কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৬ পিএম
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মালয়েশিয়ায় আরও জনশক্তি পাঠাতে সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বঙ্গভবনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাক্ষাৎ। ছবি : সংগৃহীত
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বঙ্গভবনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাক্ষাৎ। ছবি : সংগৃহীত

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে যাতে আরও দক্ষ ও আধা দক্ষ জনশক্তি যেতে পারে সে ব্যাপারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সহযোগিতা চেয়েছেন।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে বঙ্গভবনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এই সহযোগিতা চাওয়া হয়।

রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা জানানো হয়েছে।

এর আগে বঙ্গভবনে পৌঁছালে মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি।

মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, তার এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামীতে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। সাক্ষাৎকালে তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষ করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য-বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, শ্রমবাজার এবং রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে মালয়েশিয়ায় সহযোগিতা চান।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বিগত ৫৩ বছরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, মানব সম্পদ যোগাযোগ, সংস্কৃতি, পর্যটন ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে রয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু এরপরও দেশটির শ্রমবাজার নিয়ে বাংলাদেশের কর্মীদের এক ধরনের অনিশ্চয়তা বরাবরই ছিল। এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা টানাপোড়েনও সামনে এসেছে। গত দেড় দশকে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় বন্ধ ছিল সেখানকার বাংলাদেশের শ্রমবাজার।

এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার প্রথম দফায় বন্ধ হয় ২০০৯ সালে। আর সবশেষ গত ১ জুন শেষ হয়ে যায় মালয়েশিয়ায় কর্মী ভিসায় যাওয়ার সময়। শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে চক্র বা সিন্ডিকেটের বিষয়গুলো আলোচনা এসেছে। এসব চক্রের বিরুদ্ধে উঠেছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুসের অভিযোগ জানা গেছে, গত চার মাস ধরে বাংলাদেশের মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু কর্মীদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ ৩১ মে দেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করা হয়। এতে বিএমইটি কার্ড ও ভিসা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ১৭ হাজার ৭৭৭ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে যেতে পারেননি। ৩১ মের পর যেতে না পারা এসব কর্মী ফের যাওয়ার চেষ্টা ও টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য এজেন্সিগুলোতে ধর্না দেন। টাকা খুইয়ে এসব কর্মীর অনেকে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার অপেক্ষায় রয়েছেন।

এরপর ২০২২ সালে মালয়েশিয়া সরকার আবার শ্রমবাজার খুলে দিলে নতুন করে চক্র গড়ে ওঠে। চলতি বছরের মার্চে মালয়েশিয়া সরকার জানায়, দেশটি আপাতত আর শ্রমিক নেবে না। যারা অনুমোদন ও ভিসা পেয়েছেন, তাদের ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে হবে। এভাবে দফায় দফায় শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় প্রবাসী আয়ের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

এ অবস্থায় শ্রমবাজারে আনোয়ার ইব্রাহিমের এই ঘোষণা খুবই ইতিবাচক মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ১৮ হাজার একটা বড় সংখ্যা। এতগুলো লোক যেতে না পারা আমাদের জন্য একটা বিরাট সমস্যা ছিল। এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হলে এটি সহমর্মিতার একটা ভালো দৃষ্টান্ত হবে। এই সমস্যাটির আশু সমাধান হলে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের জায়গাটা আরেকটু জোরদার হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. এম হুমায়ুন কবির কালবেলাকে বলেন, মালয়েশিয়া একটা সময়সীমা বেধে দেওয়ার কারণে এই লোকগুলো আটকে ছিলো। এখন যদি তারা যেতে পারে অন্ততপক্ষে সাময়িকভাবে সমস্যাটির সমাধান হবে। এটি বাস্তবায়ন হতে হয়তো কিছুদিন সময় লাগবে। তবে যেহেতু দুইদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটি আলোচনা হয়েছে, আশা করছি দ্রুতই ফলাফল পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, এই সরকার কয়েকদিন আগেই আরব আমিরাত থেকে ৫৭ জন বন্দিকে ফিরিয়ে এনেছে। আর মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের এই সমস্যাটির সমাধান হলে এটি সরকারের জন্যও একটা ইতিবাচক জায়গা তৈরি করবে। মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি আরেকটু সজীব হবে, শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি অনেকগুলো মানুষের জীবন একটা ইতিবাচক সমাধান পাবে।

এর আগে, দুপুর ২টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

তারও আগে, বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পর গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম খুব দ্রুত বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানাতে ফোন করে এ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান মিন্টু চিরনিদ্রায় শায়িত

ঢাকা-১৩ আসনে ধানের শীষের সমর্থনে যুবদলের গণমিছিল

নতুন জোটের ঘোষণা দিল এনসিপি

কড়াইল বস্তিতে আগুন, তারেক রহমানের সমবেদনা

কড়াইল বস্তিতে আগুনের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার উদ্বেগ ও সমবেদনা 

গণভোট অধ্যাদেশ জারি করে গেজেট প্রকাশ

জেসিআই ঢাকা ইউনাইটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন মাসউদ

কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

চীনা দূতাবাস কর্মকর্তার সঙ্গে চৌদ্দগ্রাম জামায়াত নেতাদের মতবিনিময়

নুরুদ্দিন আহম্মেদ অপুর সঙ্গে সেলফি তুলতে মুখিয়ে যুবসমাজ

১০

অগ্রণী ব্যাংকের লকারে শেখ হাসিনার ৮৩২ ভরি স্বর্ণ

১১

শুভর বুকে ঐশী, প্রেম নাকি সিনেমার প্রচারণা?

১২

৭০৮ সরকারি কলেজকে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ

১৩

ইউএস বাংলার সাময়িকীর কনটেন্ট তৈরি করবে অ্যানেক্স কমিউনিকেশনস

১৪

সাদিয়া আয়মানের সমুদ্র বিলাশ

১৫

পৌরসভার পরিত্যক্ত ভবনে মিলল নারীর মরদেহ 

১৬

কড়াইলের আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানাল ফায়ার সার্ভিস

১৭

প্রশাসনের ৭ কর্মকর্তার পদোন্নতি

১৮

যুক্তরাষ্ট্রে যোগাযোগ ও মিডিয়া কনফারেন্সে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা

১৯

এবার জুবিনের মৃত্যু নিয়ে উত্তাল বিধানসভা

২০
X