গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর জীবনে এক বিশেষ সময়। এ সময় শুধু একজন মায়ের শরীরই নয়, গর্ভের শিশুরও প্রতিদিন ঘটে চলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। তাই এই সময়ে কী খাওয়া হচ্ছে, কী খাওয়া হচ্ছে না— এ দুটো বিষয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসই ভ্রূণের বেড়ে ওঠার সবচেয়ে সংবেদনশীল সময়। এ সময়ে সঠিক খাবার খেলে শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত হয়, আবার ভুল খাবার খেলে তৈরি হতে পারে নানা জটিলতা। তাই মায়ের শরীর ও গর্ভের শিশুর সুস্থতার জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস অপরিহার্য।
গর্ভাবস্থায় কী খাওয়া উচিত, আর কী একেবারেই এড়িয়ে চলা প্রয়োজন— এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সাভার ডিওএইচএসের প্রায়োরিটি হেলথ সেন্টারের পুষ্টিবিদ শারমীন নকশী। তার পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকায় যে খাবারগুলো রাখতে হবে এবং যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, তা নিচে তুলে ধরা হলো।
গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো খেতে হবে
ফলিক অ্যাসিড : প্রথম ১৩ সপ্তাহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সহায়ক। ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার হলো আখরোট, পেস্তা বাদাম, ডিম, ছোলা, মুগ, ব্রকলি, সূর্যমুখী বীজ, চিয়া সিড, কমলালেবু ইত্যাদি। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্টও নিতে হবে।
আয়রন : শিশুর শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে। আয়রন ঘাটতি হলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। পালংশাক, ডিম, মুরগির মাংস, খেজুর, কলা ইত্যাদি আয়রন সরবরাহ করে। আয়রন শোষণ বাড়াতে ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার (লেবু, কমলালেবু, আমলকি, আঙুর, আপেল ইত্যাদি) খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
জিংক : কোষ গঠনে অপরিহার্য। প্রতিদিন প্রায় ১১ মিলিগ্রাম জিংক প্রয়োজন। ডাল, ছোলা, ডিম, আমন্ড, কাজু, চিনা বাদাম, মুরগি, গরুর মাংস, দুধ ইত্যাদিতে জিংক পাওয়া যায়।
ক্যালসিয়াম : শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ। দুধ, দই, পনির, ব্রকলি, পালংশাক, টফু, তিল, আমন্ড ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি দরকার, তাই প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট রোদে থাকা প্রয়োজন।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড : শিশুর বুদ্ধি ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে। ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে শিশুর দৃষ্টি, বুদ্ধি ও ভাষার বিকাশে উপকার হয়।
প্রোটিন : প্রতিদিন প্রায় ৭০-১০০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। ডিম, মাংস, মাছ, ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস।
আঁশযুক্ত খাবার : কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে বাদামি ভাত, ওটস, ছোলা, মুগ, ভুট্টা, ব্রকলি, সবজি ইত্যাদি খেতে হবে। সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
অতিরিক্ত ক্যাফেইন : চা বা কফি বেশি খাওয়া যাবে না, কারণ এতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
আধসেদ্ধ ডিম, মাংস বা মাছ : এতে সালমোনেলা ও লিস্টেরিয়ার মতো জীবাণু থাকতে পারে, যা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। ডিম পোচ, হাফ-বয়েলড ডিম বা আধসেদ্ধ মাছ-মাংস খাওয়া যাবে না।
আনারস ও কাঁচা পেঁপে : এগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়ার পরামর্শ দেন না বিশেষজ্ঞরা।
পুষ্টিবিদ শারমিন নকশী বলেন, গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভ্যাসের বিষয়টি অবহেলা করার মতো নয়। কী খাবেন, কী খাবেন না— তা সঠিকভাবে না জানলে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই যে কোনো সমস্যা বা দ্বিধায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন