আমরা অনেকেই নিজের অজান্তেই কখনো না কখনো পরচর্চা বা গসিপে জড়িয়ে পড়ি। কেউ হয়তো বন্ধুকে কারও প্রেমের খবর বলছে, আবার কেউ অফিসে সহকর্মীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ফিসফাস করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মানুষ কেন এই কাজটা এত উপভোগ করে?
আরও পড়ুন: পেট ফুলে থাকা, ব্যথা, গ্যাস? কখন ডাক্তার দেখানো উচিত জেনে নিন
আরও পড়ুন: সুস্থ থাকতে রাতে ভাত খাবেন, না রুটি? যা বলছেন পুষ্টিবিদ
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ পরচর্চা করে নানা কারণে। যেমন :
- দলগত সম্পর্ক গড়তে
- বিনোদন পেতে
- তথ্য আদান-প্রদান করতে
- নিজের আবেগ প্রকাশ করতে
- সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে
এই কারণগুলো অনেক সময় ক্ষতিকর না হয়ে বরং সমাজে গঠনমূলক ভূমিকা রাখে বলেও মনে করেন অনেকে।
১. সম্পর্ক গড়ার মাধ্যম
যখন আমরা অন্যদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য ও মতামত ভাগাভাগি করি, তখন পরস্পরের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এতে একটি দলের মধ্যে বন্ধন তৈরি হয় এবং ‘একই দলের’ সদস্য হওয়ার অনুভূতি জাগে।
২. বিনোদন ও বিরতির উপলক্ষ
প্রতিদিনের একঘেয়ে জীবনের মধ্যে একটু উত্তেজনা বা মজা পাওয়ার সহজ উপায় হয়ে দাঁড়ায় পরচর্চা। বিশেষ করে তারকাদের বা পরিচিত কারও জীবনের গল্প শোনা অনেকের কাছেই আনন্দদায়ক হয়ে দাঁড়ায়।
৩. নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা
মানুষ অনেক সময় পরচর্চা করে অন্যের ব্যর্থতা বা দুর্ভাগ্য দেখে নিজের জীবনের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে। এতে সাময়িকভাবে আত্মমর্যাদা বা আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
৪. তথ্য সংগ্রহ ও শিক্ষা
পরচর্চার মাধ্যমে সমাজের নিয়ম-কানুন, মূল্যবোধ এবং কী গ্রহণযোগ্য আর কী নয়— এসব জানা যায়। কখনো এটি সতর্কতা হিসেবেও কাজ করে, যেমন— ওর সঙ্গে বেশি মিশো না, শুনেছি…।
৫. জীববৈজ্ঞানিক (বিকাশগত) কারণ
কিছু গবেষকের মতে, প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সমাজে টিকে থাকার জন্য পরচর্চা করত। অন্যের বিশ্বাসযোগ্যতা, চরিত্র, বা সম্ভাব্য বিপদের খবর রাখলে বাঁচার সম্ভাবনা বাড়ত। এই প্রবণতা এখনো মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে।
তবে পরচর্চা কি সবসময় ক্ষতিকর নয়?
না, সব পরচর্চা খারাপ না হলেও, এর নেতিবাচক দিকও আছে। যদি এটি কারও মান-সম্মান নষ্ট করে, মিথ্যে রটায় বা কাউকে কষ্ট দেয়, তাহলে তা অবশ্যই ক্ষতিকর।
তাই পরচর্চার সময় আমাদের উচিত
- সহানুভূতিশীল হওয়া
- অন্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা
- বিবেক ও সম্মানের সঙ্গে কথা বলা
পরচর্চা কি মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা?
হ্যাঁ, অতিরিক্ত পরচর্চা মানসিক ক্লান্তি, উদ্বেগ বা হতাশা তৈরি করতে পারে। অনেক সময় অপরাধবোধ, আতঙ্ক বা চরম ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক আঘাতও (যেমন— প্যানিক অ্যাটাক, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস) হতে পারে।
পরচর্চা কেন এত তৃপ্তি দেয়?
গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সিটোসিন নামের এক ধরনের হরমোন, যা ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার সঙ্গে জড়িত— সেটির নিঃসরণ বেড়ে যায় পরচর্চার সময়। এটি আমাদের আনন্দ দেয়।
যারা সবসময় পরচর্চা করে, তাদের ব্যক্তিত্ব কেমন?
এ ধরনের মানুষদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব, নাটকপ্রিয়তা ও বাড়াবাড়ি ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তারা অনেক সময় নিজের গুরুত্ব বাড়াতে বা অন্যকে ছোট দেখিয়ে নিজেকে ভিকটিম বা নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।
মস্তিষ্কে কী ঘটে যখন আমরা পরচর্চা করি?
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা যখন বন্ধুদের সঙ্গে গসিপ করে, তখন মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন নিঃসরণ ঘটে, যা এক ধরনের ভালোলাগার রাসায়নিক নিঃসরণ।
পরচর্চার মানসিক ও আবেগগত প্রভাব কী?
পরচর্চার লক্ষ্যবস্তু হলে তা আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান কমিয়ে দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে তা খাদ্যাভ্যাসে সমস্যা, হতাশা, আত্মহত্যার চিন্তা বা উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।
পরচর্চা কি খারাপ অভ্যাস?
হ্যাঁ, যদি তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে ছোট করা, অপবাদ দেওয়া বা ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য করা হয়, তাহলে তা সমাজে সম্পর্ক ও সংস্কৃতির ক্ষতি করে এবং ঝগড়া বা বিভেদ বাড়িয়ে তোলে।
কীভাবে এই অভ্যাস থেকে বের হওয়া যায়?
- যার সম্পর্কে গসিপ করেছেন, তাকে সরাসরি দুঃখ প্রকাশ করুন
- নিজের কর্মের দায় নিন
- তাকে বলুন আপনি কীভাবে সম্পর্কটা ঠিক করতে চান- শ্রদ্ধার সাথে কথা বলুন, শুনুন এবং সত্যিকারের অনুশোচনা প্রকাশ করুন
আরও পড়ুন: ড্রাগন ফলে ‘টনিক’ চেনার উপায় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি জানুন
আরও পড়ুন: দৈনন্দিন যে ৫ ভুলে নীরবে বেড়ে যাচ্ছে টাকের ঝুঁকি
পরচর্চা মানুষের স্বাভাবিক সামাজিক আচরণ হলেও, এটা ভালো বা খারাপ— নির্ভর করে আপনি কীভাবে এবং কী উদ্দেশ্য করছেন তার ওপর। যদি আমরা সচেতন হই, সহানুভূতিশীল হই এবং দায়িত্বশীলভাবে আচরণ করি, তাহলে আমরা একে গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করতে পারি, অপবাদ বা ক্ষতির মাধ্যম নয়।
সূত্র : মিডিয়াম
মন্তব্য করুন