বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ও ২৯ তারিখের হরতাল এবং পরবর্তী তিন দিনের অবরোধ-কর্মসূচিতে ঢাকায় ককটেল ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও দক্ষিণের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়নের পরিকল্পনায়। আর বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সাইদুল হাসান মিন্টু। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানান মিন্টু। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও মিন্টু এসব তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টু জানান, তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাংগঠনিক পদে ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বর্তমানে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব আছেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে আমি নাসিরুদ্দিন পিন্টুর সঙ্গে রাজনীতি করতাম। বর্তমানে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঙ্গে রাজনীতি করি। ২০১৩ সালে যখন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, বিএনপি নির্বাচন মানছিল না তখন নাসিরুদ্দিন আহমেদ পিন্টু জীবিত ছিলেন। তখন উনি আমাদের হার্ডলাইনে রাজনীতি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। তখন আমাদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ছিলেন রফিকুল আলম মজনু এবং হামিদুর রহমান হামিদের নির্দেশে আমরা হার্ডলাইনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। তখন আমি তাদের নির্দেশে ককটেল বানাতাম। তখন ছাত্রদল করতাম এবং মাঠপর্যায়ে রাজনীতি করতাম বলে আমাদের ওপর চাপ ছিল।
মিন্টু বলেন, সরকারকে চাপে ফেলতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশ আসে। যেহেতু আগেও আমি ছাত্রদল করেছি এবং মাঠে ছিলাম তাই আমার ওপর কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২৮ অক্টোবর সমাবেশের আগে খন্দকার এনাম, নয়ন, গাফফার, টুকু ভাইয়েরা কিছু নির্দেশ দেয়। কারণ ওনারা জানে আমি আগেও পিকেটিং করেছিলাম। বাশার নামে একজন আছে বোমা বানানোর কারিগর। বাশারকে আমি ১৬ অক্টোবর ফোন দেই। পরে সে বরিশাল থেকে ১৭ তারিখ ঢাকায় আসে। পরে আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানাই। বাশারকে ১৫০০ টাকা পাঠানো হয়। সে এই টাকা দিয়ে হাতবোমা তৈরির উপকরণ গান পাউডার সংগ্রহ করেন কুমিল্লা থেকে। বাশারকে আমার বাসায় নেই। পরে টুকু ভাই আমাদের কিছু কাজ বুঝিয়ে দেয় এবং ২০ হাজার টাকা দেয়। খন্দকার এনাম এবং রবিউল ইসলাম নয়নের নির্দেশে সাবেক ছাত্রদল নেতা আরমান আমাকে বলে- গাফফারের কাছে আরও কিছু উপকরণ আছে। ২৬ তারিখ থেকে হাতবোমা এবং ককটেল বানানো শুরু হয়। এরপর মহাসমাবেশের আগে ২০-২৫টা ককটেল নিয়ে যায় আমাদের কাছ থেকে। এরপর অবরোধ এবং হরতালের কর্মসূচি এলে আমাদের ওপর আবার ককটেল বানানোর নির্দেশ আসে। এরপর ৩১ তারিখ অবরোধে চানখাঁরপুলে একটা মিছিল করি। মিছিলের আগে মহানগরের নির্দেশে আমাদের কাছে কিছু হাতবোমা এবং ককটেল বানানো ছিল। চকবাজারের আরমান, হালিম, নাজু, সাদেক, আলতাফ এসব ককটেল সাথে নিয়ে যায়। মিছিলের পরে পুলিশের সঙ্গে আমাদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়, তখন কয়েকটা ককটেল চার্জ করা হয়। তখন এর মধ্যে দৌড়াদৌড়িতে পড়ে গিয়ে আমার হাত ভেঙে যায়।
মিন্টু বলেন- রাস্তাঘাটে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ আমরাও সাপোর্ট করি না। বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এগুলা করতে হচ্ছে। আমরা অরগানাইজ করে দিয়েছি আমাদের ছেলেদের। এখন আমরা ধরা পড়েছি। শুধু কি আমরাই দায়ী থাকব, আমি তো কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশেই সব করলাম।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ জানান, ২৮ অক্টোবরের ভিডিও, ছবিতে কমলাপুর রেলওয়ে অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের গাড়িতে আগুন দেওয়া ও পুলিশকে মারধর করতে দেখা গেছে। পুলিশকে গুরুতর আহত করে পুলিশের দিকে অস্ত্র তাক করতেও দেখা গেছে তাদের। ঘটনায় জড়িতদের আটক করেছে পুলিশ। তারা এসবের দায় স্বীকারও করেছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সাইদ হাসান মিন্টু স্বীকার করেছেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু লাঠি নিয়ে পুলিশকে তাড়িয়েছে, তার ভিডিও আছে। এ ছাড়া আরও যেসব কেন্দ্রীয় নেতাকে আমরা আটক করেছি তারা আমাদের কাছে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের দায় স্বীকার করেছেন। তাদের নেতারা নানা ধরনের বিস্ফোরক বানিয়ে সরবারহ করতে বলেছেন।
মন্তব্য করুন