকশাচালক পিতা

১৬

মুখস্থ শিক্ষার ওপর নির্ভরতা কমাতে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

১৭

রাশিয়ায় ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৭

১৮

বহুমুখী শিক্ষায় সীমাখালী ইসলামিয়া আইডিয়ালের ঈর্ষণীয় সাফল্য

১৯

অংকে ফেল করায় গলায় ফাঁস নিল কিশোরী

২০
X