রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অচলাবস্থা। পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুখোমুখি। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ঘোষণা দিয়েছে, লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতি দিয়েছে কমপ্লিট শাটডাউনের ডাক। ফলে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতিতে কার্যত ফাঁকা হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন দপ্তর ও একাডেমিক ভবনে ঝুলছে তালা। বাস চললেও শিক্ষার্থী নেই। ফাঁকা দোকানপাটে বসে নেই কেউ। সকালে গেটগুলোয় দেখা গেছে বাড়িমুখী শিক্ষার্থীদের ভিড়।
বাংলা বিভাগের ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া বলেন, আমরা এখানে পড়াশোনার জন্য এসেছি, কিন্তু ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ও সংঘাতের কারণে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি, শিক্ষক-কর্মকর্তারা লাগাতার কর্মবিরতিতে রয়েছেন। সামনে রাকসু নির্বাচন হবে কি না, সেটাও আমাদের কাছে অস্পষ্ট। আমরা চাই দ্রুত সব কিছু স্বাভাবিক হোক।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ক্যাম্পাসে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও শঙ্কাজনক পরিস্থিতির কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বিভ্রান্ত। রাকসু নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে—নির্বাচন হবে কি, বা কবে হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, পোষ্য কোটা বাতিল ও ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের দাবিতে আমরা অনড় আছি। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখছি। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি নির্বাচনে সহযোগিতা না করেন, তাহলে নির্বাচন খুবই কষ্টকর হবে। ২০ তারিখের ঘটনায় সব প্যানেলের প্রচারে ভাটা পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছেন। প্রশাসনের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই উৎসবমুখর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের পালস বুঝে কাজ করতে হবে।
ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বলেন, আমরা পোষ্য কোটা বাতিলের পক্ষে। কিন্তু গুটিকয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী বেশি তৎপর, তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। এই পরিস্থিতিতে ঝড়ঝাপটা বেড়ে গেছে। হলে হলে খোঁজ নিয়ে দেখেন, অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছেন। এই মুহূর্তে আসলে নির্বাচন সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আমরা চাই, পূজার ছুটির পরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, এই পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছেন। আর পোষ্যকোটা নিয়ে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিস্থিতি নেই। প্রশাসন যদি স্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে তাহলে ২৫ তারিখেই রাকসু হোক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না করে রাকসু দিলে সেটার আমরা বৈধতা দেব না।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রশাসন ভবন থেকে বের হলে শিক্ষার্থীরা তাকে আটকে দেন। পরে তার বাসভবনে তালা ঝোলানো হয়। এরপর জুবেরী ভবনে ঢুকতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে হাতাহাতি হয়। উপ-উপাচার্যসহ কর্মকর্তাদের আটকে রেখে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। রাত ১টার দিকে উপাচার্য ড. সালেহ্ হাসান নকীব পোষ্যকোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন।
মন্তব্য করুন